শেষের কবিতা pdf, Rabindranath Tagore’s Shesher Kobita PDF in Bangla 

শেষের কবিতা pdf

“আজি নব প্রভাতের শিখর চুড়ায়; রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায় আমার পুরানো নাম। ফিরিবার পথ নাহি; দূর হতে যদি দেখ চাহি পারিবে না চিনিতে আমায়।”

কবিগুরুর রচিত “শেষের কবিতা”- র এই পংক্তিগুলো হয়ে সকলেই একবার হলেও পড়ে থাকবেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত অন্যতম জনপ্রিয় একটি উপন্যাস হল ‘শেষের কবিতা’। শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ দুজন মানব-মানবীর প্রেমের কাহিনি পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছিলেন এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে, তাও কোনো সরলরৈখিক প্রেম নয়, ত্রিকোণ প্রেমও নয় বরং এ প্রেম চতর্ভুজাকৃতির। রবীন্দ্রনাথের চিত্রসৃষ্টি পর্যায়ের দ্বিতীয় উপন্যাস হল শেষের কবিতা (প্রথমটি যোগাযোগ) এটি। 

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির কবে প্রকাশিত হয় ? When was Shesher Kobita novel published?

১৯২৭ সাল থেকে ১৯২৮ সাল অর্থাৎ ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাস থেকে চৈত্র মাস অবধি প্রবাসীতে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বকবির এই রচনাটি প্রকাশিত হয়।

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির কবে প্রকাশিত হয়

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির পটভূমি, Background of Shesher Kobita novel

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটি মূলত বিংশ শতকের বাংলার নবশিক্ষিত অভিজাত সমাজের জীবনকথা। এই উপন্যাস রচনার কাছাকাছি সময়ে এক নবতর চেতনার অদ্ভুত আবিষ্কার হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্যক্তি মানুষের মূল্যচেতনার উপাদান যদি অন্তর থেকে শুধুই বেরিয়ে আসতে থাকে – যার সমুন্নতি ও দীপ্তি বিদ্যার বৃহৎ পরিমার্জনায়, তারও একটা চরিত্র আছে। বাস্তব চেনা জানার চলা বাহ্যিক অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে তা একেবারে অন্তর অভিমুখী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের অঙ্কিত এই পর্বের দু-একটি মুখাবয়বে কল্পনার প্রাধান্য লক্ষণীয়।

কিন্তু অনেকেই একে কবিতার বই ভেবে ভুল করে। তবে এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম রোমান্টিক উপন্যাস। এ উপন্যাসে প্রেম আছে, বিরহ আছে, বিচ্ছেদ আছে, কাব্যিক ছন্দময়তা আছে, হাস্যরসও আছে।

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির পটভূমি

‘শেষের কবিতা’ কি ধরনের উপন্যাস, What type of novel is Shesher Kobita?

লেখা ও প্রকাশের দিক থেকে দেখতে গেলে ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটি ছিল কবিগুরুর রচিত দশম উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি লিখেছিলেন ১৯২৮ সালে ব্যাঙ্গালোরে, স্বাস্থ্য উদ্ধারের প্রয়াসে সেখানে থাকবার সময়ে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘শেষের কবিতা’ ভাদ্র থেকে চৈত্র পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী’তে।

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির বিষয় বস্তু, subject matter of the novel Shesher Kobita

রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটিকে বলা হয় ‘চরম কাব্যোপন্যাস’। প্রথাবদ্ধ যান্ত্রিক জীবনের মাঝে এক বিচিত্র ছন্দোময় তথা চমকপ্রদ প্রণয়লীলা কাব্যমণ্ডিত ভাষায় যেভাবে রবীন্দ্রনাথ বিদ্যুতের গগনবিস্তারী আকস্মিক সৌন্দর্যের মতাে তুলে ধরেছেন তার তুলনা হয়তো বাংলা সাহিত্যে বিরল।

এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অমিত ও লাবণ্য। একদিকে অমিত রায়ের উচ্চমার্গীয় সমাজের নাকউঁচু লোকের সভা, অপরদিকে স্বমহিমায় বিরাজিত শিলং পাহাড়ের প্রকৃতিকন্যা লাবণ্য। বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত এবং রোমান্টিক মনোভাব সম্পন্ন যুবক।

তর্কে প্রতিপক্ষকে হারাতে সে একেবারে সিদ্ধহস্ত। অমিত একবার শিলং পাহাড়ে বেড়াতে যায়, সেখানেই এক মোটর-দুর্ঘটনায় তার পরিচয় হয় লাবণ্যর সাথে। যার পরিণতিতে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। কিন্তু অচিরেই বাস্তববাদী লাবণ্য অনুভব করতে পারল যে অমিত একেবারে রোমান্টিক জগতের মানুষ যার সঙ্গে প্রতিদিনের সাংসারিক হিসেব-নিকেশ হয়তো সঠিকভাবে চলবে না।

ইতিমধ্যে শিলং এ হাজির হয় কেটি (কেতকী)। হাতে অমিতের দেওয়া আংটি দেখিয়ে তাকে নিজের বলে দাবী করে সে। ভেঙে যায় লাবণ্য-অমিতর বিবাহ-আয়োজন। কেতকী ও শোভনলালের আগমন এবং এদের ভূমিকা অমিত ও লাবণ্য দুজনের জীবনেই যেন দ্বিতীয় হয়ে রয়ে যায়। লেখক দিঘির জল ও ঘড়ার জলের উপমা দিয়ে দুটোরই প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছেন।

কিন্তু তারপরও যেন ঘড়ার সংকীর্ণ গণ্ডিকে দিঘির প্রসারতার কাছে খুব কম বলে মনে হয়। উপন্যাসের সবচেয়ে শক্তিশালী দিকটি হচ্ছে চরিত্রগুলোর কথোপকথন। যোগমায়ার সাথে অমিতের একের পর এক কথোপকথনে প্রকাশ পায় লাবণ্যের প্রতি অমিতের অনুভূতি এবং যোগমায়ার সাথে পরবর্তীতে লাবণ্যের কথোপকথনেও সেই একই ব্যাপার ঘটে।

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির বিষয় বস্তু

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসে উচ্চাঙ্গের কল্পনাশক্তির প্রাচুর্যের সমৃদ্ধি বড়াে বিস্ময়কর। জীবনে প্রেমের প্রথম আবির্ভাব ঘটলে যে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়, ঠিক যেন নবনব কল্পনা জালে মনপ্রাণ ভরে ওঠে, আর কবিত্বে ভর করে জীবন এগিয়ে চলতে থাকে, শেষের কবিতা তারই ধ্বজাধারী। অমিত লাবণ্যের ভিতর দিয়ে প্রেমের অসীমতার মানস সন্ধান পেয়ে তারই প্রেমকে সীমাবদ্ধ, প্রাত্যহিক ভালােবাসার সংকীর্ণতা সন্তুষ্টচিত্তে স্বীকার করে নিয়েছে।

নূতন প্রেমের আলােকেই লাবণ্য তার আসল প্রণয়ীকে চিনে নিয়েছে, শােভনলালের কাছে সে যে নিজেকে সঁপে দিয়েছে তা অমিতের কাছ থেকে প্রেরণা স্বরূপ পাওয়া। মূলত লাবণ্য ‘স্বভাব দরিদ্র’ অমিতের প্রেমের প্লাবনেই তার দারিদ্র্য ঘুঁচে গিয়ে সে ঐশ্বর্যশালিনী হয়েছে। সে অমিতকে যা দিয়েছিল, অমিতেরই- “তোমারে যা দিয়েছিনু সে তােমারই দান।

অমিত যত গ্রহণ করেছে লাবণ্য ততই ঋণী হয়েছে। তাইতাে শােভনলালের কাছে লাবণ্যকে চলে যেতে দেখে অমিতের শেষ স্বীকারােক্তি- “কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালােবাসারই, কিন্তু ঘড়ায় তােলা জল, প্রতিদিন তুলবাে, প্রতিদিন ব্যবহার করবাে। আর লাবণ্যের সঙ্গে আমার যে ভালােবাসা সে রইল দীঘি, সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।” প্রেম সম্পর্কে অমিতের এক চমৎকার অভিব্যক্তি।

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের প্রতিটি শব্দ যেন কবিতার মতাে অসীমের বাণীরূপ। উপন্যাসের শেষে লাবণ্যকে বলা অমিতের এই কথাগুলাে বড়াে চমক সৃষ্টি করে- “একদিন আমার সমস্ত ডানা মেলে পেয়েছিলুম আমার ওড়ার আকাশ, আজ আমি পেয়েছি আমার ছােট্ট বাসা, ডানা গুটিয়ে বসেছি, কিন্তু আমার আকাশও রইল…ভালােবাসার সত্যকে আমি একই শক্তিতে জলেস্থলে উপলব্ধি করবাে ; আবার আকাশেও। নদীর তীরে রইল আমার পাকা দখল ; আবার মানসের দিকে যখন যাত্রা করবাে, সেটা হবে আকাশের ফাঁকা রাস্তা।”

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির চরিত্র সমূহ, Characters of the novel Sesher Kobita

‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটির বিভিন্ন চরিত্র সম্পর্কে উল্লেখ করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় অমিত রায়ের কথা। অমিত রায় উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। অমিতের মধ্যে প্রবল প্রগল্ভতা রয়েছে, যা তার ছদ্মবেশ। সে কবি বা আর্টিস্ট কোনটাই নয়, আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্যেই তাকে এই মুখোশ পরতে হয়।

উপলব্ধি করলে বুঝতে পারা যায় যে, ‘রবিবার’ গল্পের অভীক এবং ‘প্রগতি সংহার’ গল্পের নীহারের সঙ্গে অমিতর স্বভাবের একটা মিল আছে। তারপর লাবণ্যের চরিত্রের কথা বলতে গেলে, জ্ঞানতাপস্বী অধ্যাপক অবনীশ দত্তের কন্যা লাবণ্য সম্পর্কে লেখক বলেছেন— “মাতৃহীন মেয়েকে এমন করে মানুষ করেছেন যে, বহু পরীক্ষা পাশের ঘষাঘষিতেও তার বিদ্যাবুদ্ধিতে লােকসান ঘটাতে পারেনি। এমনকি এখনও তার পাঠানুরাগ প্রবল।”এরপর উল্লেখ করা যায় কেটি বা কেতকীর কথা, যে অমিতের সহচর।

এই চরিত্রটি শহুরে আড়ষ্ট কৃত্রিমতা নিয়ে একেবারে ভিন্ন জাতের। তাঁর মুখের মধ্যে একটা শ্রেণীজ্ঞাপক মুখোশের লক্ষণ বর্তমান। এই দুই চরিত্র ছাড়াও উপন্যাসে অবনীশ দত্ত, লাবণ্য, শোভনলাল, যতিশঙ্কর চরিত্রে যথার্থ আভিজাত্যের পরিচয় পাওয়া যায়, যা সম্পূর্ণ হয়েছে বিদ্যাপরিমার্জিত অন্তর্জিজ্ঞাসু প্রবণতায়। তবে শুধু যোগমায়া চরিত্রটি এদের দুই শ্রেণীর থেকে একেবারে আলাদা, সে ঊনিশ শতকীয় জীবন ঐতিহ্যের নিশ্চিত দিশারী।

পরিশেষে, Conclusion 

‘শেষের কবিতা ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রোমান্টিক কাব্য উপন্যাস । এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু পুরুষ ও নারীর অবিরোধে একসঙ্গে দুজনকে ভালোবাসা। এ উপন্যাসে অমিত – লাবণ্য, কেতকী – শোভনলাল চরিত্রের মাধ্যমে প্রেমের বিচিত্র বিকাশ দেখানো হয়েছে। শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথের কথাসাহিত্যে কিছু নতুনত্ব দেখা যায়। তাঁর এই নতুনত্বের আরেক প্রান্ত হল ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাস।

‘শেষের কবিতা 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রোমান্টিক কাব্য উপন্যাস

শেষের কবিতার ভাষাশৈলীও নিঃসন্দেহে অপূর্ব। ঠিক যেন এক শব্দের পর আরেক শব্দ শোনার অপেক্ষা। গদ্যসাহিত্যের মধ্যেও যে এইরূপ মধুর ছন্দময়তা থাকতে পারে, তা শেষের কবিতার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts