সিরাজগঞ্জ জেলার ইতিহাস ও বিস্তারিত তথ্য, History and all details about Sirajganj district in Bengali

সিরাজগঞ্জ জেলার ইতিহাস ও বিস্তারিত তথ্য

মধ্য বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ এবং উত্তরবঙ্গ’র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর হল সিরাজগঞ্জ। এটি বাংলাদেশের ১২ তম বৃহৎ শহর। এই শহরটি বাংলাদেশে বয়ে যাওয়া অন্যতম নদী যমুনার পশ্চিম তীরে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকার প্রায় ১১০ কিলোমিটার (৭০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে এই শহরের অবস্থান। 

আয়তন ও ভৌগলিক অবস্থান, Area and geographical location

সিরাজগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, রাজশাহী থেকে উত্তর-পূর্বে এবং বগুড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্বে এর অবস্থান। জেলাটি ২৪º২২΄ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৪º৩৭΄ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং ৮৯º৩৬΄ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯º৪৭΄ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এই জেলার মোট আয়তন ৩১.২৭ বর্গকিলোমিটার। সিরাজগঞ্জ শহর একই সাথে সিরাজগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলার প্রশাসনিক সদরদপ্তর। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জ শহরের দুরত্ব ৮ কিলোমিটার। সিরাজগঞ্জ জেলাকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, রাজশাহী থেকে উত্তর-পূর্বে এবং বগুড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্বে এর অবস্থান।

সিরাজগঞ্জ জেলার নামকরণ, Naming of sirajganj district

বাংলাদেশে বেলকুচি থানার অন্তর্গত এলাকায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক একজন জমিদার ছিলেন। নিজ মহালে তিনি একটি গঞ্জ স্থাপন করেন। জমিদারের নামানুসারে গঞ্জের নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। কিন্তু পরবর্তীতে যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্রমে তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়ে ক্রমশঃ উত্তর দিকে সরে আসে।

এরপর জমিদার সিরাজউদ্দিন চৌধুরী ১৮০৯ সালে খয়রাতি মহল রূপে জমিদারি সেরেস্তায় লিখিত ভূতের দিয়ার মৌজা নিলামে ক্রয় করে নেন। উক্ত স্থানটিকে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান স্থান হিসেবে বিশেষ সহায়ক মনে করেন। তিনি এই ভূতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে সিরাজগঞ্জ নামে নামকরণ করেন, যা সিরাজগঞ্জ নামে স্থায়ী রূপ লাভ করে।

সিরাজগঞ্জ জেলার নামকরণ

সিরাজগঞ্জের প্রশাসনিক এলাকা সমূহ, Administrative areas of Sirajganj

পাকিস্তান আমলের মহকুমা সিরাজগঞ্জকে ১৯৮৪ সালের ১লা এপ্রিল জেলায় উন্নীত করা হয়। সিরাজগঞ্জ জেলা ৯টি উপজেলায় বিভক্ত। উক্ত উপজেলাগুলি হল:

  • বেলকুচি উপজেলা
  • কামারখন্দ উপজেলা
  • চৌহালি উপজেলা
  • কাজীপুর উপজেলা
  • রায়গঞ্জ উপজেলা
  • শাহজাদপুর উপজেলা
  • সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা
  • তাড়াশ উপজেলা
  • উল্লাপাড়া উপজেলা

উক্ত উপজেলাগুলিতে একটি করে থানা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জের প্রশাসনিক এলাকা সমূহ

সিরাজগঞ্জ জেলায় কয়টি নদী আছে? How many rivers are there in Sirajganj district?

সিরাজগঞ্জ জেলার জলাশয় ও প্রধান নদীগুলো হল : যমুনা, ইছামতি, কাজীপুর নদী, কালুদাহা নদী, গোহালা নদী, পুরনো ধলেশ্বরী নদী, বাঙালি নদী, বান্নী নদী, বেসানী নদী, বৈরান নদী, ভাদাই নদী, মানস নদী, হুরাসাগর নদী; এছাড়াও জলাশয়ের ক্ষেত্রে বড়াল, হুরাসাগর; চলন বিল উল্লেখযোগ্য।

সিরাজগঞ্জের জনসংখ্যা, population of Sirajganj district

২০২১ সালে বাংলাদেশের আদমশুমারী অনুযায়ী সিরাজগঞ্জ শহরের মোট জনসংখ্যা ছিল ৪,৫০,০০০ জন। শহরটির জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৪,০০০ জন। এখানে যে পরিমাণ মানুষ বসবাস করে, তার মধ্যে নারী পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত করলে ১০০ঃ১০২ হয় এবং এই অঞ্চলে শিক্ষার হার ৯৮.২%।

সিরাজগঞ্জের জনসংখ্যা

সিরাজগঞ্জ এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ, Educational institutions of Sirajganj

বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ শহরে দুটি মেডিকেল স্কুল রয়েছে, যাদের নাম হল পাবলিক শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ এবং বেসরকারি নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। 

এছাড়াও এই নগরীতে আটটি কলেজ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল : সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ, ইসলামিয়া সরকারি কলেজ, এবং সরকারি রশিদাজ্জোহা মহিলা কলেজ। অন্যদিকে বি.এল. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জ্ঞানদায়িনী উচ্চ বিদ্যালয়, সালেহা ইসহাক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এখানকার উল্লেখযোগ্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়।

সিরাজগঞ্জের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর নাম, Names of important places in Sirajganj

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন আর প্রাচীন সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এখানে অনেক প্রাচীন মন্দির, মসজিদ এবং স্থাপত্য রয়েছে। এছাড়াও, সিরাজগঞ্জ জেলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি যেমন, লোকজ উৎসব অনন্য। সিরাজগঞ্জে ভ্রমণের জন্য বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান রয়েছে, সেগুলি হল :

  • যমুনা সেতু
  • ইলিয়ট সেতু
  • সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্ট
  • চায়না ব্যারাজ
  • দুর্জয় বাংলা ভাস্কর্য
  • মুক্তির সংগ্রাম ভাস্কর্য
  • মুজিব দর্শন ভাস্কর্য
  • বাহিরগোলা রেল সেতু
  • শাহ সুফি আফজাল মাহমুদের সমাধি
  • জমিদার বাড়ি
  • জামে মসজিদ
  • শ্রী শ্রী মহাপ্রভু আখড়া
  • যুগল কিশোর মন্দির
  • কালীবাড়ি মন্দির
  • পুরাতন খ্রিস্টান কবরস্থান
  • মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এর বাড়ি
  • যাদব চন্দ্র চক্রবর্তী এর বাড়ি
  • সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী এর বাড়ি
  • হৈমন্তী শুক্লা এর বাড়ি
  • বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাড়,
  • রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি,
  • আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ,বেলকুচি
  • এনায়েতপুরী পীর সাহেবের মাজার এবং মসজিদ,
  • নিমগাছি জয়সাগর,রায়গঞ্জ
  • ছাগলা পাগলার দহ, কামারখন্দ উপজেলা
  • চলন বিল,তাড়াশ
  • শিব মন্দির
  • নবরত্ন মন্দির, সলংগা
  • বেহুলার কুপ,তাড়াশ
  • ধুবিল কাটার মহল জমিদার বাড়ি,সলংগা
  • রাউতারা জমিদার বাড়ি
  • সান্যাল জমিদার বাড়ি
  • আটঘড়িয়া জমিদার বাড়ি
  • শিশু রাসেল পার্ক
  • ইকোপার্ক
সিরাজগঞ্জের উল্লেখযোগ্য স্থান

সিরাজগঞ্জ জেলা কেন বিখ্যাত? Why Sirajganj district is famous?

সিরাজগঞ্জ হল একটি গুরুত্বপূর্ণ পাট সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বাণিজ্য কেন্দ্র যেখানে প্রধান শহরগুলির সাথে সড়ক, রেল এবং নদী সংযোগ রয়েছে । এর পাটকলগুলি বাংলা অঞ্চলে প্রথম স্থাপিত হয়েছিল। সিরাজগঞ্জ শহরকে একসময় কলকাতা ও নারায়ণগঞ্জের সমতুল্য পাট ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হতো। বর্তমানে এটি পাট ব্যবসার একটি প্রধান কেন্দ্র। অন্যদিকে তাঁতশিল্প এ জেলাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছে। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু এবং সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এ জেলাকে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি এনে দিয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?  Sirajganj municipality was established in which year?

সিরাজগঞ্জ পৌরসভা বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি নগরভিত্তিক স্থানীয় সরকার সংস্থা যেটি সিরাজগঞ্জ পৌরসভা পরিচালনা করে থাকে। ১৮৬৯ সালে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত খাবার সমূহ, Famous dishes of Sirajganj

বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জ জেলা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং সংস্কৃতি পর্যটকদের বরাবরই আকর্ষণ করে। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের খাবারও বেশ সুস্বাদু হয় এবং দেশব্যাপী সুপরিচিত। এই জেলার বিখ্যাত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে-

পানিতোয়া 

এটি সিরাজগঞ্জের সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার, যা মূলত মিষ্টি খাবার। এটি জল, চিনি, চালের গুঁড়া এবং তেল দিয়ে তৈরি করা হয়। পানিতোয়া দেখতে অনেকটা নরম রুটির মতো।

রসমালাই

 সিরাজগঞ্জের আরেকটি বিখ্যাত মিষ্টি হল রসমালাই, যা চালের গুঁড়া, দুধ, চিনি এবং এলাচ দিয়ে তৈরি করা হয়। রসমালাই দেখতে অনেকটা ক্ষীরের মতো। 

দুধ চিতই

দুধ চিতই সিরাজগঞ্জের একটি জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার হিসেবে পরিচিত। এই বিশেষ খাবার দুধ, চালের গুঁড়া এবং তেল দিয়ে তৈরি করা হয়। পানিতোয়ার মতোই দুধ চিতই-ও দেখতে কিছুটা নরম রুটির মতো। 

দুধ চিতই

চাল ভাজা

সিরাজগঞ্জের একটি জনপ্রিয় খাবার হল চাল ভাজা, যা সাধারণত সকালের খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এটি তৈরি করতে মূলত চাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন এবং মরিচ ব্যবহার করা হয়। 

মুড়কি

 মুড়কি সিরাজগঞ্জের একটি জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার। এটি তৈরি করা হয় মুড়ি, তেল, পেঁয়াজ, রসুন এবং মরিচ দিয়ে।

 সিরাজগঞ্জের উল্লেখ্য বিখ্যাত খাবারগুলিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও, সিরাজগঞ্জে অবস্থিত বিভিন্ন রেস্তোরাঁতেও এই খাবারগুলো পেয়ে যাবেন। 

সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান শিল্প, Major industry of Sirajganj district

কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জেলা হচ্ছে সিরাজগঞ্জ যেখানে প্রচুর পরিমাণে ধান, গম, আখ, আলু ও ভুট্টা জন্মে। সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান শিল্পসমূহের মধ্যে রয়েছে কৃষি, রেশম শিল্প, মাটির পাত্র শিল্প ইত্যাদি। এছাড়াও জেলাটির প্রধান রপ্তানি পণ্য হল ধান, গম, পাট, আলু, মাছ, গবাদি পশু, মৎস্য ও হাঁস-মুরগি ইত্যাদি।

সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান শিল্পসমূহের মধ্যে রয়েছে কৃষি, রেশম শিল্প, মাটির পাত্র শিল্প ইত্যাদি

শেষ কথা, Conclusion 

বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের দর্শনীয় স্থানগুলো দর্শকদের বিনোদনে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। পাশাপাশি বিখ্যাত খাবারগুলোও যেকোনো ব্যক্তির মনে প্রশান্তি বয়ে আনে। সিরাজগঞ্জ জেলার সংস্কৃতি যেমন সমৃদ্ধ, লোকজ উৎসবও তেমনি অনন্য। বাংলাদের এই বিশেষ অঞ্চলটি একবার হলেও ভ্রমণ করে দেখতে পারেন।

Contents show

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts