সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সম্পর্কে বিস্তারিত, Details about the Board of Directors of Sonali Bank in Bengali

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সম্পর্কে বিস্তারিত

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হল সোনালী ব্যাংক পিএলসি। ব্যাংকটি “বাংলাদেশ ব্যাংক (ন্যাশনালাইজেশন) অর্ডার ১৯৭২” অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়। উক্ত ব্যাংকের রয়েছে বিরাট সংখ্যক দক্ষ জনবল। এই জনবল নিয়ে ব্যাংক ব্যবসার উন্নয়ন এর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে গতিশীল করাও  তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

সোনালী ব্যাংক পিএলসি সম্পর্কে জরুরী তথ্য, Important Information about Sonali Bank PLC :

  • ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ৬০০০ কোটি টাকা।
  • পরিশোধিত মূলধন ৪১৩০ কোটি টাকা।
  • ব্যাংকটির সুইফট কোড BSONBDDH।
  • ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকায় অবস্থিত।
  • ব্যাংকটির বাণিজ্য অঞ্চল বাংলাদেশ ও বিদেশ
  • ব্যাংকটির চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম।
  • ব্যবস্থাপনা পরিচালক পণ্যসমূহ হল : রিটেইল ব্যাংকিং, কনজ্যুমার ব্যাংকিং, যৌথ ব্যাংকিং, বিনিয়োগ ব্যাংকিং, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা।
সোনালী ব্যাংক পিএলসি সম্পর্কে জরুরী তথ্য

সোনালী ব্যাংক সৃষ্টির ইতিহাস, History of Creation of Sonali Bank :

ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ব্যাংক অব বাহ্ওয়ালপুর এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক্স (ন্যাশনালাইজেশন) অর্ডার ১৯৭২, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ নম্বর ২৬, ১৯৭২ অনুসারে ‘সোনালী ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যাংকিং কর্মকান্ডকে আরো গতিশীল করার নিমিত্ত ০৩ জুন, ২০০৭ তারিখে “সোনালী ব্যাংক লিমিটেড” নামে যৌথ মূলধনী কোম্পানী ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তরে এই কোম্পানী নিবন্ধন হয়।

  • বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২০০৭ সালের ৫ জুন,  সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর অনুকূলে ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এরপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও সোনালী ব্যাংক পিএলসি-এর মধ্যে “ভেন্ডর এগ্রিমেন্ট” সম্পাদনপূর্বক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানী হিসেবে ২০০৭ সালের ১৫ নভেন্বর থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে।
  •   ব্যাংক ব্যবসার প্রসার ঘটানো তথা দেশের জনসাধারণকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে, সুদৃঢ় অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়াসে “সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড” নামে সাবসিডিয়ারী কোম্পানী গঠিত হয়। ২০০৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে মার্চেন্ট ব্যাংকিং এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়।
  •   ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বগুড়ায় ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। অন্যদিকে “সোনালী ফাউন্ডেশন” গঠন করার মাধ্যমে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি এর দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর শাখা, Branches of Sonali Bank Limited :

বর্তমানে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর শাখা ১২৩১ টি। দেশের অভ্যন্তরে ১২২৯টি শাখা রয়েছে এবং বিদেশে আছে ২টি শাখা। দেশের ১২২৯টি শাখার ৭৩০ টি গ্রামাঞ্চলে রয়েছে এবং অবশিষ্ট ৫০০টি রয়েছে শহরাঞ্চলে। উক্ত সকল শাখাগুলোর মধ্যে ৪৫টি অথরাইজড ডিলার বা এডি শাখার মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিদেশে ২টি শাখা রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য; একটি কলকাতায় এবং শিলিগুড়িতে ১টি।

সোনালী ব্যাংকের প্রশাসনিক তথা ব্যবসায়িক কার্য সম্পাদন, Performing administrative and commercial functions:

সোনালী ব্যাংকের প্রশাসনিক তথা ব্যবসায়িক কার্য সমূহ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার নিমিত্ত রয়েছে ১৫টি জেনারেল ম্যানেজার’স অফিস। এছাড়াও আছে ৬৬টি প্রিন্সিপাল অফিস ও ১৬টি আঞ্চলিক কার্যালয়। অন্যদিকে প্রধান কার্যালয়ের ৪৭টি বিভাগ রয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সোনালী ব্যাংকে আনুমানিক ২.৪৭ কোটি বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকের হিসাব রয়েছে।

   ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে দক্ষতা আনার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। নব নিযুক্ত কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করার জন্য ঢাকায় “সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজ” সহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া ও ময়মনসিংহে ১টি করে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে।

বর্তমানে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-এ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা মোট ১৮,১৬৭ জন। এর মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যা ১৭,৪০৬ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা ১৪০০ জন।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং অঙ্গনে সোনালী ব্যাংক, Sonali Bank in International Banking Arena :

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং অঙ্গনে সোনালী ব্যাংক

১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং অঙ্গনে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি পূর্ণাঙ্গ সাবসিডিয়ারী কোম্পানী ‘সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানী ইনকর্পোরেটেড (SECI)’ নামে স্থাপন করা হয়। ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে উক্ত এক্সচেঞ্জ কোম্পানীর ৯টি শাখা রয়েছে।

২০০১ সাল থেকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যৌথ মালিকানায় যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিঃ এর কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে এর ৬টি শাখা রয়েছে। এছাড়াও সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা এবং কুয়েত এ ব্যাংকের নিজস্ব প্রতিনিধি অফিস রয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের রেমিট্যান্স ব্যবসা রয়েছে মধ্য প্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের ৫৫টি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজের সাথে। ব্যাংকের ৪৫টি অনুমোদিত শাখা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬১৭টি বৈদেশিক করেসপন্ডেন্টস এর মাধ্যমে ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার ‘মে ব্যাংক’ ও IME(M) SDN, BHD’-এর মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সহযোগিতায় সেখানে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থ খুব সহজে দেশে পৌঁছে যাচ্ছে। কোন শাখায় হিসাব নম্বর না থাকা সত্বেও WESTERN UNION, IME, TRANSFAST, EXPRESS MONEY এর রেমিট্যান্স SPOT CASH, CASH OVERT THE COUNTER পদ্ধতিতে এবং অন্যান্য ব্যাংক / EXCHANGE HOUSE-এর রেমিট্যান্সের টাকা পরিশোধ করা হয়।

সোনালী ব্যাংক ব্যাংক প্রদত্ত ঋণ, Bank loan :

জনসাধারণকে সঞ্চয়ে উৎসাহ দিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের আমানত প্রোডাক্ট প্রবর্তন করা হয়েছে। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করার লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্প প্রকল্প ঋণ, আমদানী- রফতানী ঋণ, কৃষিঋণ, ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ, এসএমই ঋণ, ভোগ্যপণ্য ঋণসহ বিভিন্ন ঋণ স্কীমের মধ্য দিয়ে শহর তথা গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

সরকারি ট্রেজারী কার্যক্রম, Government Treasury Activities :

সরকারি ট্রেজারী কার্যক্রম

সোনালী ব্যাংক জনসাধারণের দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি যেসকল স্থানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো শাখা নেই, সেসব স্থানে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি ট্রেজারী কার্যক্রম পরিচালনা করে।

সোনালী ব্যাংকের অবসরভাতা প্রদান, Payment of Retirement Allowance :

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সরকারি-বেসরকারি সকল প্রকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও অবসরভাতা প্রদান করা; সরকারী ও বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনভাতা প্রদান, ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি, সামাজিক নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন ভাতা, সরকারি সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয়, সরকারি খাদ্যশস্য ক্রয় বিল পরিশোধ করা, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের বিল গ্রহণ করা, সরকারি রাজস্ব আদায় কার্যক্রম পরিচালনা, হজ্জ্ব ও জাকাত ফান্ডের অর্থ গ্রহণসহ আরো বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের (CSR) মাধ্যমে দেশের আপামর জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করছে।

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পদ্ধতি, Bank Management Procedures :

সোনালী ব্যাংক ৮ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ ও একটি দক্ষ পরিচালনা কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। উক্ত পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী। অন্যদিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মো. আফজাল করিম।

সোনালী ব্যাংকের নাম পরিবর্তন, Changes in the Bank Name :

১৯৭২ সালে ব্যাংকটি “সোনালী ব্যাংক” নামে যাত্রা শুরু করে। ২০০৭ সালের ০৩ জুন, এর নাম পরিবর্তন করে “সোনালী ব্যাংক লিমিটেড” নামে নিবন্ধন নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কোম্পানি আইন অনুযায়ী এ ব্যাংকের নাম পুনরায় পরিবর্তন করা হয়, নতুন নাম রাখা হয় “সোনালী ব্যাংক পিএলসি”।

সোনালী ব্যাংকের ই-সেবা, Sonali Bank e-services :

সোনালী ব্যাংকের ই-সেবা

সোনালী ব্যাংক ২০২০ সালের ৩ জুন থেকে ‘সোনালী ই-সেবা’ নামে স্মার্টফোনভিত্তিক একটি অ্যাপ চালু করেছিল। এই অ্যাপ ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে গ্রাহকদের আর ব্যাংকে যেতে হবে না। অ্যাপস থেকেই অ্যাকাউন্ট খোলা ও চালু করা যাবে। ছবি এবং ব্যক্তিগত তথ্যের বিবরণী অ্যাপটিতে দিলেই জাতীয় পরিচয় পত্র সার্ভার থেকে সেগুলো যাচাই করে নেওয়া যাবে।

অনিয়ম ও সমালোচনা, Irregularities and Criticism :

২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ছিল সে বছরের অন্যতম আলোচিত বিষয়। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভির মাহমুদ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।

একই শাখা থেকে আরও ২৬টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ভুয়া এলসি করে অস্তিত্বহীন ৪০টি কোম্পানি হাতিয়ে নেয় ১ হাজার কোটি টাকা।

এই জালিয়াতির সহযোগী ছিলেন রূপসী বাংলা শাখার জিএম একেএম আজিজুর রহমান। এই জালিয়াতিতে প্রভাবক হিসেবে সরকারের এক উপদেষ্টার নামও আসে। তদন্তে আরো জালিয়াতি ধরা পড়ে।

সংসদীয় তদন্ত কমিটির মতে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) শাখার জিএম একেএম আজিজুর রহমান ছাড়াও জালিয়াতির ঘটনায় সংঘটিত চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে উপ-শাখা ব্যবস্থাপক সাইফুল হাসান, সাবেক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান, প্রিন্সিপাল অফিসের দায়িত্বে থাকা জিএম ননী গোপাল নাথ, জিএম অফিসের দায়িত্বে থাকা মীর মহিদুর রহমান এবং প্রধান কার্যালয়ের ডিএমডি মাইনুল হক ও আতিকুর রহমানকে দায়ী করা হয়েছে।

শেষ কথা, Conclusion :

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সর্বক্ষেত্রে আত্মনিবেদিত হয়ে কাজ করে আসছে। এই ব্যাংকের পরিচালকগণ ক্রমশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যায় যে জনস্বার্থে উক্ত ব্যাংক ভবিষ্যতে আরও ভালো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

Contents show

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts