বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কক্সবাজার অঞ্চল। এই জেলা নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্যে বিখ্যাত। চট্রগ্রাম থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৫২ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে এই অঞ্চল ৪১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এইখানে আছে বহু দর্শণীয় স্থান ও স্থাপনা, যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।
আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কক্সবাজার জেলায় দর্শনীয় স্থানসমূহ ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানসমূহ, Spectacular places in Cox’s Bazar :
বৈচিত্রময় কক্সবাজার জেলার জনপ্রিয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাবনী বীচ, সুগন্ধা বীচ, কলাতলি বীচ, হিমছড়ি, ইনানী বীচ, মেরিন রোড, সেন্টমার্টিন, রামু বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ ইত্যাদি।
কক্সবাজারের বিচ সমূহ, Beaches of Cox’s Bazar :
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত :
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতগুলির মধ্যে একটি। এটি ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি সাদা বালু দিয়ে তৈরি এবং এটি অত্যন্ত স্বচ্ছ। এটি সাঁতার, সূর্যস্নান, জল ক্রীড়া এবং অন্যান্য জল-সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।
লাবনী পয়েন্ট :
সমুদ্র দেখতে বাঙালি মাত্রই ছুটে যান কক্সবাজারের এই সি-বিচে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারগামী বাসে করে কলাতলী সি-বিচ রোডে নেমে রিকশা অথবা পায়ে হাঁটা পথে যেতে পারবেন এই বিচে।
কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবণী বিচকে কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলে বিবেচনা করা হয়।
ইনানী বীচ পয়েন্ট :
ইনানী বিচ কক্সবাজারের একটি মনোরম সমুদ্র সৈকতে যা কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এই বিচের প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি, সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য এবং শান্ত পরিবেশ আপনাকে আকর্ষণ করবে।
শামলাপুর সমুদ্র সৈকত :
শামলাপুর সমুদ্র সৈকত দেখতে হলে টেকনাফের কাছে বাহারছড়া ইউনিয়নে যেতে হবে। সবুজ ঝাউবন, মাছ ধরার নৌকা এবং জেলেদের ব্যস্ততা ইত্যাদি এই বিচের আকর্ষণ।
কুতুবদিয়া দ্বীপ :
কুতুবদিয়া কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি দ্বীপ উপজেলা। নানান রকম বৈচিত্র্য পরিপূর্ণ এই দ্বীপ। এর আয়তন প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার।
সেন্টমার্টিন :
সেন্টমার্টিন দ্বীপ হল বাংলাদেশের দর্শনীয় সেরা জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। এই দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এখানে রয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছের সমারোহ, সাদা বালি সৈকত ইত্যাদি যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
সোনাদিয়া দ্বীপ বিচ :
সোনাদিয়া দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার অন্য একটি জনপ্রিয় দ্বীপ। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই দ্বীপ বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডার।
সোনাদিয়া দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় অবস্থিত। এই দ্বীপের বিশেষ আকর্ষণ হলো সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময়টা।
পাটুয়ারটেক বিচ :
কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দর বিচটি হল পাটুয়ারটেক বিচ। পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের একটি অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দৃশ্যসমূহ | এই সমুদ্র সৈকতটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়, যা প্রকৃতির অমূল্য রত্নের মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফগামী মেরিন ড্রাইভের মাঝপথে পড়বে উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকত। ইনানী সৈকতে কিছুটা সময় কাটিয়ে আর একটু যেতেই পাটুয়ারটেক সৈকত। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে এই বিচে পৌঁছে যাওয়া যায়।
কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্রসমূহ, Traditional tourist spots of Cox’s Bazar :
রামু রাবার বাগান :
কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী রামু রাবার বাগান। ১৯৬০-৬১ সালে রামুতে রাবার চাষাবাদ শুরু করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই রাবার বাগান আজ দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান।
বর্তমানে এই রাবার বাগানের বিস্তৃতি ২ হাজার ৬৮২ একর এবং এর মধ্যে ১ হাজার ১৩০ একর এলাকা থেকে লিকুইড বা কষ সংগ্রহ করা হয়। বাগানে উৎপাদনক্ষম প্রায় ৫৮ হাজার গাছ আছে। এই গাছগুলো থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপাদন করা হয়।
পাহাড় আর সমতলের অপূর্ব মিলনের দৃশ্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক রামু রাবার বাগান পরিদর্শন করতে আসেন, মুগ্ধ হন ভ্রমন পিপাসুরা।
নিভৃতে নিসর্গ পার্ক :
একসাথে নীল জলরাশি, সবুজ পাহাড় আর সাদা মেঘ মালার মিলনমেলায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চাইলে চলে যান নিভৃতে নিসর্গ পার্ক।
লামাপাড়া খিয়াং :
উনিশ শতকের শুরুর দিকে রামুর থু অং গিয়াও চৌধুরী লামাপাড়া খিয়াং নির্মাণ করেন। কক্সবাজার জেলার ফতেখারকুল ইউনিয়নে রামু চৌমুহনী বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বাকখালী নদীর তীরে লামাপাড়া খিয়াং অবস্থিত। কক্সবাজারে গিয়ে লোকাল যানবাহনে চড়ে এই স্পটে যেতে পারেন।
লামাপাড়া খিয়াং এ রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তি, যা মার্বেল পাথরের মঞ্চের উপর স্থাপন করা হয়েছে যা পিতল দিয়ে তৈরি। এই মূর্তির উচ্চতা প্রায় ১০ ফিট এবং প্রস্থের দিক থেকে ছয় ফিট।
মাথিনের কূপ :
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর কুল ঘেঁষে টেকনাফ থানা চত্ত্বরে মাথিনের কূপ অবস্থিত। এক পুলিশ কর্মকর্তা ও রাখাইন জমিদারকন্যা মাথিনের অসমাপ্ত প্রেমের সাক্ষী কূপটি।
মারমেইড বিচ রিসোর্ট :
একপাশে ঝাউবনে ঘেরা সমুদ্র সৈকত এবং অন্যপাশে পাহাড় বেষ্টিত পেঁচারদিয়া গ্রামের পেঁচার দ্বীপ স্থানটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মারমেইড বিচ রিসোর্ট হল কক্সবাজারের একটি জনপ্রিয় রিসোর্ট। এটি সমুদ্র সৈকতের পাশে অবস্থিত এবং রিসোর্ট থেকে সমুদ্রের চমৎকার দৃশ্য দেখায়।
আদিনাথ মন্দির :
আদিনাথ মন্দির বাংলাদেশের বিখ্যাত অন্যতম বিখ্যাত হিন্দু মন্দির। এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় শহর কক্সবাজার থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দির অবস্থিত।
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক :
ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক বা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কটি কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এটি হলো সরকার ঘোষিত এলাকা যেখানে বণ্যপ্রানীদেরকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিপালন করা হয়। প্রতি মঙ্গলবার পার্ক সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
মহেশখালী দ্বীপ :
মহেশখালী দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মহেশখালী দ্বীপটি তার সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।
১৮৫৪ সালে গড়ে ওঠা এই দ্বীপ পান, মাছ, শুটকি, চিংড়ি, লবণ ও মুক্তার উৎপাদনের কারণে সুনাম অর্জন করলেও এখানকার মূল আকর্ষণ মিষ্টি পান। ধারনা করা হয়, প্রায় ২০০ বছর পূর্বে বৌদ্ধ সেন মহেশ্বরের নাম অনুসারে এই স্থানটির নামকরণ হয় মহেশখালী।
হিমছড়ি :
হিমছড়ি কক্সবাজার জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিমছড়ি তার সুন্দর পাহাড় এবং সমুদ্রের জন্য বিখ্যাত।
হিমছড়ির একপাশে রয়েছে সুবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ের সারি। হিমছড়িতে একটি জলপ্রপাত রয়েছে যা এখানকার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।
দ্বীপের বাজার ও বার্মিজ বাজার :
দ্বীপের বাজারটি কক্সবাজার শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এটি কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। দ্বীপের বাজারটি তার সুস্বাদু খাবারের জন্য বিখ্যাত।
দ্বীপের বাজার এর মত বার্মিজ বাজারটি কক্সবাজার শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এটি কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। বার্মিজ বাজারটি সুস্বাদু বার্মিজ খাবারের জন্য বিখ্যাত।
শেষ কথা, Conclusion :
কক্সবাজারে দর্শনীয় স্থানের অভাব নাই। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আশা করি বুঝতে পারছেন যে কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এক অতীব জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এ জেলার সুন্দর সমুদ্র সৈকত, দ্বীপ এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
কক্সবাজার যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ঠিক তেমনি দর্শনীয় স্থানে ভরপুর। কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসে এখানে।
Frequently Asked Questions
কক্সবাজার থেকে মহেশখালী যেতে চাইলে কক্সবাজার শহর থেকে জেটিতে (৬ নং ঘাট) চলে আসুন । তারপর ইঞ্জিন বোট বা স্পিডবোট সহ স্থানীয় পরিবহন মহেশখালীতে নিয়ে যাবে । এতে আপনার খরচ হবে মাত্র 20 থেকে 70 টাকা।
■ কলাতলী বিচ।
■ লাবনী বিচ।
■ ইনানী বিচ।
■ হিমছড়ি বিচ।
■ সেন্ট মার্টিন বিচ।
■ সুগন্ধা বিচ।
■ শাহপরীর দ্বীপ বিচ।
■ সোনাদিয়া দ্বীপ বিচ।
দীর্ঘ প্রাকৃতিক বালুকাময় সৈকতের জন্য বিখ্যাত।