বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ জেলা হল টাঙ্গাইল জেলা। এটি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলাটি উপজেলার সংখ্যা অনুসারে বাংলাদেশের “এ” শ্রেণীভুক্ত একটি জেলা।
টাংগাইল জেলার আয়তন ও জনসংখ্যা, Area and Population of Tangail District :
টাঙ্গাইল আয়তনের ভিত্তিতে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ২য় সর্ববৃহৎ জেলা। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ জেলার মানুষের সাথে সারা দেশের মানুষের রয়েছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
- বাংলাদেশে টাঙ্গাইল জেলার স্থানাঙ্ক: ২৪°১৮′০″ উত্তর ৮৯°৫৫′১২″ পূর্ব।
- আয়তন : ৩,৪১৪.৩৫ বর্গকিমি (১,৩১৮.২৯ বর্গমাইল)
- জনসংখ্যা (২০১১) : ৪৪,৪৯,০৮৫ (বাংলাদেশে ৫ম)
১৯৬৯ সাল অবধি টাঙ্গাইল ছিল অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা। উক্ত সালে মহকুমাটিকে জেলায় উন্নীত করা হয়। টাঙ্গাইল জেলা একটি নদী বিধৌত কৃষিপ্রধান অঞ্চল।
এই জেলাটি যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। তাছাড়া এর মাঝ দিয়ে লৌহজং নদী প্রবহমান। ঢাকা থেকে এই জেলা প্রায় ৮৪ কি মি দূরে অবস্থিত।
জেলাটির উত্তরে আছে জামালপুর জেলা, দক্ষিণে ঢাকা জেলা ও মানিকগঞ্জ জেলা, পূর্বে আছে ময়মনসিংহ জেলা ও গাজীপুর জেলা, পশ্চিমে রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা।
টাঙ্গাইল জেলার নামকরণ, Naming of Tangail District :
১৮৬৬ সালের পূর্বে টাঙ্গাইল নামে কোনো স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। জেলার বর্তমান নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৮৭০ সালের ১৫ নভেম্বর, আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে মহকুমা সদর দপ্তর স্থানান্তরের সময় থেকে।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানের নামে ‘আইল’শব্দের আধিক্য আছে (যেমন- বাসাইল, ঘাটাইল, ইত্যাদি)। অনেকেই মনে করেন যে, টাঙ্গাইল জেলার অন্য স্থানগুলোর নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জেলাটির নাম ‘টাঙ্গাইল’ হয়েছে।
টং শব্দের ফরাসী অর্থ উঁচু। অন্যদিকে আইল হচ্ছে আবাদী জমির সীমানা সংলগ্ন অংশ। তবে টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে বহুজনশ্রুতি ও নানা মতামত রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় যে, হযরত শাহ জামাল (রাঃ) জাহাজ যোগে এদেশে আগমনের সময় মাদ্রাজ থেকে একদল জেলে সাথে নিয়ে এসেছিলেন। তাদের দলপতির নাম ছিল ‘টাংগা’। সেই জেলেরা লৌহজং নদীর তীরে বসবাস শুরু করে। তাই মনে করা হয় যে, জেলেদের দলপতির নামানুসারে স্থানের নাম হয় ‘টাঙ্গাইল’।
টাংগাইল জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা কোনটি? Which is the largest upazila of Tangail district?
টাঙ্গাইল জেলায় মোট উপজেলার সংখ্যা ১২ টি এবং মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১১৯ টি। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ঘাটাইল আয়তনে সবচেয়ে বড় (৪৫০.৭১ বর্গ কিলোমিটার) যা জেলার মোট আয়তনের ১৩.৩৫% এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
টাংগাইল জেলার উপজেলা/থানা কয়টি, সেগুলোর নাম কি? How many upazilas/ police stations are there in Tangail district, what are their names?
টাঙ্গাইল জেলা মোট ১২টি উপজেলা/থানা ।
- টাঙ্গাইল মডেল উপজেলা/থানা ।
- ০২। নাগরপুর উপজেলা/থানা ।
- ০৩। দেলদুয়ার উপজেলা/থানা ।
- ০৪। মির্জাপুর উপজেলা/থানা।
- ০৫। বাসাইল উপজেলা/থানা।
- ০৬। সখিপুর উপজেলা/থানা।
- ০৭। কালিহাতী উপজেলা/থানা।
- ০৮। ঘাটাইল উপজেলা/থানা ।
- ০৯। গোপালপুর উপজেলা/থানা।
- ১০। মধুপুর উপজেলা/থানা।
- ১১। কালিহাতী উপজেলা/থানা।
- ১২। ধনবাড়ী উপজেলা/থানা।
টাঙ্গাইলের বিখ্যাত খাবার কি? What is the famous food of Tangail?
চমচম হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ী নামক স্থানে উৎপন্ন একটি বিখ্যাত মিষ্টি যা বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান ছাড়াও সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশেই বিখ্যাত।
টাঙ্গাইল জেলার দর্শনীয় স্থান, Places to visit in Tangail District:
- মধুপুর জাতীয় উদ্যান, মধুপুর টাঙ্গাইল
- আতিয়া মসজিদ
- ২০১ গম্বুজ মসজিদ, গোপালপুর উপজেলা
- হামিদপুর পলাশতলীর ব্রিজ ও বর্ষাকালিন বিল, সখিপুর উপজেলা
- ফালুচাঁদ চীশতি-র মাজার- সখিপুর উপজেলা
- যমুনা বহুমুখী সেতু
- আদম কাশ্মিরী-এর মাজার
- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার
- পরীর দালান/হেমনগর জমিদার বাড়ি
- খামারপাড়া মসজিদ ও মাজার
- ঝড়কা
- সাগরদীঘি
- গুপ্ত বৃন্দাবন
- মহেড়া জমিদার বাড়ি
- তালিমঘর তক্তারচালা
- নিলাচল বেলতুলি,বহুরিয়া,সখিপুর
- কালমেঘা গড়
- পাকুটিয়া আশ্রম
- মগড়া নাম মন্দির
- পাকুল্লা মসজিদ
- আরুহা-শালিনাপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
- নাগরপুর চৌধুরীবাড়ী
- পুন্ডরীকাক্ষ হাসপাতাল
- উপেন্দ্র সরোবর
- গয়হাটার মঠ
- যমুনা নদীর পাড়
- তেবাড়িয়া জামে মসজিদ
- এলেঙ্গা রিসোর্ট
- এলেঙ্গা জমিদার বাড়ী
- কাদিমহামজানি মসজিদ
- ঐতিহ্যবাহী পোড়াবাড়ি
- করটিয়া সা’দত কলেজ
- করটিয়া জমিদার বাড়ি
- ধনবাড়ি নবাব বাড়ি
- ধনবাড়ী মসজিদ
- নথখোলা স্মৃতিসৌধ
- বাসুলিয়া
- রায়বাড়ী
- কোকিলা পাবর স্মৃতিসৌধ
- মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
- বনগ্রাম গনকবরস্বপ্ন বিলাস (চিড়িয়াখানা)
- তিনশত বিঘা চর
- ভারতেশ্বরী হোম তুল
- বায়তুল নূর জামে মসজিদ
- দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি
- নাগরপুর জমিদার বাড়ি
- এলাসিন ব্রিজডিসি লেক
- সন্তোষ জমিদার বাড়ি
- অলোয়া জমিদার বাড়ি
- ছয়আনী শিব মন্দির
- ধলাপাড়া চৌধুরী বাড়ি
- ধলাপাড়া মসজিদ।
টাঙ্গাইল জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব, Notable personalities of Tangail District :
- আবদুল হামিদ খান ভাসানীইব্রাহিম খাঁ, পিন্সিপাল
- আবু সাঈদ চৌধুরী, বাংলাদেশের বিচারপতি
- আবদুল লতিফ সিদ্দিকী
- শাজাহান সিরাজ
- শামসুল হক, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক
- আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
- প্রতুল চন্দ্র সরকার, জাদুকর
- ওয়াজেদ আলী খান পন্নী , জমিদার
- মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, হেযবুত তওহীদ এর প্রতিষ্ঠাতা
- রণদা প্রসাদ সাহাডক্টর আলীম আল রাজী, প্রখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ ও ভাষাবিদ।
- খন্দকার আসাদুজ্জামান খানআব্দুস সালাম পিন্টুমামুনুর রশিদ, নাট্য ব্যক্তিত্বনায়ক মান্না, অভিনেতা
- আফরান নিশো, অভিনেতা
- সুমন রেজা জাতীয় দলের ফুটবলার
- বেলাল খান, গায়ক
টাঙ্গাইল জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা, Education system of Tangail district :
টাঙ্গাইল জেলার শিক্ষার হার: ৭১.২১%
জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,
- টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ,
- সরকারি সা’দত কলেজ,
- বি এ এফ শাহীন কলেজ পাহাড়কাঞ্চনপুর,সখিপুর।
- সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ,
- পোড়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়
- আজিম মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, গোসাই যোয়াইর, টাঙ্গাইল, টাঙ্গাইল সদর।
- ধনবাড়ী সরকারি কলেজ,ধনবাড়ী
- আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ
- সরকারি ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউট
- ধনবাড়ী কলেজিয়েট মডেল স্কুল
- পাইস্কা উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- গাড়াখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- হাদিরা হাতেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- মুশুদ্দি আফাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- বানিয়াজান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- সাকিনা মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল,ধনবাড়ী
- পাইস্কা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- উখারিয়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- ধনবাড়ী আলিম মাদ্রাসা,ধনবাড়ী
- যদুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় ধনবাড়ী
- মমিনপুর আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- বরমপুর গণ উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- নরিল্যা উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- মমতাজ আলী উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- আমিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- কেন্দুয়া উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
- সয়া উচ্চ বিদ্যালয়,ধনবাড়ী
এছাড়াও আরো অনেক স্কুল কলেজ এই জেলার অন্তর্গত।
টাঙ্গাইল জেলার ভূপ্রকৃতি, Topography of Tangail District :
পাহাড়, বনভূমি, সমতলভূমি, চরাঞ্চল, সমুদ্রের মতো যমুনা, ধলেশ্বরী নদীসহ অজস্র নদী, খালবিল ও সবুজ ফসলের ক্ষেত নিয়ে টাঙ্গাইলের ভূপ্রকৃতি। তাছাড়া এখানকার আর্থিক জীবন কৃষি ভিত্তিক।
অন্যদিকে ভিন্ন ধর্মের মানুষের সুদীর্ঘকাল পাশাপাশি অবস্থান ও বসবাসের মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা পেয়েছে স্বকীয় সত্তা। টাঙ্গাইল জেলার যেমন আছে প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য, তেমনি আছে লোক সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য।
শেষ কথা, Conclusion :
টাঙ্গাইল জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলোর মাধ্যমে আপনারা টাঙ্গাইল জেলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
Frequently Asked Questions :
বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত।
১২ টি।
যমুনা।
চামচম।