ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রেল নেটওয়ার্কের অধিকারী। ৭০ হাজার কিলোমিটারের বেশি রেলপথ জুড়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। ১৮৫৩ সালে মুম্বইয়ের (তৎকালীন বরি বান্ডার) স্টেশন থেকে থানে পর্যন্ত প্রথম ট্রেন চলার পর ধাপে ধাপে বিস্তৃত হয়েছে ভারতীয় রেল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের চেহারা ও পরিকাঠামো বদলালেও, আজও একটি ট্রেন নিজের ঐতিহাসিক গৌরব নিয়েই ছুটে চলেছে হাওড়া থেকে—এই ট্রেনই কালকা মেল, যার আর এক নাম নেতাজি এক্সপ্রেস।
ঐতিহাসিক যাত্রার শুরু:
এই ট্রেনটি প্রথম ট্র্যাকে নামে ১৮৬৬ সালের ১লা জানুয়ারি। ব্রিটিশ আমলে শুরু হওয়া এই ট্রেন ছিল হাওড়া থেকে দিল্লিগামী। পরবর্তীতে এর গন্তব্য বাড়িয়ে দেওয়া হয় হরিয়ানার কালকা পর্যন্ত। সেই থেকে আজও হাওড়া-কালকা রুটে চলছে দেশের অন্যতম প্রাচীন ট্রেনটি, বিনা বিরতিতে ইতিহাস বহন করে।

নেতাজি ও কালকা মেল:
এই ট্রেনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মহানিষ্ক্রমণের এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। বহু ইতিহাসবিদ ও গবেষক মনে করেন, ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ নজরদারির মধ্যেও নেতাজি গোপনে কলকাতা ছেড়ে ঝাড়খণ্ডের পথে এই কালকা মেলেই রওনা দেন, দেশত্যাগের প্রস্তুতি হিসেবে। সেই কারণেই এই ট্রেনের আরেক নামকরণ করা হয় নেতাজি এক্সপ্রেস।
সময় বদলেছে, চলেছে ট্রেনও:
ট্রেনটির রূপ ও পরিকাঠামো বহুবার পরিবর্তিত হলেও, তার ঐতিহ্য আজও অমলিন। বহু প্রজন্ম ধরে মানুষের স্মৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে এই ট্রেন। একদিকে দেশের প্রাচীনতম ট্রেনের গর্ব, অন্যদিকে নেতাজির সঙ্গে এর ঐতিহাসিক সম্পর্ক—এই দুইয়ের মেলবন্ধনে কালকা মেল এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে ভারতীয় রেল ইতিহাসে।

আজকের দিনে যখন আধুনিক বুলেট ট্রেন, বন্ভাদে রত এক্সপ্রেসের মতো হাই-স্পিড ট্রেন ভারতের রেল মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করছে, তখনও হাওড়া থেকে নির্ভরযোগ্যভাবে ছুটে চলে এক ঐতিহাসিক যাত্রার বাহক—নেতাজি এক্সপ্রেস। এ শুধু একটি ট্রেন নয়, এক জীবন্ত ইতিহাস।