প্রতি বছর ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক সুখ দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং এই দিনেই প্রকাশিত হয় ‘বিশ্বের সুখ-সূচক’ বা World Happiness Index। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের Wellbeing Research Center এই সূচক প্রকাশ করে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সুখের মাত্রা ও জীবনযাত্রার মান মূল্যায়ন করে।
২০২৪ সালে, সুখী দেশের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল ১২৪ নম্বরে, যেখানে ২০২৩ সালে এটি ছিল ১১৮ নম্বরে। এর মাধ্যমে দেখা যায় যে, ভারতের সুখী হওয়ার র্যাঙ্ক কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে এখনও অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী পাকিস্তান এবারও ভারতের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে, তারা ১০৯ নম্বরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, ভারতীয় উপমহাদেশের দুই প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ যথাক্রমে ১৩৩ এবং ১৩৪ নম্বরে অবস্থান করছে।

বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় অনেকটা এগিয়ে রয়েছে চীন, যাদের অবস্থান ৬৮ নম্বরে। তবে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, প্যালেস্টাইন, কঙ্গো, উগান্ডা, এবং ইউক্রেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোও ভারতের থেকে এগিয়ে রয়েছে এই সূচকে।
এই বছরের সুখী দেশগুলির তালিকার শীর্ষস্থানটি আবারও দখল করেছে ফিনল্যান্ড। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক এবং তৃতীয় স্থানে আইসল্যান্ড। সুখী দেশের তালিকার সবার শেষে রয়েছে আফগানিস্তান, যেখানে তালিবান শাসনের অধীনে মহিলাদের ওপর কঠোর নিয়মকানুন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের মানুষের সুখ-সূচকে বিরাট প্রভাব ফেলেছে।
আমেরিকা ২৪ নম্বরে অবস্থান করছে, যেখানে ব্রিটেন তাদের আগেই রয়েছে। তবে, বিশ্ব সুখ সূচকে দেশগুলোর অবস্থান নির্ধারণে কেবল অর্থনৈতিক অবস্থা বা জাতীয় আয়ের হিসাবই বিবেচিত হয় না, বরং অনেক মানবিক মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করেই এই সূচক তৈরি হয়।
এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে এই সুখী দেশের তালিকা তৈরি হয়? বিশ্ব সুখ-সূচক তৈরির জন্য দেশের নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মান এবং সুখের অনুভূতি পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে একাধিক মানদণ্ডের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে—মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত হওয়া, বিপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো, এবং দৈনন্দিন জীবনে মানুষ কতটা সুখী তা মূল্যায়ন করা হয়।

একটি মজার উদাহরণ দেওয়া হয় এই সূচকের মধ্যে। যদি কোনো দেশের মানুষ তাদের মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলে, তবে সেই মানিব্যাগ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা, সেই প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে ওই দেশের নাগরিকদের অপরের প্রতি আস্থা এবং সুখের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, যেখান থেকে সমাজের মনস্তত্ত্ব এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের গভীরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সবশেষে, এই সুখ-সূচক দেশের মানুষের মানসিক শান্তি এবং সামগ্রিক সুখের প্রতিফলন। যদিও ভারতের র্যাঙ্ক কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে আরও অনেক দিকের উন্নতি প্রয়োজন, যেমন পারস্পরিক সহযোগিতা, জনগণের আস্থা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যা ভবিষ্যতে দেশের সুখের সূচককে আরও উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে।