আপনি যদি খাঁটি বাঙালি হন এবং পাতে মাছ না পড়লে আপনার মন ভার হয়, অথবা বাজারে আপনার পছন্দের মাছ দেখলেই আপনার মুখে চওড়া হাসি ফোটে, তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্যই। বাঙালি মাত্রেই ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত।
তবে মাছ খেতে ভালোবাসলেও, বেশিরভাগ মানুষই বাজারে গিয়ে রুই, কাতলা, মৃগেলের বাইরে অন্য মাছ কিনতে চান না। কিন্তু জানেন কি, অনেক অল্প পরিচিত মাছেই লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ?
আজ আমরা এমনই একটি মাছের কথা বলব, যা এক কথায় পুষ্টি ও ভিটামিনের রাজা! এটি হলো রূপালী রঙের, চার পাখনাযুক্ত মুলেট মাছ! এই নাম শুনে হয়তো অনেকেই চমকে উঠলেন। কিন্তু বাংলায় এই মাছের একটি খুব পরিচিত নাম আছে, যা শুনলেই আপনি চিনে যাবেন।
বাংলায় এই মুলেট মাছকে সাধারণত “পার্শে মাছ” বলা হয়। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, সেই সুস্বাদু পার্শে মাছ! এর আরেকটি নাম ‘খোরসুলা’। এই মাছের ঔষধি গুণ সত্যিই আকাশছোঁয়া, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রক্তচাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী।
পার্শে মাছগুলো দেখতে আঙুলের মতো লম্বা, এদের মাথা চ্যাপ্টা এবং মুখ ত্রিভুজাকার হয়। এরা সামুদ্রিক এবং মিঠা পানি উভয় পরিবেশেই বাস করে, যদিও কিছু প্রজাতি কেবল মিঠা জলেই পাওয়া যায়। এর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর দুটি পৃষ্ঠীয় (পিঠের দিকে) এবং দুটি ভেন্ট্রাল (পেটের দিকে) পাখনা রয়েছে।

পাণ্ড্যদের পতাকায় এটি পাওয়া যায় বলে এর উৎপত্তি তামিলদের ইতিহাসের কাছাকাছি বলে জানা যায়। এই মাছ সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয় এবং আট কেজি পর্যন্ত ওজনের হতে পারে।
পুষ্টিগুণে ভরপুর পার্শে:
এই মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং রক্তচাপ কমাতে দারুণ সহায়ক। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পার্শে বা মুলেট মাছে ভিটামিন বি৬, সেলেনিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস বিদ্যমান। এটি প্রোটিন সমৃদ্ধ, যা শরীরের ওজন বাড়াতেও সাহায্য করে। এটি ঝোল, গ্রেভি এবং স্টির-ফ্রাইয়ের সাথে খাওয়ার জন্য একটি চমৎকার মাছ।
সাদা মুলেট বা পার্শে মাছ তার দুর্দান্ত স্বাদের জন্য বিখ্যাত। অন্যান্য মাছের তুলনায় এই মাছের স্বাদ সত্যিই অনন্য। যেহেতু এই মাছে খুব বেশি কাঁটা থাকে না, তাই বাচ্চারাও এটি খেতে পছন্দ করবে। এটি শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে, ত্বকের উন্নতি ঘটায় এবং ক্যান্সার কোষ প্রতিরোধে সহায়ক। যেহেতু এই মাছে কাঁটা কম থাকে, তাই শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলেই এটি নিশ্চিন্তে উপভোগ করতে পারেন।