২৫শে বৈশাখ—বিশ্বকবির জন্মদিন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৫তম জন্মদিবসে গোটা বাংলা তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে নানাভাবে। বাঙালির রীতি অনুযায়ী, শুভ দিনে মিষ্টিমুখ করাটা যেন অবধারিত। আর কবিগুরু নিজেও ছিলেন একজন প্রকৃত মিষ্টিপ্রেমী। এমনই এক মিষ্টির নামকরণ করেছিলেন তিনি নিজে, যা আজও ইতিহাস বহন করে চলছে চুপিচুপি। জানেন কি সেই মিষ্টির নাম?
চন্দননগরের পাতাল বাড়ি ও রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের একটি সময় কাটিয়েছিলেন হুগলির চন্দননগরে। সেই শহরের বিখ্যাত ‘পাতাল বাড়ি’তে বসেই তিনি রচনা করেন জনপ্রিয় উপন্যাস ‘বউঠাকুরানীর হাট’। তাঁর থাকার সময় স্থানীয় এক জনপ্রিয় মিষ্টান্নের দোকান থেকে নিয়মিত মিষ্টি আসত কবির কাছে। দোকানটির নাম ছিল ‘সূর্য মোদক’, আর সেই দোকানের এক বিশেষ মিষ্টি ছিল কবির অত্যন্ত প্রিয়।
‘মতিচুর সন্দেশ’—নামকরণ কবিগুরুর
কথিত আছে, সূর্য মোদকের এক বিশেষ ধরনের সন্দেশ খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই সন্দেশ মুখে দিলেই ধীরে ধীরে গলে যায়, চিবানোর প্রতিটি মুহূর্তে এক অনন্য স্বাদ উপহার দেয়, আর হাতে নিলেই সেটি মুক্তোর মতো গুঁড়ো হয়ে যায়। কবিগুরু সেই সময়ই এই সন্দেশের নাম দেন ‘মতিচুর সন্দেশ’, কারণ এর গঠন ও গুণ মুক্তোর চূর্ণর মতো বলেই তাঁর এমন নামকরণ।
পাঁচ প্রজন্ম ধরে ঐতিহ্য বহন

আজও চন্দননগরের সূর্য মোদকের দোকানে তৈরি হয় এই ঐতিহাসিক মতিচুর সন্দেশ। পাঁচ প্রজন্ম পার করে বর্তমানে দোকানের দায়িত্বে রয়েছেন ভাগ্যশ্রী মোদক। তিনি বলেন, “আমরা শুনে এসেছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে এই সন্দেশকে এমন নাম দিয়েছেন। তিনি বলতেন, ‘মুখে যতক্ষণ চিবানো যায়, ততক্ষণ মিষ্টির স্বাদ থাকে। আর হাতে নিলে একেবারে গুঁড়ো হয়ে যায়।’ দেখতে যেন এক চূর্ণ মুক্তো। তাই নাম হয়েছে ‘মতিচুর সন্দেশ’।”
আজও চলছে পুরনো রীতিতে প্রস্তুত প্রণালী
আজও এই সন্দেশ তৈরি হয় পুরনো রীতি মেনে, দুধ আর ক্ষীরের মাধ্যমে। আধুনিকতার ছোঁয়ার মধ্যেও হারায়নি তার ঐতিহ্য ও স্বাদ। মতিচুর সন্দেশ যেন শুধু একটি মিষ্টি নয়, কবিগুরুর স্মৃতিতে মোড়ানো এক টুকরো ইতিহাস, যা আজও বাঙালির গর্ব হয়ে রয়েছে চন্দননগরের বুকে।