রোমানিয়ার এক গ্রামে ঘটল এক চমকপ্রদ ঘটনা। ঘরের এক কোণে বছরের পর বছর ধরে ডোরস্টপ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল একটি সাড়ে তিন কেজি ওজনের পাথর। কিন্তু সেই পাথরটিই যে আসলে এক অমূল্য রত্ন, তা টের পাওয়া যায় বহু বছর পর!
সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই ‘অযোগ্য’ পাথরটি আসলে বিশ্বের বৃহত্তম অ্যাম্বারের (Amber) একটি টুকরো। যার বাজারমূল্য অন্তত ১.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯৩ কোটি টাকা।
অ্যাম্বার কী?

অ্যাম্বার আসলে গাছের রেজ়িন বা আঠার fossilized রূপ। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পরিবেশের সঙ্গে ক্রিয়া করে এই আঠা ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে এক ধরনের আধা স্বচ্ছ পাথরে পরিণত হয়। সাধারণত হলুদ বা বাদামি রঙের এই উপাদান গয়না তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে এর গুরুত্ব শুধু অলঙ্কারে সীমাবদ্ধ নয়।
বিজ্ঞানীদের কাছে অ্যাম্বার একটি অমূল্য সম্পদ। কারণ, বহু পুরনো অ্যাম্বারের মধ্যে প্রাচীন উদ্ভিদ, পোকামাকড় কিংবা সেই সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় উপাদান আটকে থাকে। যার মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
কীভাবে জানা গেল এই পাথরের আসল পরিচয়?
ঘটনাটি রোমানিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের কোলটি গ্রামকে কেন্দ্র করে। এই অঞ্চলের বুজ়াও (Buzao) নদীর অববাহিকা থেকে অ্যাম্বার পাওয়ার ঐতিহাসিক রেকর্ড রয়েছে। ১৯২০ সাল থেকে সেখানে অ্যাম্বার খননের কাজও চলছে। ওই অঞ্চলের অ্যাম্বার তার লালচে-বাদামি বর্ণের জন্য বিশেষভাবে মূল্যবান এবং একে স্থানীয়ভাবে ‘রুমানাইট’ নামেও ডাকা হয়।
সেই কোলটি গ্রামের এক বৃদ্ধা এই পাথরটি নদীখাত থেকে কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর সেটিকে দরজা খুলে রাখার কাজে ব্যবহার করতে থাকেন, ভাবেননি সেটি হতে পারে কোটি টাকার সম্পদ।

১৯৯১ সালে বৃদ্ধার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীরা সম্পত্তি ঘাঁটতে গিয়েই পাথরটির অদ্ভুত গঠন ও রঙ দেখে সন্দেহ করেন। এরপর সেটি রোমানিয়ার সরকারের কাছে বিক্রি করা হয় এবং পরে পোল্যান্ডের একটি জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সেটি পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিশ্চিত করে — এই অ্যাম্বারটির বয়স অন্তত ৭ কোটি বছর!
এখন কোথায় রয়েছে সেই অমূল্য রত্ন?
অ্যাম্বারের সেই বিরল টুকরোটি বর্তমানে রোমানিয়ার বুজ়াও মিউজ়িয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে এবং সরকারিভাবে রোমানিয়ার জাতীয় সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এ যেন বাস্তবেই সেই প্রবাদকে সত্যি করে তুলেছে —
“যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই। পাইলে পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন…”
অবহেলায় ফেলে রাখা এক পাথর যে হতে পারে কোটি টাকার সম্পদ, তারই জীবন্ত উদাহরণ হয়ে থাকল এই ঘটনা।