দেশের বাইরে ঘুরলেও পাসপোর্ট লাগে না এই তিনজন ব্যক্তির!

দেশের বাইরে ঘুরলেও পাসপোর্ট লাগে না এই তিনজন ব্যক্তির!

বিশ্বে পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালুর প্রায় ১০২ বছর হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত, সরকারি কর্মকর্তারা সকলেই যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করেন, তখন তাদের সকলকেই অবশ্যই কূটনৈতিক পাসপোর্ট বহন করতে হয়। তবে, পৃথিবীর ২০০টিরও বেশি দেশের মধ্যে মাত্র তিনজন ব্যক্তির জন্য বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই। এই তিন ব্যক্তি ভ্রমণে গেলে তাদের পাসপোর্ট চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বরং, তারা অতিরিক্ত আতিথেয়তা এবং সম্মান পান।

পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু হওয়ার ইতিহাস :

 পাসপোর্ট

আগেকার যুগে বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে এমন কোনও চুক্তি ছিল না যে, এক দেশের নাগরিক যখন অন্য দেশে যাবে, তখন তার কাছে কোনো কাগজপত্র থাকতে হবে। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এক দেশের নাগরিকদের বৈধতা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ১৯২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই বিষয়ে আলোচনার শুরু হয়, এবং ১৯২৪ সালে প্রথম পাসপোর্ট ব্যবস্থা চালু হয়।

পাসপোর্টের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য এতে তার নাম, ঠিকানা, বয়স, ছবি, নাগরিকত্ব এবং স্বাক্ষর থাকে। এর ফলে বিদেশে ভ্রমণকারী ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সহজ হয়ে ওঠে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশই ই-পাসপোর্ট ইস্যু করে, যা প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও উন্নত।

বিশ্বের তিন বিশেষ ব্যক্তি যারা পাসপোর্ট ছাড়া ভ্রমণ করেন :

বিশ্বের এমন তিনজন বিশেষ ব্যক্তি রয়েছেন যারা কোন পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশে ভ্রমণ করতে পারেন। তারা হলেন:

পাসপোর্টের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা যায়
  1. ব্রিটেনের রাজা : ব্রিটেনের রাজা, যিনি বর্তমানে চার্লস, তার জন্য বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই। রানী এলিজাবেথের সময়ে এই সুবিধা ছিল, এবং এখন চার্লস রাজা হওয়ার পর তার সেক্রেটারি বিশ্বের সব দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছেন, যে তাকে বিদেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকা উচিত নয়। তবে, তার স্ত্রী, রানি ক্যামিলা, পাসপোর্টের ছাড় পান না এবং তাকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বহন করতে হয়।
  2. জাপানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী : জাপানের বর্তমান সম্রাট নারুহিতো এবং তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মাসাকোও এই বিশেষ সুবিধার অধিকারী। এর আগে, সম্রাট আকিহিতো এবং তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মিচিকোও একই সুবিধা পেয়েছিলেন। ১৯৭১ সাল থেকে জাপানের বিদেশ মন্ত্রক সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর জন্য পাসপোর্ট ব্যবস্থার এই বিশেষ নিয়ম চালু করে।
  3. ভ্যাটিকান সিটির পোপ : তিনি ক্যাথলিক চার্চের প্রধান, তারও পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না। এর কারণ হলো পোপ হলেন বিশ্বের কোটি কোটি ক্যাথলিকদের আধ্যাত্মিক নেতা। তার একটি বিশেষ ধর্মীয় মর্যাদা রয়েছে, যা তাকে পাসপোর্ট থেকে অব্যাহতি দেয়। তাছাড়া, পোপ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রধান। ভ্যাটিকান সিটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, এবং পোপ সেই রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এই কারণে, তিনি রাষ্ট্রপ্রধানদের মতো কূটনৈতিক সুবিধা ভোগ করেন, যার মধ্যে পাসপোর্ট থেকে অব্যাহতিও অন্তর্ভুক্ত। পোপরা বহু শতাব্দী ধরে পাসপোর্ট ছাড়াই বিশ্ব ভ্রমণ করে আসছেন।

বিশ্বের অন্যান্য নেতাদের জন্য বিশেষ সুবিধা :

বিশ্বের প্রধানমন্ত্রীরা এবং রাষ্ট্রপতিরা যখন বিদেশ ভ্রমণ করেন, তখন তাদের জন্য কনস্যুলার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। তবে, এসব নেতাদের পাসপোর্টের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তাদের ভ্রমণ সম্পর্কিত নিরাপত্তা চেক এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ভারতে, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির জন্য এই মর্যাদা রাখা হয়।

পাসপোর্ট ব্যবস্থার ইতিহাস দেখলে বোঝা যায় যে, এটি একটি প্রক্রিয়া যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সংযুক্ত করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, কিছু বিশেষ ব্যক্তির জন্য এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রমী সুবিধা রয়েছে, যা তাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আরও গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts