গান্ধীজিকে নিয়ে কিছু অজানা তথ্য, Some unknown facts about Gandhiji in Bangla

গান্ধীজিকে নিয়ে কিছু অজানা তথ্য

আমরা সকলেই জানি ২রা অক্টোবর জাতির জনক  মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী। এই উপলক্ষে দেশ জুড়ে গান্ধী জয়ন্তী পালন করা হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জনক হিসেবে পরিচিত তিনি।

গান্ধীজির জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে কমবেশি আমরা সকলেই জানি। তাঁকে গিয়ে বহু জানা অজানা তথ্য রয়েছে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে আকর্ষণীয় এবং অজানা তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো। 

গান্ধীজি সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য, Some interesting facts about Gandhiji :  : 

জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য জেনে নিন : 

গান্ধীজির মাতৃভাষা ছিল গুজরাটি।
  • গান্ধীজির মাতৃভাষা ছিল গুজরাটি।
  • গান্ধীজি রাজকোটের আলফ্রেড হাই স্কুলে তার স্কুলিং করেন।
  • বাপু নিজের পিতামাতার কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। তাঁর ২ ভাই ও ১ বোন ছিল।
  • গান্ধীজির পিতা ধর্ম ছিল হিন্দু এবং বর্ণের দিক থেকে মোধ বানিয়া ছিলেন।
  • মহাদেব দেশাই গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন।
  • মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে সাবেক বিড়লা হাউসের বাগানে হত্যা করা হয়।
  • চিঠির মাধ্যমে  গান্ধীজি এবং বিখ্যাত লেখক লিও টলস্টয় একে অপরের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন।
  • সত্যাগ্রহ সংগ্রামের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে 21 মাইল দূরে গান্ধীজি নিজের সহকর্মীদের জন্য 1100 একর জায়গায় একটি ছোট উপনিবেশ, টলস্টয় ফার্ম স্থাপন করেছিলেন।
  • গান্ধীজি শুধু স্বাধীনতার জন্যই লড়াই করেননি বরং অস্পৃশ্য, নিম্নবর্ণের জন্যও ন্যায্য আচরণের দাবি করেছিলেন। 
  • গান্ধীজি 1930 সালে, তিনি টাইম ম্যাগাজিন ম্যান অফ দ্য ইয়ার ছিলেন। 
  • মহাত্মা গান্ধী একজন মহান লেখক ছিলেন। তাঁর সংগৃহীত রচনাগুলির 50,000 পৃষ্ঠায় সংবলিত রয়েছে।
  •  মহাত্মা গান্ধী 1937, 1938, 1939, 1947, 1948 সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। 
  • গ্রেট ব্রিটেন, গান্ধীজির মৃত্যুর 21 বছর পর তাঁকে সম্মান জানিয়ে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল।
  • মহাত্মা উপাধি নিয়ে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জন্মগ্রহণ করেননি। কিছু বিশিষ্ট লেখকের মতে, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে এই উপাধি দিয়েছিলেন।
  • বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে মহাত্মা গান্ধীর শেষকৃত্যের মিছিলটি 8 কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল।
  • 1996 সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রবর্তনের পর থেকে মহাত্মা গান্ধীর একটি প্রতিকৃতি প্রদর্শন করে গান্ধী সিরিজের ব্যাঙ্কনোট জারি করা হয়। 
  • গান্ধী মেমোরিয়াল মিউজিয়াম 1959 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ভারতের তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে অবস্থিত। 

গান্ধীজি সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য, Some fun facts about Gandhiji :  : 

গান্ধীজি সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য

গান্ধীজি একজন সাহসী, স্পষ্টভাষী নেতা ছিলেন। কিন্তু তিনি এইসব বৈশিষ্ট্য জন্মগ্রহণ করেননি। নিজের আত্মজীবনীতে তিনি বলেছেন যে, তিনি এত লাজুক ছিলেন যে তিনি স্কুল থেকে বাড়িতে ছুটে চলে যেতেন, এর কারণ তিনি কারও সাথে কথা বলতে পারতেন না। গান্ধীজি সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য জেনে নিন :

  • 1930 সালের সল্ট মার্চের সময় তিনি 60 বছর বয়সী ছিলেন, তাও গান্ধী আশ্রম থেকে তিনি সঙ্গীদের নিয়ে ডান্ডি সমুদ্রে 241 মাইল হেঁটেছিলেন।
  • একবার ট্রেন যাত্রার সময় একজন ব্রিটিশ গান্ধীজিকে কালো মানুষ হিসেবে বিবেচিত করে ট্রেন থেকে নামতে বলেছিলেন। কিন্তু গান্ধী তার কাছে টিকিট থাকায় তিনি নেমে যাওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান করেন। তখন ব্রিটিশ এবং রেলওয়ে অফিসার নিষ্ঠুরভাবে গান্ধীকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এটি ব্রিটিশদের সাথে গান্ধীর তিক্ত অভিজ্ঞতার একটি ঘটনা।
  • 1931 সালে ইংল্যান্ডে থাকাকালীন, গান্ধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তার প্রথম রেডিও সম্প্রচার করেছিলেন।   
  • গান্ধীজির জীবনের লক্ষ্য ছিল সত্য, অহিংসা, আধ্যাত্মবাদ, ধর্মীয়তা, সততা, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি। এই সমস্ত চমৎকার উচ্চ গুণাবলী তাকে মহাত্মা করে তোলে যার অর্থ মহান আত্মা।
  • গান্ধী অত্যন্ত সময়নিষ্ঠ ছিলেন। তার খুব কম সম্পদের মধ্যে একটি ছিল ডলারের ঘড়ি।
  •  মহাত্মা গান্ধী 1906 সালের জুলু যুদ্ধে আহত ব্রিটিশ সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য গঠিত ভারতীয় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত স্ট্রেচার-বিয়ারার কর্পসকে কমান্ড করেছিলেন।
  • মহাত্মা গান্ধী হরিজন পত্রিকা সহ, ভারতের ইয়ং ইন্ডিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি ইংরেজি, হিন্দি এবং গুজরাটি সংবাদপত্রের সম্পাদক হিসাবে কাজ করেছিলেন।
  •  মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী শিরোনাম ছিল “অটোবায়োগ্রাফি অফ মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ”, যা 1920 সাল পর্যন্ত তাঁর জীবনের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করে, 1927 সালে এই বই প্রকাশিত হয়েছিল। 1999 সালে, হার্পারকলিন্স প্রকাশকরা একে ’20 শতকের 100টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক বই’ হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।
  • মহাত্মা গান্ধী আইরিশ উচ্চারণে ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন, কারণ তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে একজন ছিলেন আইরিশ নাগরিক, যার থেকে তিনি এই শিক্ষা গ্রহণ করেন।
  • দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করার সময় গান্ধীজির আয় বছরে পনের হাজার ডলার ছুঁয়েছিল! 
  • মহাত্মা গান্ধী কখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাননি, তবে তাঁর অনেক আমেরিকান ভক্ত এবং অনুসারী ছিল। তাঁর ভক্তদের মধ্যে একজন ছিলেন হেনরি ফোর্ড। গান্ধীজি তাঁকে একটি অটোগ্রাফযুক্ত চরকা পাঠিয়েছিলেন।  
  • গান্ধীজি নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন, গুজরাটি ভাষায়। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী শ্রীমহাদেব দেশাই সেই লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন।
  • গান্ধীজির ক্ষেত্রে সবচেয়ে মজার তথ্য হল : শুক্রবার যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। গান্ধীজি শুক্রবার জন্মগ্রহণ করেন। শুক্রবার ভারত স্বাধীনতা পেল। শুক্রবার গান্ধীজিকে হত্যা করা হয়।
  • গান্ধীজি কখনো প্লেনে ভ্রমণ করেননি। যদিও তাঁর অনেক ক্ষমতা ছিল, তবুও তিনি খুব সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন। সারা জীবন তিনি সরলতা অনুসরণ করেছেন।
  • গান্ধীজি 1947 সালের 15 আগস্ট ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেননি। তখন তিনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ভারত ও পাকিস্তানে দেশ ভাগের নিন্দা জানাতে অনশনে ছিলেন। 
  • গান্ধীজি চরকার সাহায্যে টুকরো টুকরো কাপড় নিজে সেলাই করতেন এবং সর্বদা ধোয়া কাপড় পরতে আগ্রহী ছিলেন।
গান্ধীজি চরকার সাহায্যে টুকরো টুকরো কাপড় নিজে সেলাই করতেন

 গান্ধীজির জীবনের কিছু অজানা কথা, Some unknown facts of Gandhiji’s life : 

  • গান্ধীজির বয়স যখন মাত্র ৭ বছর তখন কাস্তবাইয়ের সাথে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। ১৮৮৩ সালে ১৩ বছর বয়সের গান্ধীজি ১৪ বছর বয়সী কাস্তবাইকে বিয়ে করেন। 
  •  গান্ধীজির মা পুতলিবাই কঠিন ধর্মানুরাগী নারী ছিলেন। বিদেশ যাবার প্রাক্কালে পুতলিবাই গান্ধীজি শপথ করিয়েছিলেন যে তিনি যেন মদ, মাংস এবং নারী হতে বিরত থাকেন।
  •  গান্ধী জীবনে এতটা হেঁটেছেন যে তাতে পুরো পৃথিবী দুইবার চক্কর দেয়া সম্ভব। দিনে প্রায় ১৮ কিলোমিটার করে হাঁটতেন তিনি।
  •  গান্ধীজির সম্মানে ভারতে ৫৩টি বড় রাস্তা এবং সারা পৃথিবীজুড়ে ৪৮টি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। 
  • মহাত্মা গান্ধীর পরম ভক্ত ছিলেন মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের স্রষ্টা স্টিভ জবস। এমনকি জবস তাঁর দেখাদেখি গোলাকার ফ্রেমের চশমা পরতেন।
  • গান্ধীজির একজোড়া বাঁধানো দাঁত ছিল, যা তিনি শুধু প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতেন এবং বাকি সময় সেটিকে কাপড়ে মুড়ে কাছে রাখতেন।
  • মহাত্মা গান্ধী আজীবন নিরামিষভোজী ছিলেন, তিনি তাজা শাকসবজি, দই, ফল, বীজ এবং বাদাম খেতেন। 
  • মহাত্মা গান্ধী ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় 18টি উপবাস করেছিলেন। তাঁর দীর্ঘতম উপবাস 21 দিন স্থায়ী হয়েছিল।
গান্ধী আজীবন নিরামিষভোজী ছিলেন,

শেষ কথা, Conclusion : 

মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও সংগ্রামের পদ্ধতি এখন মানুষকেও প্রভাবিত করে। তাঁর জীবন মানুষকে ভালোর জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতে প্রভাবিত করে।

মহাত্মা গান্ধীর জীবন, আন্দোলন, তাঁর লেখা বিখ্যাত উদ্ধৃতি ইত্যাদি সবকিছুই অনুপ্রেরণামূলক। স্বাধীনতা কর্মী এবং একজন কর্তৃত্বপূর্ণ তথা শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি আজও সমাদৃত।

আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরে আপনারা আনন্দিত। পোস্ট টি ভালো লাগল অবশ্যই নিজের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। 

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts