নতুন মা হয়েছেন যারা, তারা আপনার ছোট্ট শিশুটির জন্য বুকের দুধ সমৃদ্ধ করতে গিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্ত বোধ করে থাকেন। চিকিৎসকদের তথা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সুপারিশ করা হয় যে একটি শিশুকে অবশ্যই প্রথম 6 মাস 2 বছর বয়স পর্যন্ত একচেটিয়াভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।
সাধারণত ধারণা করা হয়। এটি শিশুর স্বাস্থ্য এবং বিকাশের উপর অনেক দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। তাই নতুন যারা মা হয়েছেন তারা শিশুকে স্তন্যপান করানোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন।
তবে কি খেলে বুকের দুধ সমৃদ্ধ হবে এবং স্তন্যপান করানোর সময় কোন কোন খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত, তা জানতে চাইলে আজকের এই প্রতিবেদন শেষ অবধি পড়তে হবে।
স্তন্যপান করানোর সময় কি খাওয়া উচিত ? What to eat while breastfeeding?
স্তন্যপান করানোর ডায়েটে বিভিন্ন ধরনের খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যেগুলোতে উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার, প্রোটিন , আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন B 12, ভিটামিন D এবং ভিটামিন C থাকে।
নতুন মায়েদের নিজের যত্ন নেওয়া এবং একটি পরিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করা আপনার নবজাতককে পুষ্ট রাখতে তথা বুকের দুধের সরবরাহ বাড়াতে উল্লেখ্য খাদ্য উপাদান উপকারী।
স্তন্যপান করানোর সময় যে খাবার ও পানীয়গুলি এড়ানো উচিত, Foods and drinks that should be avoided while breastfeeding :
স্তন্যপান করানোর সময় নতুন মায়েদের নির্দিষ্ট কিছু খাবার নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা খুব জরুরি। নয়তো এই খাবার মায়ের পাশাপাশি শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। জেনে নিন স্তন্যপান করানোর সময় কোন খাবার ও পানীয়গুলি এড়ানো উচিত :
১. চকোলেট কম খাওয়া :
স্তন্যপান করানো মায়ের ক্ষেত্রে খুব বেশি চকোলেট খাওয়া উচিত না, এটি আপনার শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এর কারণ চকোলেটে ক্যাফেইন এবং থিওব্রোমিন থাকে।
2. ক্যাফেইন থেকে বিরত থাকা :
নতুন মায়েদের কফি আপনার শিশুর সাথে নিদ্রাহীন রাত কাটাতে একটি ত্রাণকর্তা বলে মনে হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরী: উচ্চ মাত্রার ক্যাফিন গ্রহণ করার আপনার বাচ্চার মধ্যে অস্থিরতা, ঘুমের অভাব দেখা দিতে পারে।
তাই আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত না করেও আপনাকে শক্তি প্রদান করতে পারে এমন বিকল্প উপায়গুলি বিবেচনা করা মূল্যবান।
3. মিষ্টি পানীয় সীমিতভাবে পান করা :
শিশুদের উপর মিষ্টি পানীয়ের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। মিষ্টি জাতীয় পানীয়গুলি শিশুর অস্থিরতা, ঘুমের অভাব এবং খিঁচুনি সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই পানীয়গুলিও সীমিত করা ভাল।
4. জাঙ্ক ফুড না খাওয়া উচিত :
মাঝে মাঝে জাঙ্ক ফুড খাওয়া যেতে পারে, তবে স্তন্যপান করানোর সময় জাঙ্ক ফুড থেকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যখন আপনি বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তখন জাঙ্ক ফুড শুধু আপনাকেই নয় আপনার শিশুকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
এর কারণ হল এইসব খাবার অ্যাডিটিভ, শর্করা এবং চর্বি যোগ করে অতিরিক্ত সুস্বাদু করা হয়; এটি আপনার শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ; ফলে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলাই ভালো।
5. পুদিনা থেকে দূরে থাকুন :
আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন যে নির্দিষ্ট কিছু ভেষজ এর প্রভাবে দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। এই ধরনের ভেষজগুলোকে বলা হয় ‘অ্যান্টি-গ্যালাক্টোগ্স’।
এমন ভেষজের মধ্যে রয়েছে পুদিনা। নতুন মায়েদের জন্য পুদিনা পাতা খাওয়া বা এই পাতা ব্যবহার হয়েছে এমন কোনও খাবার খেলে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া পার্সলে খেলেও একই সমস্যা হতে পারে।
6. ফুলকপি, বাঁধাকপি না খাওয়া উচিত :
ফুলকপি, বাঁধাকপির মত খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা হয়, তাই নতুন মায়েরা এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। আপনার গ্যাসের সমস্যা বাড়লে, আপনার নবজাত শিশুরও গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যাবে।
তাই রোজ দিনের ডায়েটে মুলো, ফুলকপি, বাঁধাকপি না রাখাই ভাল।
7. প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাওয়া :
স্তন্যপান করানোর সময় পুষ্টিবিদেরা নতুন মায়েদের সর্বদাই পুষ্টিকর খাওয়ার খেতে বলেন। এই সময়কালে প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকা জরুরি; যেমন সসেজ, নাগেট্স, সালামি ইত্যাদি খাবার না খাওয়াই ভাল।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, মায়ের খাদ্যাভ্যাস পরবর্তী সময় শিশুর খাদ্যাভ্যাসেও প্রভাব ফেলে। শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার মোটেও ভাল নয়। এর কারণ এতে চিনি, নুন ও রাসায়নিক যৌগ মেশানো থাকে।
8. মদ্যপান ও ধূমপান না করা ভালো :
স্তন্যপান করানোর সময়কালে মদ্যপান করা থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরি। এর কারণ, নতুন মায়েরা মদ্যপান করলে মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ কমে যায়।
সদ্যজাত সন্তানের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে দুধ উৎপন্ন না করা হলে, শিশুর পেট কখনওই ভর্তি হবে না। এতে সর্বদা শিশুর মেজাজ বিগড়ে থাকবে।
এ ছাড়াও নিকোটিন আছে এমন কোনও খাবার না খাওয়া শ্রেয়। মনে রাখবেন প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে ধূমপানের প্রভাব পড়বে আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যে।
9. সাইট্রাস জাতীয় ফল:
সাইট্রাস ফল অ্যাসিডিক প্রকৃতির হয় এবং মা যদি এমন কোনো ফল খায় তবে সেটা স্তন্যপায়ী শিশুর ক্ষতি করতে পারে।
সাইট্রাস জাতীয় ফল হল লেবু, কমলা, আঙ্গুর। সদ্য মা হওয়া কোনো মহিলা যদি ডায়েট চার্ট – এ এইসব ফল যোগ করে থাকেন তবে আজই এগুলিকে বিকল্প হিসেবে স্ট্রবেরি, পেঁপে ইত্যাদি যোগ করে নিন।
10. রসুন:
নতুন মা যদি স্তন্যপান করানোর সময়কালে রসুন খান, তখন রসুনের গন্ধ আপনার বুকের দুধেও যায়।
আপনার শিশুর সে গন্ধ সহ্য করতে পারবে কি না সে বিষয়ে একটি লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি সে বিরক্তি বোধ করে তবে রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
11. গম:
আপনার যদি গম খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত পারিবারিক কোনো ইতিহাস থাকে বা গম খেলে পেটের কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তবে আপনাকে এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
এটি আপনার শিশুর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে যেমন পেটে ব্যথা, ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
12. কাঁচা শাকসবজি :
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কাঁচা শাকসবজি এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো হজম করা কঠিন। সেক্ষেত্রে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার ফলে মা এবং শিশু উভয়ের মধ্যে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
তাছাড়া কাঁচা শাকসবজিতে অনেক ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া বা কীটনাশক ইত্যাদি থাকতে পারে, যা বুকের দুধের মাধ্যমে স্তন্যপায়ী শিশুর দেহেও স্থানান্তরিত হতে পারে। এর থেকে বরং শাকসবজি রান্না করে খাওয়ার ফলে এ সব সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন।
পাশাপাশি পেঁয়াজ থেকেও সতর্ক থাকা জরুরি, এটি শিশুর গ্যাসজনিত সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার ফলে শরীরে অস্থিরতা দেখা দেয়।
শেষ কথা :
সদ্যজাত শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময়কালে কী খাবেন এবং কী খাবেন না সে সম্পর্কে আপনার নিজের মতামতে পৌঁছানোর আগে, আপনাকে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এই বিষয়ে সচেতন থাকলে আপনার শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবে, নয়তো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
Frequently Asked Questions
গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ব্রাউন রাইস বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ায় । এটি মাকে আরও শক্তি প্রদান করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর দিকনির্দেশনায় অবদান রেখে মায়ের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।
দারুচিনি, রসুন, তরকারি, কাঁচামরিচের মতো মশলা। সাইট্রাস ফল এবং তাদের রস, যেমন কমলা, লেবু, চুন এবং জাম্বুরা।
এইসব খাবার অ্যাডিটিভ, এটি আপনার শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ; ফলে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলাই ভালো।