প্রকৃতিতে এক প্রাণী অন্য প্রাণীকে খেয়ে জীবনের চক্র সম্পন্ন করে—এটি সাধারণ একটি ঘটনা। কিন্তু কীভাবে একজন শান্তশিষ্ট প্রাণী, যেমন উট, বিষধর সাপ গিলে ফেলে? বিশেষ পরিস্থিতিতে মরুভূমির প্রাচীন বাহন উটকে জীবন্ত সাপ খাওয়ানো হয়, বিশেষ করে কিং কোবরা বা পাইথনের মতো ভয়ংকর সাপ। তাহলে, উট কেন এমনটি করে?
‘হায়াম’ নামক অদ্ভুত রোগ
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উটকে সাপ খাওয়ানোর নানা ভিডিও দেখা যায়। এই ঘটনা মূলত একটি বিশেষ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। রোগটির নাম ‘হায়াম’, যা স্থানীয় ভাষায় জীবন্ত সাপ গিলে ফেলার রোগ হিসেবে পরিচিত। এই রোগে আক্রান্ত হলে উট খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দেয়, শরীর ফুলে শক্ত হয়ে যায় এবং রক্তশূন্যতা সহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। চিকিৎসা না হলে, রোগের শেষ পর্যায়ে উট সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং তার মৃত্যু ঘটে।

এই রোগের চিকিৎসার জন্য বিষধর সাপ—বিশেষত কিং কোবরা বা পাইথনের মতো সাপ খাওয়ানো হয়। উটের মালিকরা উটের মুখে জীবন্ত সাপ ঢুকিয়ে দেন, তারপর সাপের ভিতরে চলে যাওয়ার জন্য কিছু পরিমাণ জল ঢালা হয়। কখনো কখনো উট নিজেই সাপ খেয়ে ফেলে। সাপের বিষ শরীরে ছড়িয়ে পড়লে উট তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে এবং প্রচুর জল পান করতে থাকে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে প্রায় ছয় থেকে আট ঘণ্টা, তারপর সাপের বিষের কারণে উটের চোখ দিয়ে জল ঝরতে শুরু করে এবং কিছু সময়ের মধ্যেই সে সুস্থ হয়ে ওঠে।
বিজ্ঞান কি এর সমর্থন করে?
এভাবে সাপ খাওয়ানোর চিকিৎসা পদ্ধতিটি অবশ্যই বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত নয়। চিকিৎসকেরা মনে করেন, উটের পরিপাকতন্ত্র অত্যন্ত শক্তিশালী, এবং সাপের কামড় বা সাপ গিলে ফেললে তা সহজেই হজম হয়ে যায়। মরুভূমির কঠিন পরিবেশে উট অন্যান্য বিষাক্ত খাবার বা প্রাণী খেয়ে থাকে এবং সাপের বিষ তার জন্য তেমন কোনো সমস্যা তৈরি করে না। সুতরাং, এই চিকিৎসা পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং এটি মূলত একটি কুসংস্কার।
‘তিরয়াক’: উটের চোখের পানি

সাপ খাওয়ার পর উটের শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হলে, তৃষ্ণা বাড়তে থাকে এবং উট প্রচুর জল পান করতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার পর, উটের চোখ থেকে জল বের হতে থাকে, যা খুবই মূল্যবান। এই জলকে স্থানীয় ভাষায় ‘তিরয়াক’ বলা হয়, যা একটি বিশেষ ঔষধ হিসেবে পরিচিত। এটি বিষাক্ত প্রাণীর কামড় বা দংশন থেকে জীবন বাঁচাতে ব্যবহৃত হয়। উটের মালিকরা অত্যন্ত যত্ন সহকারে এই জল সংরক্ষণ করেন, কারণ এটি বিষক্রিয়ার প্রতিকার হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর বলে বিশ্বাস করা হয়।
যদিও উটের সাপ খাওয়ার চিকিৎসা পদ্ধতিটি বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত নয়, তবুও এটি স্থানীয় লোকজনের কাছে একটি পুরনো প্রথা হিসেবে প্রচলিত রয়েছে। ‘হায়াম’ রোগের চিকিৎসার জন্য বিষধর সাপ খাওয়ানো এক প্রাচীন বিশ্বাস, যা আজও চালু রয়েছে, যদিও এটি কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়।