মাঘ মাসের শেষ তিথি মাঘ পূর্ণিমা বা মাঘী পূর্ণিমা নামে পরিচিত। এ দিন যে ভক্ত গঙ্গায স্নান সেরে নিষ্ঠাভরে বিষ্ণুর পুজো করেন, তার জীবনের সমস্ত অশান্তি দূর হয়ে যায়। এই দিনে দানকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে মাঘ পূর্ণিমার দিনে যদি পুষ্য নক্ষত্র তিথি থাকে, তাহলে এই তিথির গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যায়।
মাঘী পূর্ণিমা তিথির মাহাত্ম্য অনেক বেশি হওয়ার কারণগুলি হল:

- ১. আধ্যাত্মিক তাৎপর্য: মাঘী পূর্ণিমা অত্যন্ত আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। এই দিনে অনেক মানুষ গঙ্গা বা অন্য কোনো পবিত্র নদীতে স্নান করে এবং ঈশ্বরের পূজা করে। এটি মনে করা হয় যে এই দিনে পবিত্র স্থানে স্নান করলে মানুষের পাপ মুছে যায় এবং আত্মা শুদ্ধ হয়।
- ২. বিষ্ণুর পূজা: মাঘী পূর্ণিমা ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ পূজার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে বিষ্ণুর পূজা করলে মানুষের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। এছাড়াও, এই দিনে দান করাও খুব শুভ বলে মনে করা হয়।
- ৩. প্রাকৃতিক তাৎপর্য: মাঘী পূর্ণিমার সময় শীতকাল শেষ হয়ে আসে এবং বসন্তকাল শুরু হয়। এই সময়ে প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে ওঠে এবং মানুষের মনেও নতুন আশা ও উদ্দীপনা জাগে।
- এই সব কারণগুলির জন্য মাঘী পূর্ণিমা তিথির মাহাত্ম্য অনেক বেশি। এই দিনে মানুষ আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় কাজকর্ম করে তাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও পবিত্র করে তোলে।
মাঘ পূর্ণিমার গুরুত্ব:
মাঘ পূর্ণিমা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি তিথি। এই পূর্ণিমা তিথি মাঘ মাসের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করেন। এই তিথিতে কিছু বিশেষ রীতি ও আচার পালন করা হয়। নিচে এর কারণগুলি উল্লেখ করা হলো:
১. ত্রিবেনী সঙ্গম: মাঘ পূর্ণিমার সময় প্রয়াগরাজে ত্রিবেনী সঙ্গমে (গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর মিলনস্থল) স্নান করা অত্যন্ত পুণ্যদায়ক বলে মনে করা হয়। বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই সময় এখানে আসেন এবং স্নান করেন।
২. কল্পবাস: মাঘ মাসে অনেক মানুষ প্রয়াগরাজে কল্পবাস করেন। কল্পবাস হলো গঙ্গা নদীর তীরে এক মাস ধরে বসবাস করা এবং তপস্যা করা। মাঘ পূর্ণিমার দিন এই কল্পবাসের সমাপ্তি হয়।
৩. দান ও ধর্মীয় কাজ: এই দিনটিতে দরিদ্রদের দান করা, অন্ন বস্ত্র বিতরণ করা এবং ধর্মীয় কাজকর্ম করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিনে দান করলে এবং ভালো কাজ করলে তার ফল অনেক বেশি হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

মাঘ পূর্ণিমা শুধু একটি তিথি নয়, এটি আধ্যাত্মিক উন্নতি ও মানসিক শান্তির প্রতীক। এই দিনটিতে পবিত্র কাজ করা এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৫ সালে মাঘ পূর্ণিমা পালন করা হয়েছে ১২ ফেব্রুয়ারি। মাঘ মাসে কুম্ভে পবিত্র স্নান করার এটিই শেষ সুযোগ। মাঘ পূর্ণিমায় পবিত্র নদীতে স্নান এবং দান করা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পঞ্জিকা অনুসারে, ২০২৫ সালে মাঘ পূর্ণিমা তিথি শুরু হয় ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ০৬:৫৫ মিনিট এবং শেষ হবে ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ০৭:২২ মিনিটে।