স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার কিছু হাদিস, Hadiths on husband and wife love in Bengali

স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার কিছু হাদিস

দাম্পত্য জীবনে সুখ, শান্তি ও কল্যাণ পেতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক আন্তরিকতা ও ভালোবাসা থাকা জরুরী। পাশাপাশি দাম্পত্য জীবনে সুখ পেতে প্রিয় নবী (সা.)-এর নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতি অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই।

অন্যদিকে নবীজির মৃত্যুর ঘটনা আয়েশা (রা.) হাদীসের মাধ্যমে বর্ণনা করছিলেন। খুব কম বয়সে তিনি নিজের হাবিবকে হারিয়েছেন। নবীজীর অন্তিম মুহূর্তের কথা ভেবে আয়েশার (রা.) দুঃখ তাঁর প্রতিটি হাদিসে ফুটে উঠেছে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার কিছু হাদিস নিয়ে আলোচনা করবো।

স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার হাদিসগুলো হল, Hadiths on husband and wife love :

স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা

আম্‌র ইব্‌নু ‘আস (রা.) বর্ণনা করেছেন,

“ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘আয়িশাহ্! আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবূ বাক্‌র)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন লোকটি? তিনি বললেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব অতঃপর আরো কয়েকজনের নাম করলেন।” (সহিহ বুখারী-৩৬৬২)

আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেছেন,

“ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন।” (সহিহ বুখারী-২৯৭)

আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেছেন,

“আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র হতে গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো।” (সহিহ বুখারী- ২৫০)

আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন,

‘রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ই’তিকাফ করতেন তখন আমার দিকে তাঁর মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন। আমি তা আঁচড়ে দিতাম।’ (সহিহ মুসলিম-৫৭১)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন,

“আমি ঋতুবতী অবস্থায় পানি পান করতাম এবং পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবশিষ্টটুকু প্রদান করলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতাম তিনিও পাত্রের সে স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আবার আমি ঋতুবতী অবস্থায় হাড় খেয়ে তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দিলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়েছিলাম তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে খেতেন।” (সহিহ মুসলিম- ৫৭৯)
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক

আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন,

“ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত।” (সহিহ বুখারী- ৬১৩০)

আয়িশাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন। হাদিসে বর্ণিত,

“আমি তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তার আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তার সাথে আবারো দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা।” (সুনানে আবু দাউদ- ২৫৭৮)

আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেছেন,

“ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর আমি হাবশীদের খেলা দেখছিলাম। মসজিদের কাছে তারা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল।” (সহিহ বুখারী- ৩৫৩০)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন,

“ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক করে তা ধোয়ার জন্য আমাকে দিতেন। আমি নিজে প্রথমে তা দিয়ে মিসওয়াক করতাম, অতঃপর সেটা ধুয়ে তাঁকে দিতাম।” (সুনানে আবু দাউদ- ৫২)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রোগগ্রস্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব। ‘আগামীকাল কার ঘরে?’ এর দ্বারা তিনি ‘সহধর্মিণীগণ এর ঘরের পালার ইচ্ছা পোষণ করতেন। সহধর্মিণীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যার ঘরে ইচ্ছা অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। এমনকি তাঁর ঘরেই তিনি ইন্তিকাল করেন।

ভালোবাসা

আয়েশা (রা.) বলেন,

“নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে থেকেই ইন্তিকাল করেন এবং আল্লাহ তার রূহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে, তাঁর মাথা আমার গণ্ড ও সীনার মধ্যে ছিল এবং আমার থুথু (তার থুথুর সঙ্গে) মিশ্রিত হয়ে যায়।”
আয়েশা হাদিসে আরো বলেন,
“এ সময় ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রা.) আমার নিকট প্রবেশ করে এবং তার হাতে মিসওয়াক ছিল। আর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (আমার বুকে) হেলান অবস্থায় রেখেছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, তিনি ‘আবদুর রহমানের দিকে তাকাচ্ছেন। আমি বুঝলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াক চাচ্ছেন। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি আপনার জন্য মিসওয়াক নিব? তিনি মাথা নাড়িয়ে জানালেন যে, হ্যাঁ। তখন আমি মিসওয়াকটি নিলাম। কিন্তু মিসওয়াক ছিল তার জন্য শক্ত, তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি এটি আপনার জন্য নরম করে দিব? তখন তিনি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন। তখন আমি তা চিবিয়ে নরম করে দিলাম। এরপর তিনি ভালভাবে মিসওয়াক করলেন। তাঁর সম্মুখে পাত্র অথবা পেয়ালা ছিল (রাবী ‘উমারের সন্দেহ) তাতে পানি ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় হস্তদ্বয় পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তার দ্বারা তাঁর চেহারা মুছতে লাগলেন। তিনি বলছিলেন…….-আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, সত্যিই মৃত্যু-যন্ত্রণা কঠিন। তারপর দুহাত উপরের দিকে উঠিয়ে বলছিলেন, আমি উচ্চে সমাসীন বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। এ অবস্থায় তার ইন্তিকাল হল আর হাত শিথিল হয়ে গেল।” (সহিহ বুখারী- ৪৪৪৯)

হজরত আয়েশা (রা.)-কে বলেছেন,

‘সবার চেয়ে আয়েশা আমার কাছে এমন প্রিয়, যেমন সব খাবারের মধ্যে সারিদ (আরবের বিশেষ এক ধরনের খাদ্য) আমার কাছে বেশি প্রিয়’ (সহিহ বুখারি)।

রাসূল (সা.) বলেন,

‘যার বিবাহ করার ইচ্ছা করে, সে যেন দ্বীনকে প্রাধান্য দেয়। অন্য হাদিসে এসেছে, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়- সম্পদ, বংশমর্যাদা, সৌন্দর্য ও দ্বীনদারি। সুতরাং তুমি দ্বীনদারিকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে (সহিহ বুখারি)।’

নবী করিম (সা.) বলেন,

‘যদি আমি কোনো মানুষকে অপর কারও জন্য সিজদা করার অনুমতি দিতাম, তবে নারীকে তার স্বামীকে সিজদা করতে নির্দেশ দিতাম’ [তিরমিজি]।

হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন,

‘যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে তার শয্যায় ডাকে (পারস্পরিক মিলনের উদ্দেশ্যে)। এরপর স্ত্রী যদি স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দেয়, আর স্বামী যদি (তার এ আচরণে কষ্ট পেয়ে) তার প্রতি নারাজ অবস্থায় রাত অতিবাহিত করে, এমতাবস্থায় জান্নাতের বাসিন্দারা তাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত লানত দিতে থাকে’ (বুখারি)।

রাসূল (সা.) বলেছেন,

‘স্বামী যখন তার প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকে, সে যেন অবশ্যই তার কাছে আগমন করে, যদিও সে চুলার ওপর ব্যস্ত থাকুক।’

রাসূল (সা.) বলেছেন,

‘যদি কোনো স্ত্রীলোক এমতাবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (তিরমিজি)।

রাসূল (সা.) বলেন,

‘আমি আমার স্ত্রীদের জন্য এমনই পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন আমি তাদের ক্ষেত্রে সাজগোজ করে থাকতে পছন্দ করি’ (বাইহাকি, হাদিস : ১৪৭২৮)।
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের অর্ধাঙ্গ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি”।

পরিশেষে, Conclusion :

সমাজে একটি কথা প্রচলিত যে, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের অর্ধাঙ্গ। একজন পুরুষের জীবনে যেমন অন্যতম আশা থাকে ভালো একজন স্ত্রী পাওয়া, তেমনিভাবে একজন মেয়েরও জীবনে সবচেয়ে বড় চাওয়া পাওয়া হলো ভালো একজন স্বামী। দাম্পত্যজীবন স্বামী-স্ত্রীর জন্য আল্লাহর নিয়ামত। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের সহায়ক ও পরিপূরক। আশা করি উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলোর মধ্য দিয়ে আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার সম্পর্ক কিভাবে বজায় রাখতে হয়।

RIma Sinha

Rima Sinha is a professional journalist and writer with a strong academic background in media and communication. She holds a Bachelor of Arts from Tripura University and a Master’s degree in Journalism and Mass Communication from Chandigarh University. With experience in reporting, feature writing, and digital content creation, Rima focuses on delivering accurate and engaging news stories to Bengali readers. Her commitment to ethical journalism and storytelling makes her a trusted voice in the field.

Recent Posts

link to হাতের চাপ বলবে কতটা সুস্থ তুমি, ঠিক কীভাবে ফিরবে শরীরের জোর?

হাতের চাপ বলবে কতটা সুস্থ তুমি, ঠিক কীভাবে ফিরবে শরীরের জোর?

আপনার হাতের মুষ্টির চাপ (Grip strength) আপনার সামগ্রিক সুস্থতার এক দারুণ সূচক হতে...