রক্তের ক্যান্সার – এই নামটি শুনলেই একটা চাপা আতঙ্ক গ্রাস করে। একটা সময় ছিল যখন রক্তের ক্যান্সার মানেই এক নিশ্চিত পরিণতি মনে করা হতো। বিশেষ করে ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া-এর মতো আগ্রাসী ক্যান্সার, যা অস্থিমজ্জা থেকে দ্রুত রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায়শই চতুর্থ পর্যায়ে ধরা পড়ে, তা ছিল ভীতিকর।
কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতি এখন সেই চিত্র বদলে দিচ্ছে। এবার সুখবর হলো, ট্যাবলেট খেলেই রক্ত ক্যান্সার নির্মূল করার একটি যুগান্তকারী ওষুধ ভারতে আসছে!
এই যুগান্তকারী ওষুধটি তৈরি করেছে গ্লেনমার্ক
ফার্মাসিউটিক্যালস, যাদের গবেষণাগার ভারতেও রয়েছে। সংস্থার দাবি, ভারতীয় রোগীদের শারীরিক গঠন ও প্রয়োজন বুঝে এই ওষুধটি একটি নতুন ফর্মুলায় তৈরি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ডোজে এই ট্যাবলেট সেবন করলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন থেমে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
জ়ানুব্রুটিনিব: এক নতুন আশার আলো
অনেক বছর ধরে রক্তের ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি এবং মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির মতো পদ্ধতিগুলো ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় খাওয়ার ওষুধের তেমন প্রচলন ছিল না। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালস এই অভাব পূরণ করে ‘জ়ানুব্রুটিনিব’ নামের একটি ট্যাবলেট বাজারে আনছে, যা ‘ব্রুকিনসা’ ব্র্যান্ড নামে বিক্রি হবে।
এই ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দীর্ঘ সময় ধরে চলছিল এবং এর ফলাফল আশাব্যঞ্জক বলে দাবি করা হয়েছে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ওপর এর প্রয়োগে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। ট্রায়ালের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থা ওষুধটির উৎপাদন ও বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।
কিভাবে কাজ করবে এই ওষুধ?

ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া হলো এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকার ক্যান্সার। অস্থিমজ্জার স্টেম কোষ থেকে রক্তকণিকা তৈরি হয়। যখন এই কোষগুলোর অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটে, তখন তা ক্যান্সারের রূপ নেয়। মায়েলয়েড কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ক্যান্সার কোষে রূপান্তরিত হয়। এই মায়েলয়েড কোষ থেকেই লোহিত কণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা তৈরি হয়। ফলে, মায়েলয়েড কোষ যদি লাগামছাড়াভাবে বিভাজিত হতে থাকে, তাহলে রক্ত কণিকা তৈরির প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়।
শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে এবং অস্থিমজ্জায় জমা হয়, যা রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষকদের দাবি, নতুন এই ওষুধটি ক্যান্সার কোষের এই বিস্তারকে ঠেকাতে সক্ষম হবে।
দাম কত হতে পারে?
দেশের বাজারে ‘জ়ানুব্রুটিনিব’-এর এক বাক্সের দাম ২০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে। কোন কোম্পানি ওষুধটি বিক্রি করবে তার ওপর নির্ভর করে এই দাম পরিবর্তিত হবে। একটি বাক্সে ৮০ মিলিগ্রাম ডোজের প্রায় ১২০টি ট্যাবলেট থাকবে।
অনকোলজিস্ট শুভদীপ চক্রবর্তী এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, সঠিক সময়ে রোগ চিহ্নিত করতে পারলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে।
তার মতে, ক্যান্সার প্রায়শই এতটাই দেরিতে ধরা পড়ে যে তখন চিকিৎসাতেও তেমন কাজ হয় না। BCR-ABL জিনে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলেই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। নতুন এই ওষুধ ক্যান্সার কোষ নির্মূল করতে কতটা কার্যকরী হবে, তা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই বোঝা যাবে।