রক্তে শর্করার মাত্রা ডায়াবেটিসের লক্ষণ শনাক্তকরণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে শক্তির সরবরাহের জন্য রক্তে শর্করার প্রয়োজন হলেও, যদি তা খুব বেশি (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) বা খুব কম (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) হয়, তা হলে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। শর্করার সঠিক মাত্রা জানলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হতে পারে।
রক্তে শর্করার পরিমাপ পদ্ধতি

রক্তে শর্করার মাত্রা দুটি প্রধান পরীক্ষা দিয়ে পরিমাপ করা হয়:
১. ফাস্টিং ব্লাড সুগার (এফবিএস): এই পরীক্ষা কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা উপবাস করার পর রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করে। এটি জানায় যে উপবাস অবস্থায় আপনার শরীর কিভাবে গ্লুকোজ ভেঙে নেয়। ২. র্যান্ডম ব্লাড সুগার (আরবিএস): এই পরীক্ষা কোনও নির্দিষ্ট সময়ের উপর ভিত্তি করে রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করে। এটি শর্করার মাত্রার ওঠানামা এবং হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা
বয়সের ভিত্তিতে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা পরিবর্তিত হতে পারে। নিচে বয়স অনুসারে ফাস্টিং ও র্যান্ডম ব্লাড সুগারের আদর্শ মাত্রা দেওয়া হলো:
শিশু বা ছোট শিশু (০-৩ বছর)
৬০-১১০ : ফাস্টিং ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)
৬০-১৮০ : র্যান্ডম ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)
শিশু (৩-১২ বছর)
৭০-১৪০ : ফাস্টিং ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)
৭০-১৮০ : র্যান্ডম ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)
কিশোর (১৩-১৮ বছর)
৭০-১৪০ : ফাস্টিং ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)
৭০-১৮০ : র্যান্ডম ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)
প্রাপ্তবয়স্ক (১৯+ বছর)
৭০-১৩০ : ফাস্টিং ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)
৭০-১৮০ : র্যান্ডম ব্লাড সুগার লেভেল (mg/dL)
রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করার কারণ

রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে পারে বিভিন্ন কারণে, যার মধ্যে রয়েছে:
- বয়স
- খাদ্য
- শারীরিক কার্যকলাপ
- ওষুধ
- চিকিৎসা অবস্থা
- হাইপারগ্লাইসেমিয়া (হাই ব্লাড সুগার) এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়া (লো ব্লাড সুগার)
- হাইপারগ্লাইসেমিয়া: যদি আপনার ফাস্টিং ব্লাড সুগার ১৩০ mg/dL এর উপরে এবং র্যান্ডম ব্লাড সুগার ১৮০ mg/dL এর উপরে থাকে, তবে আপনি প্রি-ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া: যদি ফাস্টিং ব্লাড সুগার ৭০ mg/dL এর কম এবং র্যান্ডম ব্লাড সুগার ৬০ mg/dL এর কম হয়, তাহলে আপনি হাইপোগ্লাইসেমিয়া অবস্থায় আছেন। এতে মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, কিংবা খিঁচুনি হতে পারে।
রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা বয়স, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যকলাপ এবং অন্যান্য পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে। নিয়মিত শর্করার পরীক্ষা এবং সচেতনতা রক্ষা করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তাই, আপনি যদি দীর্ঘস্থায়ী শর্করার পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।