আলকুশির বীজের উপকারিতা, Benefits of Alkushi beej or Kaunch beej in Bengali

আলকুশির বীজের উপকারিতা

“আলকুশী মালা গাঁথে
পাশে প্রিয়া ভোগে বাতে,”

কবি নজরুল ইসলামের লেখা ‘গান ধরে ঘটোৎকচ’ কবিতার এই পংক্তি হয়তো অনেকেই পড়েছেন। এখানে কবি আলকুশীর কথা উল্লেখ করেছেন। কি এই অলকুশী ? যারা এখনো এর সম্পর্কে জানেন না তারা আজকের এই প্রতিবেদনে অলকুশি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

আলকুশি গাছের বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস, Scientific classification of Alkushi plants :

  • জগৎ: Plantae
  • বিভাগ: Magnoliophyta
  • শ্রেণী: Magnoliopsida
  • বর্গ: Fabales
  • পরিবার: Fabaceae
  • উপপরিবার: Faboideae
  • গোত্র: Phaseoleae
  • গণ: Mucuna
  • প্রজাতি: M. pruriens
  • আলকুশির বৈজ্ঞানিক নাম: মুকুনা পুরিয়েন্স।

আলকুশি বা বিলাই খামচি গাছের বিবরণ, Description of Alkushi tree :

আলকুশী গাছ

আলকুশি বা বিলাই খামচি গাছগুলো অনেকটা সিমগাছের মতো দেখতে হয়। এটি মূলত একটি গুল্ম জাতীয় গাছ। এই গাছে ছোট ছোট মোমদ্বারা আবৃত ফল হয়, যার ভেতরে ৪ থেকে ৬ টা বীজ থাকে।

প্রতিটি বীজের ওজন হয় ৫৫ থেকে ৮৫ গ্রাম। বীজগুলো কিছুটা চেপ্টা, ঈষৎ পীতবর্ণ এবং এগুলোর মুখ কৃষ্ণবর্ণ।

আলকুশি বা বিলাই খামচি গাছগুলোর পাতা ৮ থেকে ১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়, পাশাপাশি পাতাগুলো বেশ মসৃণ হয়। এই গাছে প্রায় সারাবছরই পর্যায়ক্রমে ফুল ও ফল পাওয়া যায়।

এই গাছের ফুলের পাপড়িগুলি গাঢ় বেগুনি রঙের হয় এবং ফুলের মাথার ছোট সাদা অংশটি ইঁদুরের দাঁতের মতো বেরিয়ে আসে, পরাগায়নের অপেক্ষায়।

আলকুশির বীজগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম দ্বারা আবৃত থাকে, যা ত্বকের সংস্পর্শে এলে চুলকানি সৃষ্টি করে।

আলকুশির উপকারিতা, Benefits of Alkushi beej or Kaunch beej :

আলকুশির উপকারিতা

দেখে নিন আলকুশি আমাদের কি কি উপকার করে:

১) কোন পোকা মাকড়ের কামড়ে বা বিছের দংশনে আলকুশার বীজের গুঁড়া লাগালে ব্যথা উপশম হয়।

২) আলকুশির মূলের রস এক চামচ করে একমাস খেলে আমাশয় রোগ সারে।

৩) কখনো ফোঁড়া হলে সেই অংশে আলকুশির পাতার রস লাগিয়ে দিলে অচিরেই সেটি ফেটে যায়।

৪) আলকিশির বীজ চিনি ও দুধসহ সেদ্ধ করে খেলে বাত এর সমস্যা উপশম হয়, শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়, পুরুষদের শুক্র বৃদ্ধি হয় এবং স্নায়বিক দুর্বলতা দূর করে।

৫) আলকুশির শিকড়ের রস সেবন করলে জ্বর, সর্দি-কাশি ভালো করে।

৬) আলকুশির শিকড় মূত্রবর্ধক ও মূত্রযন্ত্রের রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৭) আলকুশির কাণ্ডের রস চোখের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও ফলপ্রসূ।

৮) আলকুশির শিকড়ের রস কোনো জীবজন্তুর গায়ে হওয়া ঘায়ে লাগালে ক্ষত দ্রুত সেরে যায়।

৯) আলকুশি বীজ খেলে প্রোল্যাকটিন কমতে পারে অতএব এটি মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে সাহায্য করে।

১০) আলকুশি বীজ হালকা গুড়া করে মধু দিয়ে খেলে পেটব্যথা জনিত সমস্যা বা কলেরা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

আলকুশি পাউডার কেন খাবেন? Why we should eat Alkushi powder?

আলকুশি একটি ২০০০ বছরের পুরানো ভেষজ যা আয়ুর্বেদে আশ্চর্যজনক ঔষধি গুণাবলীর প্রমাণিত। আলকুশি মসলা হিসেবে খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে।

জেনে নিন প্রাকৃতিক আলকুশা পাউডার কেন খাবেন :

  •  শারীরিক শক্তি ও সহনশীলতা বাড়ায়। 
  • দুর্বলতা এবং দ্রুতপতনের ক্ষেত্রেও আলকুশী সেবন একটি কার্যকর সমাধান।
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি বীর্য ঘন করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
  • পারকিনসন রোগের জন্য আলকুশি পাউডার কার্যকর। এটি মনস্তাত্ত্বিক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
  • আলকুশি পাউডার বাতের ব্যথা, জ্বরজনিত কাশি এবং বুকে জমে থাকা শ্লেষ্মা উপশম করে।
  • আলকুশি পাউডার দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে। পাশাপাশি আমাশয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর।
আলকুশি কেন খাবেন?

প্রাকৃতিক আলকুশি পাউডার খাওয়ার জন্য সঠিক এবং সহজ নিয়ম, Proper and simple rules to consume natural Alkushi powder :

সকালের নাস্তা বা সন্ধ্যার পর প্রিমিয়াম মিল্কে 1 কাপ কুসুম গরম জল বা 2 চামচ আলকুশি পাউডার মিশিয়ে পান করুন। চিনির পরিবর্তে কাঁচা মধু ব্যবহার করুন।

আলকুশি কখন খেতে হয়? When to eat alkushi?

সকালে/রাতে খাবার পর এক গ্লাস হালকা গরম দুধ অথবা জলের সাথে এক চামচ আলকুশী মিলিয়ে খাওয়া যায়।

আলকুশি পাউডার এর কাজ কি? Function of Alkushi powder :

 নানাবিধ অসুখ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য আলকুশি ব্যবহার হয়। এই বীজের পাউডার একটি প্রাকৃতিক শক্তির উৎস, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।

আলকুশির শোধিত বীজের পাউডার দেহের পুষ্টিহীনতা পূরণ করতে সাহায্য করে এবং দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব দূর করে।

আলকুশি বীজের অপকারিতা, Bad effects of Alkushi seeds :

যেকোনো খাবার সামঞ্জস্য বজায় রেখে পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত বা অতিমাত্রায় খেলে উপকারী উপাদানের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু অপকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আলকুশি বীজের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-

  • অতিমাত্রায় আলকুশি বীজ খেলে যে সমস্যাগুলি প্রাথমিকভাবে হতে পারে, সেগুলি হল : বমি বমি ভাব হওয়া, ত্বকের চুলকানি জনিত সমস্যা এবং জলবাহিত বা ডায়রিয়া রোগ।
  •  আলকুশি বীজে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। তাই অতিমাত্রায় এটি খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • আলকুশি বীজে রয়েছে অক্সালেট, যা অতিমাত্রায় খেলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে আলকুশি বীজ খেলে পাকস্থলী জনিত সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • অধিক পরিমাণে আলকুশি খেলে হ্যালুসিনেশন এবং সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।

উপরোক্ত সমস্যাগুলো যদি আপনার শরীরে দেখা যায় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

আলকুশি সেবনের ক্ষেত্রে সতর্কতা, Precautions while consuming Alkushi :

আলকুশি বীজ সেবনের ক্ষেত্রে কিছু সঠিক নিয়মাবলী রয়েছে, যেগুলো অবশ্যই জেনে রাখা উচিত। সঠিক সময় এবং সঠিক পরিমাপ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করে আলকুশি বীজ খাওয়া শ্রেয়, নয়তো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টি আলকুশি বীজ খাওয়া যেতে পারে, এর বেশি খাওয়া উচিত নয়; অর্থাৎ এক চা চামচ এর চেয়ে বেশি বীজের গুঁড়ো খাওয়া ঠিক হবে না।
  • আপনার শরীরে যদি কোন খারাপ বাচন শক্তি বিদ্যমান থাকে তবে আলকুশি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যাদের নিউরোপ্যাথি এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের চিকিৎসা অবস্থায় রয়েছেন তাদের অবশ্যই এই বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আলকুশি বীজের সেবন করতে তা চাইলে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।
  •   ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে এবং গর্ভাবস্থায় আলকুশি সেবন করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাওয়া উচিত হবে। আলকুশি বীজে জরায়ু উদ্দীপকের প্রভাব রয়েছে যার ফলে জরায়ু ফেটে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলকুশি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

আলকুশি বীজের গুঁড়ো কোথায় পাওয়া যায়? From Where we can get Alkushi seeds?

আলকুশি বীজের গুঁড়ো চাইলে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা যায়। এছাড়াও কেউ চাইলে এটি অনলাইন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিনে নিতে পারেন।

তবে কেউ যদি প্রাকৃতিকভাবে গুঁড়ো তৈরি করতে চায় তাহলে আলকুশি বীজগুলোকে প্রথমে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই বীজগুলো গরুর খাঁটি দুধে ভালোভাবে সিদ্ধ করে এগুলোর চামড়া ছড়িয়ে নিতে হবে। তারপর বীজগুলো ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিন।

শেষ কথা, Conclusion :

আলকুশি গাছ এর বিবরণ সহ বীজের ব্যবহার সহ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আজকের এই প্রতিবেদনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদন থেকে আপনারা আলকুসি সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছেন।

Frequently Asked Questions :

আলকুশির বৈজ্ঞানিক নাম কি ?

মুকুনা পুরিয়েন্স।

আলকুশি বীজের গুঁড়ো কোথায় পাওয়া যায়?

আলকুশি বীজের গুঁড়ো চাইলে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা যায়। এছাড়াও কেউ চাইলে এটি অনলাইন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিনে নিতে পারেন।

আলকুশি পাউডার এর কাজ কি?

নানাবিধ অসুখ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য আলকুশি পাউডার ব্যবহার হয়। এই বীজের পাউডার একটি প্রাকৃতিক শক্তির উৎস, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts