কালিজিরা তেলের উপকারিতা, Benefits of Black Cumin oil in Bengali

কালিজিরা তেলের উপকারিতা

মশলা হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি কালোজিরার ব্যবহার আয়ুর্বেদীয় , ইউনানী, কবিরাজী চিকিৎসায়ও রয়েছে। কালোজিরার মধ্যে লুকিয়ে হাজারো রহস্যময় গুণাবলী, কালোজিরার বীজ থেকে তেলও পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। চলুন আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক কালোজিরার তেলের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।

কালোজিরা তেলে উপস্থিত উপকারি উপাদান, Beneficial Ingredients in Black Cumin Oil :

কালোজিরা তেলে উপস্থিত উপকারি উপাদান

কালিজিরার তেলে প্রচুর পরিমাণে উপযোগী উপাদান বিদ্যমান। এতে আছে

  • প্রায় ২১ শতাংশ আমিষ,
  • ৩৮ শতাংশ শর্করা
  •  ৩৫ শতাংশ ভেষজ তেল ও চর্বি।

এছাড়াও কালিজিরার অন্যতম উপাদানগুলোরর মধ্যে রয়েছে

  •  নাইজেলোন,
  • থাইমোকিনোন ও
  • স্থায়ী তেল।

এতে আরও আছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসহ নানা উপাদান। এসবের পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে

  • লিনোলিক এসিড,
  • অলিক এসিড,
  • ক্যালসিয়াম,
  •  পটাশিয়াম,
  •  আয়রন,
  • জিংক,
  • ম্যাগনেশিয়াম,
  •  সেলেনিয়াম,
  • ভিটামিন-এ,
  •  ভিটামিন-বি,
  • ভিটামিন-বি২,
  •  নিয়াসিন ও
  •  ভিটামিন-সি।

এই তেলের মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট সহ জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদানসমূহ। কালোজিরার তেলে রয়েছে :

  •  ক্যন্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হর্মোন,
  • প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান,
  • পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।

কালোজিরার তেলের উপকারিতা, Benefits of black cumin oil :

কালোজিরার তেলের উপকারিতা

দেখে নিন কালোজিরার তেল ব্যবহার করলে কি কি উপকার পাওয়া যায় :

  •  সর্দি কাশির মত সমস্যা হলে গলায় ও বুকে কালোজিরার তেল মালিশ করলে অনেক আরাম পাওয়া যায়, পাশাপাশি তেলের প্রভাবে কফ গলে বেরিয়ে যায়।
  • কালো জিরার মধ্যে অ্যালার্জি দূর করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস এর জন্য একটি কার্যকর চিকিৎসা হিসাবে বিবেচিত হয়। হালকা থেকে মাঝারি এবং গুরুতর অ্যালার্জিক রাইনাইটিস চিকিৎসা করার জন্য অনেকেই তাদের নাকে কালোজিরার তেল লাগিয়ে থাকে।
  • যাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা রয়েছে তারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোজ আধা চা চামচ কালোজিরার তেল গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে পান করতে পারেন।
  • কিডনিতে পাথর একটি অতি পরিচিত সমস্যা। অনেকেরই এই সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে আধা চা চামচ কালোজিরা তেলের সঙ্গে দুই চা চামচ মধু ও গরম জল খেতে পারেন, এতে কিডনির ব্যথা, পাথর এবং সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়া এবং দুর্বল দাঁতের যত্ন নিতে বহুকাল ধরে কালোজিরা ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি মাড়িকে শক্তিশালী করতে দিনে দুইবার কালোজিরা তেল দিয়ে দাঁত ম্যাসাজ করতে পারেন।
  • বর্তমান সময়ের ব্যস্ত জীবনে কাজের চাপ তথা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টেনশন করা ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে সাধারণ শহুরে সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো মাথা ব্যথা। তবে মাথা ব্যথার ওষুধ খাওয়া খুব একটা ভালো নয়, বরং এর পরিবর্তে কপালে খানিকটা কালোজিরার তেল ঘষুন, একটু বিশ্রাম করুন এবং আপনার মাথা ব্যথা দূর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। প্রাকৃতিকভাবে ঘরোয়া প্রতিকারই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।
  •  এক মুঠো কালোজিরা নিয়ে সরিষার তেল দিয়ে ভালো করে গরম করুন। তেলে ধোঁয়া উঠতে শুরু করলে আঁচ থেকে নামিয়ে খানিকটা ঠান্ডা করুন। এই তেল আপনার শরীরের যেসব জয়েন্টে ব্যথা হচ্ছে সেখানে মালিশ করুন। হালকা হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
  • শুষ্ক ত্বকের জন্য কালোজিরার গুঁড়া ও কালোজিরার তেলের সাথে তিলের তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
  • গবেষণায় দেখা গেছে যে, কালোজিরার তেল মাখলে ত্বকে আর্দ্রতা আসে ও কিছু চর্মরোগ (যেমন- একজিমা) প্রশমিত হয়।
  • বাতের ব্যথা হলে সেখানে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে কালোজিরার তেল মালিশ করতে হবে।
  • ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ব্রণ সারাতেও কালোজিরার তেল প্রয়োগ করতে পারেন।
  • এক চা-চামচ কালোজিরার তেল ও সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ ধরে খেতে হবে। তাহলে গ্যাস্ট্রিক বা আমাশয়ের জন্য আর কষ্ট পেতে হবে না।
  • কালোজিরার থেকে যে তেল বের করা হয় তা আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘ মেয়াদী রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা কমাতে বেশ সাহায্য করে।
  • অর্শ রোগ নিরাময় করতে এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল একসাথে প্রতিদিন খালি পেটে সেবন করতে পারেন, এভাবে ৩/৪ সপ্তাহ খেতে হবে।
  • কিছু গবেষণা অনুসারে, কালোজিরার তেল সেবন করলে অনুর্বর পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়তে পারে।

চুলের যত্নে কালোজিরা তেলের ব্যবহার, Uses of black cumin oil in hair care :

চুলের যত্নে কালোজিরা তেলের ব্যবহার

ঘন-কালো চুল এবং উজ্জ্বল ত্বক পেতে অনেকেই কালোজিরা তেল ব্যবহার করে থাকেন। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রতিদিন কালোজিরা তেল খেলে ত্বক হবে উজ্জ্বল, তবে জেনে রাখুন ত্বকের যত্নের পাশাপাশি তেলের প্রভাবে পাবেন ঘন চুল।

চুল পড়া কমাতে কার্যকরী এই কালোজিরা তেল। প্রতিদিন হাফ চা-চামচ কালোজিরা তেল সেবন করে কিছুদিনের মধ্যে নিজেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

বহু প্রাচীন কাল থেকেই কালোজিরার তেল বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতায় ব্যবহার করা হচ্ছে, পাশাপশি রূপচর্চায় এর ব্যবহার হয়ে আসছে। এই তেলে বিদ্যমান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এছাড়াও কালোজিরার তেলে থাকা লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক ইত্যাদি চুলের যত্নে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

চলুন জেনে নেয়া যাক চুলের যত্নে এর ব্যবহার-

  • চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে।
  • চুলের ভেঙে যাওয়া কম করতে সাহায্য করে।
  • চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং চুল ঝলমলে রাখতে সাহায্য করে।
  • চুলের অকালে পেকে যাওয়ার সমস্যা রোধ করে।
  • চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যার ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

চুলের যত্নে কালোজিরা তেলের ব্যবহার বিধি :

স্ক্যাল্পে কালোজিরা তেল নিয়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালো ভাবে তেল লাগিয়ে নিন।

অধিক সুফল পেতে হলে এই পদ্ধতি সপ্তাহে ৩/৪ দিন ব্যবহার করুন। এভাবে করলে চুল পড়া কমে যাবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

 প্রতিদিন সকালে ১ চা চামচ কালোজিরা তেল এর সাথে ১ চা চামচ মধু খেলে চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।

কালোজিরার তেল নিয়ে সতর্কতা, Precautions with black cumin oil :

কালোজিরার তেল নিয়ে সতর্কতা

কালোজিরার তেল ব্যবহার নিরাপদ হলেও কিছু লোকের ক্ষেত্রে এটা ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। বিশেষ করে কোনো মহিলা গর্ভাবস্থায় এবং দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করানো উচিত নয়। তবে বাহ্যিক ভাবে অর্থাৎ তেল মালিশ করার কাজে ব্যবহার করা যাবে।

যারা অন্য রোগের ওষুধ সেবন করে থাকেন তাদের সর্তক থাকা জরুরি কারণ, এই তেল কিছু ওষুধের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া করতে পারে, যেমন- বিটা ব্লকার্স। তাই কোনো ব্যক্তি ওষুধের সেবন করে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেই কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত।

অন্যদিকে কিডনির জন্য এই তেল ভালো হলেও, কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে তেল খাওয়া উচিত নয়। এর কারণ এই তেল ব্যবহারে কিডনি ফেইলিউরের মতো ঘটনা ঘটেছে।

অনেকের ক্ষেত্রে এই তেল ব্যবহারে কিছু মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন- জ্বালাপোড়া বা চুলকানি (যখন ত্বকে ব্যবহার করা হয়), কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি, বমিভাব ও পেটফাঁপা ইত্যাদি। এই ধরনের সমস্যা হলে কালোজিরা তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।

শেষ কথা, Conclusion :

কালোজিরার ব্যবহার তো রোজ রান্নায় হচ্ছে, তাছাড়াও বিভিন্ন ভাবে এর সেবন আমরা করে থাকি। তবে যারা এখনো কালোজিরার তেলের ব্যবহার বিধি জানতেন না বা এর উপকারিতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না তারা আজ থেকেই এর ব্যবহার শুরু করে দেখতে পারেন।

Frequently Asked Questions :

কালোজিরার তেল কিভাবে খাবো?

এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা চামচ কালোজিরার তেল সহ প্রতিদিন খালি পেটে ৩/৪ সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

কালোজিরার তেল মুখে দিলে কি হয়?

কালোজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক ইত্যাদি, যা ত্বকের ন্যাচারাল উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

কালোজিরার তেল কাদের খাওয়া উচিত নয়?

আপনার যদি রক্তপাতের ব্যাধি থাকে বা রক্ত ​​জমাট বাঁধাকে প্রভাবিত করে এমন ওষুধ সেবন করলে কালো বীজের তেল এড়িয়ে চলুন। উপরন্তু, একটি নির্ধারিত অস্ত্রোপচারের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগে কালো বীজের তেল গ্রহণ বন্ধ করুন।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts