দুধ এবং কিসমিস দুইটি উপাদানেরই পুষ্টিমান প্রচুর। স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে পরিচিত এই খাবারগুলো একসাথে খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা দুধ ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
কিসমিসের পুষ্টিগুণ, Nutritional value of raisins :
কিসমিস পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে থাকে শক্তি, শর্করা, ফাইবার, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন।
এছাড়াও থাকে ভিটামিন, যথা থায়ামিন (বি১), রিবোফ্লাভিন (বি২), নায়াসিন (বি৩), প্যানটোথেনিক, অ্যাসিড (বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (বি৯), কোলিন, ভিটামিন C, ভিটামিন E, ভিটামিন K।
এসব ছাড়াও কিসমিসে থাকে খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক ইত্যাদি।
কিসমিসের স্বাস্থ্য উপকারিতা, Health Benefits of Raisins :
কিসমিসের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল :
- কিসমিস কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালো উৎস, যা শরীরকে শক্তি দেয়। কিসমিসে থাকে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ যা শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জি সরবরাহ করতে সক্ষম।
- কিসমিস আয়রনের একটি ভালো উৎস। কিসমিসে থাকে প্রচুর পরিমাণ লৌহ উপাদান আছে যা আমাদের দেহের রক্ত শূন্যতা দূর করে।
- কিসমিসে থাকা ফাইবার আমাদের পরিপাক ক্রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
- কিসমিস খেলে আমাদের হাড় মজবুত থাকে, এটি হাড় ক্ষয় ও বাতের ব্যথাও দূর করে।
- কিসমিস ডায়াবেটিস ও অ্যালঝাইমার রোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে।
- কিসমিস ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- কিসমিসে পটাশিয়াম থাকে, যা আমাদের রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- কিসমিস খেলে এর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস, চোখের ছানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা রোধ করে।
- কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না।
- কিসমিস আমাদের দেহে ক্যান্সারের কোষ উৎপাদনে বাধা দেয়।
- রক্তের অ্যাসিডিটি কম করতে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করার ক্ষেত্রে কিসমিস কার্যকরী।
- কাটা, ছেঁড়া থেকে এবং ইনফেকশনের সমস্যা থেকে কিসমিসের বিভিন্ন উপাদান আমাদের রক্ষা করে।
- কিসমিস ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস, যা ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
দুধের পুষ্টিগুণ, Nutritional value of milk :
দুধ মানবদেহের পুষ্টির পাওয়ার হাউস হিসাবে কোন অংশে কম নয়। দুধ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে সক্ষম।
ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, ফসফরাস এবং প্রোটিনের প্রধান উপাদানগুলি দুধের মধ্যে রয়েছে। এইসব উপাদান আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়াগুলিতেও অবদান রাখে।
এই পুষ্টিকর উপাদানসমূহ দুধকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যৌগের এক সুবিধাজনক উৎস হিসেবে খাদ্যতালিকাগত পছন্দ করে তোলে।
দুধ খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of drinking milk :
দুধে এমন বহু উপাদান থাকে যা আমাদের প্রতিদিনের পুষ্টির দৈহিক চাহিদা মেটাতে সক্ষম। দুধ খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
- হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে :
দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দুধ খাওয়ার মাধ্যমে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে আমাদের দেহে শক্তিশালী হাড়ের বিকাশ ঘটে, ফলে অস্টিওপোরোসিসের মতো অবস্থার প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
তবে হাড় ছাড়াও, এই খনিজগুলি দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান রাখে। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন সেলুলার ফাংশনে সহায়তা করে।
- দুধের প্রোটিন :
প্রতিদিন দুধ খেলে দুধে থাকা উচ্চ-মানের প্রোটিনের উৎস পেশী বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে।
শারীরিক ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চর্বিহীন পেশী ভর তৈরি করতে এটি সহায়তা করে। দুধ শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করার ক্ষেত্রে খাদ্যের জন্য একটি অমূল্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত।
- হাইড্রেশন বজায় রাখে :
দুধে থাকা ইলেক্ট্রোলাইট আমাদের দেহে হাইড্রেটিং পানীয় হিসাবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন দুধ খাওয়ার ফলে দেহে তরল জাতীয় খাবারের প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়।
দুধ ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of consuming milk and raisins together :
দুধ ও কিসমিসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে হয়তো আপনারা অনুমান করতে পারছেন যে এই দুটি জিনিস একসাথে সেবন করলে কতটা দৈহিক উপকার পাওয়া যেতে পারে।
দুধ ও কিসমিস একসাথে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হল :
দুধ ও কিসমিস পুরুষের ফার্টিলিটি বাড়ায় :
বর্তমান সময়ে পুরুষ মানুষের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার শেষ নেই। পুরুষ মানুষ বাইরের খাবার প্রায় নিয়মিত খেয়ে যান। এছাড়া অনেকের এক্সারসাইজ করারও অভ্যাস নেই।
এইসব কারণেই পুরুষ মানুষের ফার্টিলিটি কম হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দুধে কিশমিশ মিশিয়ে খেলে উক্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাই এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে যে দুধ ও কিশমিশে থাকা নানা পুষ্টিকর উপাদান পুরুষ মানুষের শরীর ভালো রাখতে পারে। এমনকী পুরুষের স্পার্ম কাউন্টও অনেকটাই বৃদ্ধি করে দিতে পারে।
তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার যে দুধ ও কিসমিসের সেবন ফার্টিলিটি বাড়ায়। রোজ দুধে কিশমিশ মিশিয়ে খেতে পারেন।
দুধে কিশমিশ মিশিয়ে খেলে রক্তচাপ কমে :
রক্তচাপ বা ব্লাডপ্রেশারের সমস্যা এখন প্রায় ঘরে ঘরে রয়েছে। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে দুধ ও কিশমিশ এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
কিসমিস ও দুধে সোডিয়ামের পরিমাণ পর্যাপ্ত থাকায় ও বিশেষ কিছু খনিজ থাকায় তা রক্তচাপ কম করে দিতে পারে। পাশাপাশি দুধ দেহে তরলের মাত্র বজায় রাখতে সহায়ক।
তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখা খুবই দরকার যে, দুধে কিশমিশ মিশিয়ে খেলে রক্তচাপ কমে।
দুধ দিয়ে কিশমিশ খেলে ক্যানাসারের আশঙ্কা কমে :
দুধ ও কিসমিস, এই দুই খাবারে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীর সুস্থ করে তুলতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এই দুটি উপাদান আমাদের শরীর থেকে দূষিত ও ক্ষতিকারক পদার্থকে বের করে দিতে পারে, এরমধ্যে থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
তাই এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে যে দুধ দিয়ে কিশমিশ খেলে ক্যানাসারের আশঙ্কা কমে যায়।
দুধ ও কিশমিশ রক্তল্পতা ও কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করে :
কারও যদি রক্তল্পতা ও কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থাকে তবে এর থেকে মুক্তি পেতে গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে নিন কিশমিশ, যা একদম ম্যাজিক বা মন্ত্রের মত কাজ করবে ৷
কিশমিশ ও দুধ একসাথে সেবন করা শরীরের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী ৷ এর কারণ হল কিশমিশে তন্তু জাতীয় খাবার প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে৷
কিশমিশ ও দুধ পান করলে চোখ ভালো থাকে :
কিশমিশ ও দুধ একসাথে সেবন করা চোখের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ভাল। এই দুটি উপাদান পলোফেলেনিক ফাইটোনিউট্রিয়ন্স থাকে, যা একটি মজবুত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতই চোখের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে এবং আমাদের চোখ ভালো রাখে।
শেষ কথা, Conclusion :
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতেই পারছি যে কিশমিশ এবং দুধ একসাথে খেলে এটি বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করতে পারে।
কিশমিশ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস, যা বিভিন্ন ক্ষতিকারক অণুর কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে শরীরকে সেরে উঠতে সাহায্য করে।
এছাড়াও দুধ ও কিসমিস পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস, যা রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।
Frequently Asked Questions :
কিশমিশ এবং দুধ একসাথে খাওয়া অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করতে পারে। কিশমিশ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস, যা ক্ষতিকারক অণুর কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এগুলি পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস, যা রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।
নিয়মিত রাতের বেলা কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন তাহলে আপনার হাঁটুর ব্যথা সহ অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা দূর হয়ে যাবে। কেননা কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। সবচেয়ে ভালো হয় কিসমিস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে। এতে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের যোগান দ্বিগুণ হবে।
দুধ ও কিসমিস আমাদের শরীরের দুর্বলতা কাটানোর মহা ওষুধ। এক গ্লাস দুধের সাথে কিসমিস এর পেস্ট মিশিয়ে নিতে হবে এবং সেবন করতে হবে। তাহলে আমাদের শরীরের জ্বালাপোড়া, হাত ও পায়ের জ্বালাপোড়া, প্রসাবের জ্বালাপোড়া ইত্যাদি আরো অনেক শরীরের সমস্যা দূর হয়ে যায়।