রক্তে এলার্জি দূর করার উপায়, Ways to eliminate blood allergies in Bengali

রক্তে এলার্জি দূর করার উপায়

এলার্জির সমস্যা খুব সাধারণ হলেও বেশ বিরক্তিকর। আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেরই কোনো না কোনোও সময় এলার্জির সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মকও হয়ে উঠতে পারে; বিশেষ করে যাদের রক্তে এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরো গুরুতর। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা রক্তে এলার্জি দূর করার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো অবলম্বন করলে খুব সহজেই এই সমস্যাটি থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

রক্তে এলার্জির লক্ষণসমূহ জেনে নিন, symptoms of blood allergy

আপনার রক্তে এলার্জি রয়েছে কিনা তা কিছু লক্ষণের মাধ্যমে জানতে পারবেন। নিম্ন বর্ণিত লক্ষণ সমূহ যদি প্রকাশ পায় তাহলে ধরে নিতে পারেন যে আপনার রক্তে এলার্জি রয়েছে। 

  • • নাক দিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি ঝরা।
  • • গলা চেপে আসা।
  • • তলপেটে ব্যথা হওয়া।
  • • শরীরের বিভিন্ন জায়গা চুলকানো।
  • • চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
  • • শরীর চাকা চাকা হয়ে যাওয়া।
  • • ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া।
  • • পেট কামড়ানো।
  • • বমি হওয়া।
  • • শরীরে র‍্যাশ ওঠা।
  • • অতিরিক্ত চুলকানির কারণে চামড়ার উপরের অংশ ছিলে যাওয়া।
  • • শ্বাস গ্রহণে কষ্ট হওয়া।
  • • বুকে অতিরিক্ত পরিমাণে চাপবোধ হওয়া।
  • • মুখ, ঠোট, জিহ্বা বা গলা ফুলে যাওয়া।
রক্তে এলার্জির লক্ষণসমূহ

কিসের প্রভাবে রক্তে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে জেনে নিন, What can cause blood allergy?

রক্তে এলার্জি মূলত বিভিন্ন বাহ্যিক বিষয়ের প্রভাবে সৃষ্টি হয়। কি কি বিষয়ের প্রভাবে প্রতিক্রিয়া স্বরূপ রক্তে এলার্জি সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্নভাবে এর লক্ষণ দেহে প্রকাশ পায়। সেই কারণগুলো হল :

  • ফুলের রেনু: বিভিন্ন ফুলের রেনু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এই ভেসে বেড়ানো ফুলের রেনুও শরীরে এলার্জি তৈরি করে।
  • ধুলাবালু : বাড়ি হোক কিংবা রাস্তা ঘাটে, সব জায়গায় কম বেশি ধুলাবালু দেখা যায়। এই ধুলাবালু এলার্জি সৃষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ। ধুলাবালু বাতাসের মাধ্যমে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে এলার্জি সৃষ্টি করে। ধুলাবালু শরীরে কোনোভাবে প্রবেশ করলে তখন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • পশম : বাড়িতে অনেকেই বিড়াল, কুকুর বা অন্যান্য পশু পোষেন। যে সকল পশু বাড়ির বিভিন্ন অংশে বিচরণ করে, এমনকি সোফা, বিছানা ইত্যাদিতেও শুয়ে বা বসে থাকে, তাদের শরীরে অনেক পশম ঝরে পড়ে, আর সেগুলো আমাদের শরীরে এলার্জির সৃষ্টি করে, ফলে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। 
  • খাবার থেকে এলার্জি : অনেকেই মনে করেন যে বেগুনে খেলে এলার্জি হয়। প্রকৃতপক্ষে বেগুনে কোনো এলার্জি থাকেনা তাই এলার্জির জন্য বেগুনকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। তবে বেগুন ছাড়াই এলার্জি জাতীয় অনেক খাবার আছে; যেমন চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস ইত্যাদি। এক কথায় যে সব খাবারে প্রচুর পরিমানে হাই প্রোটিন রয়েছে সেই খাবার গুলো এলার্জি বৃদ্ধি করে৷ বিভিন্ন ধরনের শুটকি মাছও এলার্জি বাড়াতে পারে, এছাড়াও হাস মুরগির ডিম, গরুর দুধ, বাদাম এগুলোতে প্রচুর পরিমান প্রোটিন রয়েছে যা এলার্জি বাড়াতে পারে। 
  • অ্যালার্জিযুক্ত ঔষধ: কিছু কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও এলার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কোনো ওষুধ খেয়ে এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সেটা আর না খাওয়াই ভালো। 
  • পোকামাকড়ের কামড়: পোকামাকড়ের কামড়ের কারণেও এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সেগুলো থেকে সর্বদা সাবধান থাকতে হবে।
কিসের প্রভাবে রক্তে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে

এলার্জি টেস্টের নাম, Name of allergy test

সাধারণত এলার্জি পরীক্ষা করার জন্য যে টেস্ট করানো হয় সেই টেস্টের নাম হচ্ছে IGE। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণত মানুষের শরীরে এলার্জির পরিমাণ কতটুকু সেটা বোঝা যায়। তাই যদি কেউ রক্তে এলার্জির পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাই তাদের এলার্জি সম্পর্কে জানতে হলে এই পরীক্ষা করাতে হবে। যারা এই পরীক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ভুল চিন্তাভাবনা রাখেন তাদেরকে বলব এটা একেবারে স্বাভাবিক একটি পরীক্ষা তাই এখানে কোন ধরনের ভুল করার অবকাশ নেই।

সাধারণত এলার্জি পরীক্ষা করার জন্য যে টেস্ট করানো হয় সেই টেস্টের নাম হচ্ছে IGE

এলার্জি রক্ত ​​পরীক্ষার ফলাফল কতদিন লাগে? How long it takes to get allergy report?

অ্যালার্জি রক্ত ​​​​পরীক্ষার ফলাফল 2 থেকে 21 দিনের মধ্যে লাগতে পারে।

এলার্জি হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না? Foods to avoid before allergy test

যখন লক্ষণগুলি গুরুতর হয়, তখন তাকে অনাফিল্যাক্সিস বলা হয়। খাদ্যে অসহিষ্ণুতা এবং খাদ্যে বিষাক্ততা পৃথক অবস্থা এবং সেগুলো ইমিউন প্রতিক্রিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয় না। সাধারণত গরুর দুধ, চিনাবাদাম, ডিম, শেলফিশ, মাছ, গাছ বাদাম, সয়া, গম, চাল এবং ফল এর দ্বারা খাদ্যে এলার্জি হতে পারে।

এলার্জি হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?

এলার্জি রক্ত ​​পরীক্ষার আগে খাওয়া যাবে কি? Can food be taken before allergy blood test?

পরীক্ষার জন্য রোজা রাখা বা বিশেষ ডায়েটে থাকা জরুরি নয় । পরীক্ষার দিন আপনি একটি পানীয় এবং স্ন্যাকস আনতে পারেন।

রক্তে এলার্জি দূর করার উপায়, Ways to eliminate blood allergies 

রক্তে এলার্জি দূর করার জন্য খাবার এবং জীবনযাপনে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। সেক্ষেত্রে যা যা করতে হবে সেগুলো হল :

• গ্রিন টি পান করুন:

রক্তে এলার্জির মাত্রা কম করার ক্ষেত্রে গ্রিন টি খুবই কার্যকরী। তাই নিয়মিত গ্রিন টি পান করতে পারেন।  

গ্রিন টি পান করুন:

• অধিক মশলা যুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন :

অত্যধিক মশলাযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে রক্তে এলার্জি বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই এলার্জি থেকে মুক্ত থাকতে হলে অধিক মশলা যুক্ত খাবার পরিহার করুন।

• স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান :

নিজেকে এলার্জি মুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করলে রক্তে এলার্জির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

• কাঁচা খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন:

খাবার কাঁচা গ্রহণ করলে রক্তে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে এমন সব খাবার গুলো কখনোই কাঁচা অথবা অল্প রান্না করে খাওয়া যাবে না।

• টক দই খেতে পারেন : 

টক দই রক্তে এলার্জির মাত্রা কম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই রক্তে এলার্জির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে টক দই খান।

টক দই খেতে পারেন

• ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন :

শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি থাকার কারণেও রক্তে এলার্জির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

• অতিরিক্ত লবণ পরিহার করুন:

অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তে এলার্জির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে কাঁচা লবণ এড়িয়ে চলুন। 

• ওমেগা – ৩ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত :

ওমেগা ৩ রক্তে এলার্জির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই ওমেগা ৩ সম্পন্ন খাবার খেতে পারেন। এতে খুব সহজে রক্তে এলার্জির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

ওমেগা - ৩ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত

• ফাস্টফুট পরিহার করুন:

ফাস্টফুট তৈরি করতে যে সকল উপাদান ব্যবহার হয় সেগুলোর অধিকাংশই এলার্জি উৎপন্নকারী। তাই রক্তে এলার্জির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফাস্টফুড পরিহার করতে হবে।

• স্যাতস্যতে পরিবেশ এড়িয়ে চলুন:

স্যাতস্যতে পরিবেশ এলার্জি বৃদ্ধি করতে পারে। তাই এলার্জি থেকে মুক্ত থাকতে এধরনের পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে।

• এলার্জি প্রতিরোধে কোয়ারসেটিন সমৃদ্ধ খাবার খান :

কোয়ারসেটিন হল এক ধরনের প্রাকৃতিক যৌগ, যা বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজিতে পাওয়া যায়। এই উপাদান প্রদাহ বিরোধী হিসেবে কাজ করে এবং আ্যন্টিহিষ্টামিন হিসেবেও উপকারী।  কোয়ারসেটিন সমৃদ্ধ কিছু খাবার হল আপেল, পেয়াজ ইত্যাদি, এই খাবার গুলো খেলে এলার্জি প্রতিরোধ হয়। এছাড়াও রয়েছে :

১) হলুদ এবং মধু :

হলুদ এলার্জি দূর করার জন্য দারুন কার্যকরী। এলার্জি প্রতিরোধে হলুদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে মধু। এরজন্য প্রথমে কাঁচা হলুদের রস বের করে তার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। 

 হলুদ এবং মধু

২) প্রোবায়োটিকস :

প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার এলার্জি দূর করে। যেমন কেফির, স্যুরক্রুট, এবং কিমচি, ওটমিল,  ইয়োগার্ট ইত্যাদি খাবার। এই খাবার গুলো এলার্জি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৩) আদা চা :

এলার্জি থেকে দূরে থাকতে আদা চা খেতে পারেন। আদার মধ্যে রয়েছে আ্যন্টিহিষ্টামিন বৈশিষ্ট্য, তাই এটি এলার্জি প্রতিরোধ করতে সক্ষম।  

৪) এলার্জি প্রতিরোধে আ্যলোভেরা জেল :

আ্যলোভেরা কমবেশি সবাই ব্যবহার করে থাকেন, তাই আশা করা যায় যে এটি সবার বাড়িতে উপস্থিত থাকবেই। এটি এলার্জি প্রতিরোধে ভাল কাজ করে। আ্যলোভেরা তে অ্যান্টি ইনফ্লেমটরি এবং ত্বক শীতলকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত আ্যলোভেরা জুস পান করলে এলার্জি সমস্যা দূর হয়। 

এলার্জি প্রতিরোধে আ্যলোভেরা জেল

৫) ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার খান :

ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রক্তের এলার্জি দূর করতেও সক্ষম। এটি একটি আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন C জাতীয় খাবারের তালিকায় রয়েছে বেল, ব্রকলি, আম, লেবু ইত্যাদি। 

রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ নিয়ে সাবধানতা, Caution with medicines that reduce blood allergies

রক্তে এলার্জি কমানোর উপরিউক্ত উপায় সমূহ অবলম্বন করার পরেও যদি কোনভাবেই এলার্জির মাত্রা কমানো সম্ভব না হয়, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, এবং রক্তে এলার্জির ঔষধ বা রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ খেতে হতে পারে। তবে মনে রাখবেন ভুলেও কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে ক্রয় করে রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ সেবন করা যাবেনা। আপনি যদি রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত খান সেক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই সব ধরনের জটিলতা এড়াতে অবশ্যই আপনাকে ঔষধ খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। 

রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ নিয়ে সাবধানতা

শেষ কথা, Conclusion 

এলার্জি একটি যন্ত্রনাদায়ক রোগ। উপরিউক্ত উপায়গুলোর মাধ্যমে এলার্জি প্রতিরোধ করা যায়৷ এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধও খেতে পারেন। কিন্তু এলার্জি প্রতিরোধে ওষুধ বা বিভিন্ন খাবার খাওয়ার চেয়ে উত্তম হচ্ছে এলার্জি যেন না হয় সেদিকে সতর্ক থাকা। তবে এলার্জি সমস্যা বেড়ে গেলে বিলম্ব না করে চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে।

Contents show

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts