ভারতসহ গোটা বিশ্বে ক্যানসার একটি মহামারির আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচ জন ক্যানসার আক্রান্তের মধ্যে তিন জনেরই মৃত্যু হয়।
দেশব্যাপী ক্যানসারের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং ২০২২ থেকে চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যা ৬৪.৭ থেকে বেড়ে প্রায় ১০৯.৬ জনে পৌঁছেছে।
এমনকি ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে, একটি সুখবরও রয়েছে—ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে কিছু সাধারণ খাবার।

ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন-এর একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পাঁচটি সাধারণ খাবার ক্যানসার রুখে দিতে সক্ষম। কী সেই খাবারগুলি? চলুন, দেখে নেওয়া যাক:
১. আপেল
আপেলে থাকে পলিফেনল নামক একটি যৌগ, যা ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে আপেলের ফ্লোরেটিন নামক পলিফেনল স্তন ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, এই যৌগটি ‘গ্লুকোজ ট্রান্সপোর্টার ২’ (GLUT2) নামক প্রোটিনকে প্রতিহত করে, যা কিছু ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজে কোষ বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত।
২. ব্রকোলি
ব্রকোলিতে থাকা সালফোরাফেন নামক যৌগটি ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। বিশেষত, স্তন ক্যানসার কোষের আকার এবং সংখ্যা কমাতে এটি কার্যকর। এছাড়া, ব্রকোলি খেলে কোলন বা রেকটাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। এই কারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

৩. গাজর
গাজর খাওয়ার ফলে পেটের ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার এবং ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা ধূমপান করেন কিন্তু গাজর খান না, তাঁদের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা তিন গুণ বেশি, যাঁরা গাজর খান।
৪. চর্বিযুক্ত মাছ
স্যামন, ম্যাকেরেল এবং অ্যাঙ্কোভিসের মতো চর্বিযুক্ত মাছগুলোতে ভিটামিন বি, পটাশিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে, বিশেষত এশীয় জনগণের মধ্যে। একটি ২০২২ সালের মেটা-অ্যানালাইসিস থেকে জানা গেছে, মাছ খাওয়ার ফলে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
৫. আঙুর

লাল আঙুরের খোসায় থাকে রেসভেরাট্রল নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। আঙুর এবং আঙুর বীজে থাকা ফ্ল্যাভোনল, ফিনোলিক অ্যাসিড, অ্যান্থোসায়ানিন (লাল ও বেগুনি আঙুরে), প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিন এবং ক্যাটেচিনস ক্যানসার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে রেসভেরাট্রল ক্যানসার থেরাপিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে।
ক্যানসার একটি ভয়াবহ রোগ হলেও, কিছু সাধারণ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আপেল, ব্রকোলি, গাজর, চর্বিযুক্ত মাছ এবং আঙুর—এই পাঁচটি খাবার রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখলে ক্যানসারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। তবে, ক্যানসারের প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত পরামর্শ নেওয়া উচিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।