কেমোথেরাপি চিকিৎসা, খরচ, পদ্ধতি, All details about chemotherapy in Bengali

কেমোথেরাপি চিকিৎসা, খরচ, পদ্ধতি

ক্যান্সার বা কর্কটরোগের চিকিৎসার একটি বিশেষ পদ্ধতি হল কেমোথেরাপি। এই প্রকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করার জন্য ক্যান্সাররোধী (অ্যান্টি-ক্যান্সার) এবং কর্কটরোগাক্রান্ত কোষের জন্য বিষাক্ত (সাইটোটক্সিক) ওষুধ রোগীর দেহে প্রবেশ করানো হয় শিরার মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে ৫০টিরও বেশি ধরনের রাসায়নিক চিকিৎসামূলক ওষুধ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু ওষুধ ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে তরল বা স্যালাইনের সাথে বা অন্য কোনভাবে সরাসরি রক্তের সাথে মিশিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। রক্তের সাথে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের ওইসব স্থানে পৌঁছে যায় যেখানে ক্যান্সার কোষ রয়েছে, তারপর ওষুধগুলো ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কেমোথেরাপি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

কেমোথেরাপি কি ? What is Chemotherapy?

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ক্যান্সার চিকিৎসার একটি পদ্ধতি হল কেমোথেরাপি। এই থেরাপির ব্যবহার করার সময় শরীরের বেশি মাত্রায় পুষ্টির প্রয়োজন হয়। তাই কোনো ক্যান্সার রোগীর কেমোথেরাপি চলাকালীন সঠিকভাবে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। সাধারণভাবে আমাদের দেহের সুস্থ কোষগুলি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বিভাজিত হয়। কোষ বিভাজন না হলে ভ্রূণ থেকে পূর্ণাঙ্গ মানবদেহের গঠন সম্পূর্ণ হতো না।

কেমোথেরাপি কি ?

আবার শরীরের কোনও অংশে ক্ষত তৈরি হলে তাও আবার স্বাভাবিক হয়ে যেত না। কিন্তু শরীরের কোষগুলো যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হতে থাকে তখন তা শরীরে লাম্প বা টিউমারের আকার নেয়। এই টিউমার সময়ের সাথে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। তাই সঠিক সময়ে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াকে বাধা না দিতে পারলে সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে যেতে থাকে। ক্যান্সারের প্রভাবে ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়, ফলে রোগীর মৃত্যু হয়।

মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার কোষের সৃষ্টি হতে পারে। ক্যান্সার দেহের কোন অংশে হয়েছে তা নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী অঙ্কোলজিস্টরা ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করে দেন। তবে যাদের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে প্রথমে টিউমার দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর প্রথমে অপারেশনের সাহায্যে টিউমারটিকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর প্রয়োজন বুঝে সেই অংশে কেমোথেরাপি ও রেডিও থেরাপি ইত্যাদি দেওয়া হয়। 

কেমোথেরাপি কীভাবে কাজ করে? How does chemotherapy work?

 কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধগুলোর সাহায্যে ক্যান্সার কোষগুলির ক্ষতি করা হয় যাতে সেগুলো আর নতুন করে বিভাজিত না হতে পারে। অন্যদিকে রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষগুলিকে সাধারণত পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে রেডিওথেরাপি নির্দিষ্ট একটি অংশেই কাজ করে। কিন্তু কেমোথেরাপির ওষুধ রক্ত প্রবাহে মিশে যায় এবং ক্যান্সারকোষগুলির ক্ষতি করতে থাকে। তাই কেমোথেরাপিকে বলা হয় সিস্টেমিক ট্রিটমেন্টও।

কেমোথেরাপি কীভাবে কাজ করে?

কেমোথেরাপির সাহায্যে সেই কোষগুলিও ধ্বংস হয় যেগুলি বিভাজিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কোষের বিভাজনের জন্য দায়ী কোষের কেন্দ্রের বিশেষ একটি অংশ কেমোথেরাপির মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। আবার কিছু ওষুধ কোষের বিভাজনের জন্য দায়ী জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। যে কোনও কোষের কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস নামে একটি অংশ থাকে যা কোষের নানারূপ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। নিউক্লিয়াসে যে ক্রোমোজোম থাকে তা জিন দ্বারা গঠিত হয়।

কোষ বিভাজনের সময় জিনকেও বিভাজিত হতে হয় বা জিনের প্রতিলিপি গঠনের প্রয়োজন পড়ে। কেমোথেরাপির মাধ্যমে কোষের নিউক্লিয়াসে থাকা জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

কেমোথেরাপিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, Side effects in chemotherapy

কেমোথেরাপিতে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যেমন , কেমোথেরাপির প্রভাবে চুল পড়ে যায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি চলাকালীন ইমিউনিটির সমস্যা হয় তাই রোগীর বার বার ঠান্ডা লেগে যায়। কেমোথেরাপি ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন-

  • অতিসার
  • বমি
  • ক্ষুধা ক্ষতি
  • রক্তক্ষরণ
  • মুখের আলসার ইত্যাদি।
কেমোথেরাপিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
Have problems. Serious girl leaning on knee while looking downwards

এছাড়া ত্বকেও নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়, হজমের গণ্ডগোল দেখা দেয়, তাছাড়া রক্তে অনুচক্রিকার ঘাটতি দেখা দেয় ইত্যাদি। তবে কেমোথেরাপি বন্ধ হয়ে গেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ধীরে ধীরে থেমে যায়। এজন্যই বিশেষজ্ঞরা কেমোথেরাপির সময়ে পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ করার কথা বলেন। স্বাস্থ্যকর খাবার সঠিক পরিমাণে খেলে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব হয়। দেখা যাক সেগুলি কী কী—

  • ওটমিল: বিভিন্ন ধরনের জরুরি পুষ্টি উপাদান থাকে ওটমিল-এ; যথা শর্করা, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই কেমোথেরাপি চলাকালীন নিয়মিত ওটমিল খাওয়া উচিত।
  • অ্যাভাকাডো: অ্যাভোকাডো সবুজ এবং ঘন শাঁসযুক্ত, এতে থাকে স্বাস্থ্যকর ননস্যাচুরেডেট ফ্যাট যা এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল)-এর মাত্রা কম করে দেয় ও ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তপ্রবাহ ভালোভাবে হয়।
  • ডিম: কেমোথেরাপির সময় অন্যান্য সব সমস্যার সাথে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয় ক্লান্তি। সেক্ষেত্রে সেদ্ধ করা ডিমের সাদা অংশ নিয়মিত খেতে পারেন। এতে শরীরে প্রোটিনের চাহিদা সঠিকভাবে বজায় থাকবে। এককথায় ডিম খেলে ক্লান্তি দূর হয়।
  • বাদাম এবং শুকনো ফল: স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় অবশ্যই রাখুন কাঠবাদাম এবং অন্যান্য ড্রাই ফ্রুটস। প্রতিদিন গোটা পাঁচ থেকে ছয়টি কাজু, আখরোট, আমন্ড, পেস্তা, খেজুর খেতে পারেন। এই ধরনের শুকনো ফলে থাকে উপকারী ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা কমায় ও দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
  • কুমড়ো বীজ: এতে থাকে উপকারী ফ্যাট, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন E এর মতো উপাদান যা শরীরের যেকোনও ধরনের প্রদাহজনিত সমস্যা প্রশমিত করে। তাই কেমোথেরাপির সময় খাবারের তালিকায় অবশ্যই কুমড়োবীজ রাখুন।
  • মাছ: মাছে থাকে ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন। তাই কেমো চলাকালীন, সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারদিন মাছ পাতে রাখতেই হবে।
  • বাড়িতে তৈরি স্মুদি: কেমো থেরাপি চলাকালীন ফলের রস খাওয়া খুব কার্যকরী। মরশুমি ফল, বাদাম ও দুধ দিয়ে স্মুদি তৈরি করেও খেতে পারেন। 
কুমড়ো বীজ

কেমোথেরাপির খরচ, cost of chemotherapy

কেমোথেরাপি ওষুধের ধরণের উপর নির্ভর করে খরচ বেশি ও কম হয়। ওষুধের ধরণ আপনার ক্যান্সারের ধরন এবং পর্যায়ের উপর কেমো থেরাপির খরচ নির্ভর করে। কেমোথেরাপির খরচ প্রভাবিত করার কারণগুলি

  • পদ্ধতির সামগ্রিক খরচ, রোগীর অবস্থা এবং পছন্দের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। এই কারণগুলির মধ্যে কয়েকটি হল:
  • ক্যান্সারের স্টেজ এবং ধরন
  • ক্যান্সারের অংশে অস্ত্রোপচার পরবর্তী কেমোথেরাপি / রেডিয়েশন থেরাপি।
  • চিকিৎসা চলাকালীন রোগের অবস্থা জানতে কোনো অতিরিক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।  রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, এমআরআই, সিটি, পিইটি বা আল্ট্রাসাউন্ডের মতো কয়েকটি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।
  • ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতালে একটি বর্ধিত অবস্থান।
কেমোথেরাপির খরচ

ভারতের বিভিন্ন শহরে কেমোথেরাপির খরচ ভিন্ন হয়। বলতে গেলে কেমোথেরাপির দাম শহর জুড়ে পরিবর্তিত হয়। ভারতের বিভিন্ন শহরে কেমোথেরাপির মূল্য প্রায় নিম্নরূপ :

  • নতুন দিল্লি: ৩৭,৫১৮ থেকে ৫৮৬৮২
  • গুরগাঁও: ৩৮৪৮০ থেকে ৫৭৭২০
  • নয়ডা ৩৬০৭৫ থেকে ৬০১২৫
  • চেন্নাই: ৩৮৪৮০ থেকে ৫৫৩১৫
  • মুম্বাই: ৩৯৪৪২ থেকে ৫৮৬৮২
  • বেঙ্গালুরু: ৩৭৫১৮ থেকে ৫৬০০০
  • কলকাতা: ৩৬০০০ থেকে ৫৫০০০
  • জয়পুর: ৩৫০০০ থেকে ৫৪০০০
  • মোহালি: ৩৫০০০ থেকে ৮২০০০
  • আহমেদাবাদ:৩৩০০০ থেকে ৫৪০০০
  • হায়দরাবাদ: ৩৮০০০ থেকে ৫৬০০০

শেষ কথা, Conclusion 

কেমোথেরাপি প্রক্রিয়া একটু জটিল। প্রথমত, কোনও শিরায় কেমোথেরাপির আগে একটি যন্ত্র অস্ত্রোপচার করে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এই ডিভাইসগুলি একটি ক্যাথেটার, পোর্ট বা পাম্প হতে পারে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কেমোথেরাপির পদ্ধতি এবং খরচ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এমন পোস্ট আরো পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts