আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়, How to control emotions in Bengali

আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, যা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে শারীরিক অসুস্থতা তেমন প্রভাবশালী হয় না। একইভাবে দেখতে গেলে কারোর মধ্যে নেতিবাচক আবেগের প্রখরতা থাকলে বিভিন্ন সময়ে আসা সমস্যাগুলো সমাধান করতে গিয়ে অনেক অসুবিধা আসে। কিন্তু যদি কেউ নিজের রাগ, দুঃখ, হতাশা, উদ্বিগ্নতা এড়িয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলে তবে তার জীবনে সমস্যা সহজে মিটে যায়। তাই আমাদের সকলেরই চেষ্টা করা উচিত যেন আমরা নিজের নেতিবাচক আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।

আবেগের একাধিক রূপ, Varieties of emotions 

মানুষ কখনো খুব খুশি হয়ে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে, আবার কখনো উওেজিত হয়, কখনো বা বিষন্ন মনে কিছু নিয়ে বিদ্বেষ পোষণ করে, আবার কখনো কিছু নিয়ে ক্ষুদ্ধ হয়। এই আনন্দ-বেদনার তথা বিভিন্ন রকম অনুভুতি প্রকাশের উপায়গুলোই হচ্ছে আবেগ। তবে আবেগের ভালো দিক মন্দ দিক দুটোই আছে।

ইতিবাচক আবেগOpens in a new tab. যেমন মানুষকে বিকাশিত করতে সাহায্য করে, তেমনি নেতিবাচক আবেগOpens in a new tab. মানুষকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে। এজন্যই নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন রয়েছে। ভাল মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করে নিজের পাওয়া না পাওয়াকে গুরুত্ব না দিয়ে যৌক্তিকভাবে নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করাই আবেগ নিয়ন্ত্রণ। তাই আমাদের প্রত্যেকের আবেগ সম্পর্কে সঠিক ধারনা রেখে নিজের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করা উচিত।

আবেগ কী? What is meant by emotion?

প্রচলিত মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলতে গেলে, আবেগ হল মানুষের মস্তিষ্কের সংকেত পদ্ধতি। আমাদের যদি কোনো কিছু ভালো না লাগে, তবে আমরা সেটা নিয়ে রেগে যাই, অথবা আমাদের মনে একটা ঘৃণার মনোভাবের সঞ্চার হয়। অপছন্দের কিছু ঘটলে মন খারাপ হয়। অন্যদিকে কোনো কিছু ভালো লাগলে আমরা আনন্দিত হই।

উক্ত সংকেতগুলো আমাদের মস্তিষ্ক আগে অনুধাবন করে। এরপর সংকেত পেয়ে আমরা নিজেদের যুক্তি, অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। সুতরাং, আবেগ অনুভব করার মধ্যে খারাপ কোনো কিছু নেই, বরং যদি এমন অনুভূতিগুলো না আসে, তবে বলতে হবে যে শারীরিক অথবা মানসিকভাবে সেই ব্যক্তি অসুস্থ।

আবেগ কী

তবে যখন আমাদের কোনো কিছু অপছন্দ হয় বা আমাদের ইচ্ছানুযায়ী কিছু না ঘটে তখন আমরা রেগে যাই, দুঃখ পাই, বা বিরক্ত হই, এমন পরিস্থিতিতে আমরা বিভিন্ন কিছু ভাবতে শুরু করি, সেই ভাবনাগুলোর বেশিরভাগই নেতিবাচক হয়, কোনো খারাপ সময়ে আমরা সহজে ভালো কিছু ভাবতে পারি না।

কিন্তু এইসব নেতিবাচক ভাবনা আমাদের মনে খারাপ প্রভাব ফেলে, যা অনেক সময় আমাদের ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে যায়, আবার এইসব চিন্তা ভাবনা আসার ফলে আমরা অনেক সময় বেশ কিছু সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পরি। তাই সকলেরই উচিত নিজের নেতিবাচক ভাবনাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা।

নেতিবাচক ভাবনা

নেতিবাচক আবেগ কেমন হয়, What is meant by negative emotion?

যেসব আবেগ বা মনোভাব নেতিবাচক হতে পারে তা হল ঘৃণা, রাগ, হিংসা এবং দুঃখ। তবে এই অনুভূতিগুলি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। কিন্তু এই অনুভূতি থেকেই নেতিবাচক চিন্তাধারার সঞ্চার হয়। নেতিবাচক আবেগগুলি জীবনের উৎসাহকে হ্রাস করতে পারে। তাই এর মোকাবেলা করতে হবে। 

নেতিবাচক আবেগ

ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে নেতিবাচক চিন্তা নিয়ন্ত্রণ, Think positive to avoid negativity 

কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমাদের মনে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা জেগে ওঠে; তখন ভয়, দুঃখ বা রাগ থেকে আমরা নানা রকম খারাপ চিন্তা করতে শুরু করে দেই। এইসব নেতিবাচক আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা কিছু ইতিবাচক চিন্তা করতে পারি যা আমাদের মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে। যদিও সবার ক্ষেত্রে উপযোগী নাও হতে পারে, তবুও কঠিন পরিস্থিতিতে নিম্নলিখিত ভাবে চিন্তা করা উচিত যাতে নেতিবাচক চিন্তা আপনার জীবনের সমস্যা আর না বাড়ায়।

এই পরিস্থিতি তো চিরকাল স্থায়ী হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

আমি ইতিপূর্বে আরও অনেক বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি, সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠেছি, সেগুলোর মত এটাও কেটে যাবে

আমি উদ্বিগ্ন হতে পারি এবং পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে এর মোকাবেলা করতে পারি। 

এই মুহূর্তে আমার সাথে যা ঘটছে তা ধৈর্য ধরে সমাধান করার জন্য আমি যথেষ্ট সামর্থ্যবান।

ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে নেতিবাচক চিন্তা নিয়ন্ত্রণ

এই সমস্যাটি আমার ভয় এর সাথে কীভাবে মোকাবেলা করতে হয় তা শেখার জন্য একটি ভালো সুযোগ।

আমি এর আগেও এই ধরনের অন্যান্য পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সফল হয়েছি এবং আমি এর থেকেও বেঁচে যাবো।

আমার চিন্তা আমার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে না, আমি করি, তাই আমি নিজের সমস্যাগুলোও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।

এই পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, কিন্তু এটি আমার জীবনের এক অস্থায়ী পরিস্থিতি।

নেতিবাচক মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করার কিছু উপায়, Ways to control your negative emotions 

নেতিবাচক আবেগগুলি আপনাকে অন্যদের অপছন্দের পাত্র করে তোলে এবং আপনার আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান, এবং সাধারণ জীবনের সন্তুষ্টি হ্রাস করে। তবে সহজ কিছু উপায় অবলম্বন করলেই নেতিবাচক মনোভাবের দুর্বোধ্য কেল্লাটি জয় করা সম্ভব হবে।

নেতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে যেতে কি কি করবেন, How to avoid negative emotions?

১) অরিগামি পন্থাOpens in a new tab. অবলম্বন করুন। একটি কাগজের টুকরো নিয়ে তা ভাজ করতে শুরু করুন এবং তাকে মনের মতো আকার দেওয়ার চেষ্টা করুন, এতে সহজেই চিন্তামুক্ত হওয়া যায়, বা আপনার চিন্তাগুলোকে অন্যদিকে মুড়ে দেওয়া যায়।

অরিগামি পন্থা অবলম্বন করুন

২) যদি কখনো কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত কিছুতেই নিয়ে উঠতে পারেন না, তবে একটি কাগজে গোল কিংবা ঢেউ আঁকুন। দেখবেন অল্পক্ষণেই ফল পেয়ে যাবেন।

৩) কোনও কারণে যদি রাগ হয় তবে তা মনের ভিতরে পুষে রাখবেন না। হাতের কাছে কোনো ব্যবহারযোগ্য কাগজ থাকলে তা ছিঁড়ে ফেলুন, মন হালকা হবে।

৪)  মন যদি খারাপ হয় তাহলে ভুলভাল কিছু চিন্তা না করে একটি সাদা কাগজ নিয়ে বসে পডুন। তাতে রামধনুর সাতটি রং ফুটিয়ে তুলুন।

৫) চারপাশে প্রতিকূল পরিস্থিতি হয়ে আছে, আপনার যদি মনে হয় যে আপনি তাতে ফেঁসে রয়েছেন। তাহলে কাগজ নিয়ে তাতে ক্রমাগত গোল আঁকতে থাকুন।

৬)  খুব বেশি রাগ উঠলে কোনো কিছু ভাঙচুর না করে বরং খাতায় সমান্তরাল লাইন টানতে থাকুন। যতক্ষণ না রাগ কমছে ততক্ষণ এই কাজ করে যান।

৭) কী চান জীবনে? কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না। এমন অবস্থায় সম্ভব হলে কোলাজ আঁকার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন যে কোলাজের কোন দিকটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালো রাখছে। এভাবে চিন্তা ভাবনা প্রসারিত করতে পারেন।

৮) নিজের মনের লুকনো আবেগটি বুঝতে চান? তাহলে নিজের ইমোজি আঁকুন। আর দেখুন কোন ইমোজির সঙ্গে নিজের সবচেয়ে বেশি মিল পাচ্ছেন আপনি।

৯) যুক্তিযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করুন – স্বীকার করুন যে খারাপ অনুভূতিগুলি মাঝে মাঝে অনিবার্য এবং নিজেকে আরও ভাল বোধ করার মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করুন।

১০) আরাম করুন – পড়া, হাঁটা বা বন্ধুর সাথে কথা বলার মতো আনন্দদায়ক কার্যকলাপগুলি ব্যবহার করুন। নিজের চিন্তাধারা কাছের মানুষের সাথে ভাগ করে নিন এবং তাদের থেকে ভালো পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করুন।

 আরাম করুন

১১) ব্যায়াম – বায়বীয় কার্যকলাপ আপনার মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং আপনাকে বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক আবেগগুলির সাথে আরও ভালভাবে মোকাবেলা করার শক্তির যোগান দেয়।

১২) অতীতকে ভুলে থাকার চেষ্টা করুন। আপনার সাথে ক্রমাগত ঘটে যাওয়া নেতিবাচক ঘটনাগুলি নিয়ে ভেবে নিজের বর্তমানকে নষ্ট করে দেবেন না।

উপসংহার, To conclude

 একটু চেষ্টা করলেই নেতিবাচক চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়। নয়তো নেতিবাচক মনোভাব আমাদের মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই আমাদের সর্বদা চেষ্টা করা উচিত যেন কোনো অনুভূতি আমাদের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তার বিকাশ না ঘটাতে পারে, কারণ এমন সব চিন্তা ভাবনা আমাদের ক্ষতিই করে, এর প্রভাবে ভালো কিছু হবে না।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts