ভাতের মাড়ের/ ফ্যানের উপকারিতা, Cooked rice water benefits in Bengali

ভাতের মাড়ের/ ফ্যানের উপকারিতা

একাধিক প্রাচীন গ্রন্থে ভাতের ফ্যানকে কাজে লাগিয়ে শরীরকে কীভাবে রোগমুক্ত রাখা যায় সেই উপায়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। অনেকেই জানেন যে ভাতের মাড়ে রয়েছে উচ্চ মানের সব পুষ্টি উপাদান! বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ভাতের মাড়ে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ, ভিটামিন ই সহ আরও বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান আমাদের শরীরে গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে আরও নানা কাজে লাগে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ভাতের মাড়ের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

ভাতের মাড়ের উপকারিতা, Cooked rice water benefits

ভাত রান্নার পর অনেকেই মাড়টা ফেলে দেন। ফলে চালের যা গুণাগুণ তার সিংহভাগই মাড়ের সাথে চলে যায়, ফলে ভাত খাওয়ার মাধ্যমে যে পরিমাণ পুষ্টির আমাদের শরীরে প্রবেশ করা উচিত, তা হচ্ছে না। তাই ভাত খেয়ে শুধু ওজন বৃদ্ধি ছাড়া, আর কিছু সুফল মিলছে না। কিন্তু  ভাতের মাড়ের উপকারিতা জানলে কেউ আর ভাতের মাড় ফেলে দেওয়ার কাজ করবেন না, কারণ এটি বিভিন্নভাবে আমাদের কাজে লাগে।

ভাতের মাড়ের উপকারিতা

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীর এবং ত্বককে চাঙ্গা রাখতে ভাতের মাড়ের কোনও বিকল্প হয় না। এমনকি একাধিক রোগের উপশমেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এই ভাতের মাড়। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, ভাতের মাড়ে স্টার্চ রয়েছে, যা এর প্রশান্তিদায়ক বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য পরিচিত যা হজমের সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করতে পারে। ভাতের মাড়ের উপকারিতাগুলো হল :

১. চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভাতের মাড়ের ব্যবহার:

সপ্তাহে তিনবার স্নান করার আগে ভাতের মাড় ভাল করে চুলে লাগাতে পারে। কিছু সময় অপেক্ষা করার পর হালকা গরম জল দিয়ে চুলটা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এমন করলে চুলের গোড়ায় পুষ্টির অভাব দূর হবে, ফলে চুল পড়া সহ একাধিক স্কাল্প সম্পর্কিত সমস্যা কম হতে শুরু করবে, সাথে চুলের উজ্জ্বলতাও বাড়বে।

তাছাড়াও নরম তুলতুলে চুল পেতে ভাতের মাড় অন্যভাবেও ব্যবহার করতে পারেন, এতে ম্যাজিকের মতো ফল পাওয়া যায়। ভাতের মাড় অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি তরল। সেটি খেলে শরীরে মেদ হওয়ারও সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু এই মাড়ই চুলের জন্য দারুণ উপকারী। এটি কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ভাতের মাড়ের ব্যবহার

চুলে এর ব্যবহার করার জন্য প্রথমে ভাতের মাড়ে জল মিশিয়ে খানিকটা পাতলা করে নিন। স্নানের সময় শ্যাম্পু করার পর চুলে ভাতের মাড় দিয়ে মিনিট তিনেক রেখে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। চুলের ডগা ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলোর মোকাবিলায় এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এছাড়া চুলকে গোড়া থেকে মজবুত ও চকচকে করতে সাহায্য করে এই পদ্ধতি। ভাতের মাড় ঘরোয়া কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে চুল উজ্জ্বল ও নরম তুলতুলে হবে খুব তাড়াতাড়ি।

২. ত্বককে সুন্দর করতে ভাতের মাড়ের ব্যবহার :

ত্বকের জন্যও ভাতের মাড় দারুণ উপকারী। পোড়া কালচে ভাব, শুকনো চামড়ার উপর ভাতের মাড় ঠান্ডা করে লাগালে কিন্তু উপকার পাবেন। ভাতের মাড়কে প্রাকৃতিক টোনারও বলা যেতে পারে। গবেষকরা লক্ষ করেছেন যে, প্রতিদিন মুখে ভাতের মাড় লাগিয়ে ম্যাসেজ করলে ত্বকের মধ্যে থাকা ছিদ্রগুলি ছোট হয়, সেই সঙ্গে স্কিনের উপরিঅংশে জমে থাকা মৃত কোষের আবরণও সরে যায়। এরফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

ত্বককে সুন্দর করতে ভাতের মাড়ের ব্যবহার

তাই রাতে শুতে য়াওয়ার আগে একটা তুলো নিয়ে ভাতের মাড় সারা মুখে লাগিয়ে ভালভাবে লাগিয়ে নিয়ে হালকা হাতে ম্যাসেজ করুন, তারপর সারা রাত এটি আপনার মুখে লাগিয়ে রেখে দিন। সকালে উঠে মুখটা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এমনভাবে রোজ ব্যবহার করলে দেখবেন ত্বক নিয়ে আর কোনও চিন্তা থাকবে না। এছাড়াও মাড় দিয়ে পায়ের তলা ঘষুন। গোড়ালিতে লাগান। গোড়ালিও থাকবে নরম তুলতুলে।

৩. ভাতের মাড় ত্বকে ব্রণের প্রকোপ কমায় :

প্রতিদিন দুইবার করে ভাতের মাড় মুখে লাগালে ব্রণ কমতে শুরু করে। তাছাড়া ব্রণের কারণে হওয়া দাগও মিলিয়ে যায়, কারণ এতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ত্বকের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা হ্রাস করে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রণ কম হয়।

৪. ডায়ারিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসায় ভাতের মাড় কাজে লাগে :

জলের মতো পাতলা পায়খানা হয়েই চলেছে? সেই সঙ্গে পেটে ব্যথা! তাহলে এই সমস্যাগুলোর সমাধানে অবশ্যই ভাতের মাড় খেতে হবে। দেখবেন খুব কম সময়েই উপকার মিলবে। আসলে পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার সময় এক গ্লাস ভাতের মাড়ে অল্প নুন দিয়ে মিশিয়ে খেলে শরীরে উপকারী খনিজের অভাব পূরণ হয় এবং সেগুলোর মাত্রা বাড়তে শুরু করে, ফলে রোগের প্রকোপ কমতে শুরু হয়। 

ডায়ারিয়ার ঘরোয়া চিকিৎসায় ভাতের মাড় কাজে লাগে

৫. ভাতের মাড় শারীরিক শক্তির ঘাটতি দূর করে :

যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাদের খাবারেও অনেক বিধি নিষেধ থাকে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে আপনারা কি জানেন নিয়মিত শরীরচর্চা করার আগে এক গ্লাস ভাতের মাড় খেলে শরীরে ৮টি উপকারী অ্যামাইনো এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা এক্সারসাইজ করার সময় পেশির গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া সেই সঙ্গে ভাতের মাড়ে উপস্থিত কার্বোহাড্রেট শারীরিক শক্তির ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শরীর চর্চা করার আগে ভাতের মাড় খেতে পারেন।

ভাতের মাড় শারীরিক শক্তির ঘাটতি দূর করে

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে ভাতের মাড় :

একাধিক গবেষণায় পরিলক্ষিত হয়েছে যে নিয়মিত ২ গ্লাস করে যদি ভাতের মাড় খাওয়ার অভ্যাস করা যায় তবে বাওয়েল মুভমেন্টে অর্থাৎ অন্ত্রের কার্যকারিতার উন্নতি ঘটে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম ঘটতে শুরু করে।

৭. জ্বরে উপকারী ভূমিকা পালন করে ভাতের মাড় :

ভাইরাল সংক্রমণ বা জ্বর হলে বেশিরভাগ মানুষের শরীরে জলের ঘাটতি অনুভব হয়। ভাতের ফ্যান খেলে শরীরে যেমন জলের ঘাটতি হবে না, তেমনই শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে থাকবে। তাই জ্বর হয়ে ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

জ্বরে উপকারী ভূমিকা পালন করে ভাতের মাড়

৮. ভাতের মাড় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে :

অনেকেই হয়তো জানেন না যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভাতের মাড় সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় যারা ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সোডিয়াম কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ভাতকে অন্যতম সেরা খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ভাতের মাড় ফেলে দিলে সঠিক ফল পাওয়া যায় না।

৯. পাকস্থলী ঠিক রাখে

ভাতের ফ্যান বা মাড় পাকস্থলীকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি এর কার্যকারিতা উন্নীত করে। তাছাড়া পেটে ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। অন্যদিকে এটি মেটাবলিজম হার বাড়ানোর ক্ষেত্রেও কার্যকর। তাই, আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে ভাতের মাড় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

পাকস্থলী ঠিক রাখে

১০. গাছের যত্নে ভাতের মাড়

নিজের শারীরিক যত্নের পাশাপাশি গাছের যত্নে ভাতের মাড় কাজে লাগাতে পারেন। ভাতের ফ্যান ফেলে না দিয়ে বরং তা গাছের গোড়ায় বা টবে ঠাণ্ডা করে ঢেলে দিন দিন। গাছের জন্য উৎকৃষ্ট সারের কাজ করে ভাতের ফ্যান।

শেষ কথা, Conclusion 

ভাতের মাড় কতটা উপকারী উপরের আলোচনা থেকে আপনারা হয়তো বুঝতেই পারছেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক রোগ ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এবার থেকে ভাতের মাড় ফেলে দেওয়ার ভুল করবেন না, বরং উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে এর ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি আপনারা ভালো ফল পাবেন।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts