জিরার উপকারিতা, Benefits of Cumin in Bengali

জিরার উপকারিতা

রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধিকারী মশলা হিসেবে জিরা প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে শুধু তরকারির ঘ্রাণ বা স্বাদ বৃদ্ধিই নয়, বরং জিরায় আছে বহুমুখী স্বাস্থ্য উপকারিতাও। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিকারের ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে জিরার ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই, কিন্তু পেটের পীড়া, ত্বকের ও চুলের যত্নে জিরা বেশ উপকারি। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জিরার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

জিরার পুষ্টিগুণ, Nutritional value of cumin

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, জিরায় আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে। এতে আছে আয়রণ, ভিটামিন, অ্যান্টি কার্সিনোজেনিক Opens in a new tab.প্রপাটিজ, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ইত্যাদি উপাদান। এছাড়াও রয়েছে ফ্যাটি এসিড। প্রতি শতগ্রাম জিরায় প্রায় ৩৭০-৩৮০ ক্যালরি থাকে। এছাড়াও এতে যথেষ্ট পরিমাণ ফ্যাট, পটাশিয়াম, সোডিয়াম আছে। উক্ত বিভিন্ন উপাদানগুলো আমাদের দেহের নানা ধরনের রোগ নিরাময় করতে সহায়তা করে ও স্বাস্থ্যগতভাবে সুস্থ্য থাকার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।

জিরার পুষ্টিগুণ

জিরার উপকারিতাগুলো কী কী, Benefits of Cumin

জিরার নানা রকম পুষ্টিগুণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আমাদের শরীরকে বাহ্যিক দিক থেকে সুন্দর করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন চুলের যত্নেও, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে ও ত্বকের যত্নে জিরা বেশ উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এক কথায় রান্নার সুগন্ধযুক্ত স্বাদ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন রোগকে প্রশমিত বা হ্রাস করার ক্ষেত্রে জিরার উপকারিতা রয়েছে ব্যাপক। জেনে নিন জিরার উপকারিতাগুলো কী কী :

লিভার ভালো রাখে 

আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে এবং লিভারের ভেতর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন পদার্থ Opens in a new tab.বের করতে হলে নিয়মিত জিরা জলে ভিজিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে সেই জল খেতে পারেন। এই জল শরীরে ডায়াজেস্টিভ এনজাইমের পরিমাণ বাড়ায় ফলে আমাদের লিভারের ভেতরের ক্ষতিকর টক্সিন পদার্থগুলো শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এতে লিভার এর কার্যক্ষমতা ভালো থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

আমাদের শরীরে ইলোকট্রোলাইট এবং পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে একগ্লাস করে জিরা ভেজানো জল খেলে শরীরে ইলোকট্রোলাইট এবং পটাশিয়ামের মাত্রা বেশ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি 

জিরাতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পরিমাণে আয়রণ। তাই জিরা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে আয়রণের ঘাটতি পূরণ হয়। আয়রণ আমাদের রক্তে লোহিত কণিকা বৃদ্ধি করে ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। 

জিরাতে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পরিমাণে আয়রণ

শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে

জিরা আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করার ক্ষেত্রে বেশ উপকারক একটি প্রাকৃতিক উপাদান। জিরার মধ্যে থাকা উপাদানগুলো শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। এতে আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা অলসতা এবং ক্লান্তি ভাব খুব সহজেই দূর হয়ে যায়।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

আমাদের মধ্যে অনেকেরই বদ-হজম জাতীয় সমস্যা আছে। কিছু খাওয়ার পর পেটে গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার মাধ্যমে বদ হজমের সৃষ্টি হয়। এই জাতীয় সমস্যা থাকলে অবশ্যই জিরা খাওয়া শুরু করুন। প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস জলে পরিমাণ মতো জিরা ভিজিয়ে রাখুন এবং সকাল বেলা সেই জিরার জল খেয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত পান করলে বদ-হজম দূর হবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জিরার ভূমিকা

জিরাতে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলোনিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি আছে। তাই প্রতিদিন জিরা জল পান করলে উক্ত উপাদানগুলো আমাদের ত্বক থেকে ক্ষতিকর টক্সিনগুলো বের করে দেবে । টক্সিন পদার্থগুলো বের হয়ে গেলে ত্বকের মধ্যে টান টান ভাব আসে এবং ত্বকের সৌন্দর্য পূর্বের চেয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পায়। এভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে জিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জিরার ভূমিকা

ওজন নিয়ন্ত্রণ

ওজন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রেও জিরা বেশ উপকারি, কারণ জিরায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আমাদের দেহে প্রবেশ করার পর মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে খাদ্য খুব দ্রুত হজম হয়। ফাইবার খাবারকে পেটে অনেকক্ষণ ধরে রাখে ফলে পেট ভরা আছে বলে মনে হয়, তাই বার বার খাওয়ার ইচ্ছা জাগে না। এর ফলস্বরূপ কম খাওয়া হয় এবং স্বাস্থ্য বৃদ্ধি হয় না তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

জিরাতে উপস্থিত ফাইবার খাদ্য হজম করার ক্ষেত্রে বেশ উপকারী একটি পদার্থ। মূলত হজমে সমস্যা থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কিন্তু ‍জিরা খেলে আমাদের শরীরে ফাইবারের ঘাটতি দূর হয় এবং আমরা সকলেই জানি যে ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 

চুলকে সুন্দর করে তোলে

দূষিত কিংবা অনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে আমাদের চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমতোবস্থায় চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে আমরা নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আশানুরূপ ফলাফল পাই না। এক্ষেত্রে জিরা ব্যবহার করে আমরা চুলকে ভালো রাখতে পারি। এরজন্য প্রথমে জিরাকে গুঁড়ো করে নিয়ে একটি ডিমের সাথে ১চা চামচ জিরার গুঁড়োর মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রণটিকে ভালোভাবে চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার এমন করতে পারেন।

অনিদ্রা দূর করে

আমাদের মস্তিষ্কে যখনই মেলাটনিন হরমোন ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায় বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা চলে আসে, তখন আমাদের ঘুমে বিঘ্নতা দেখা দেয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের প্রায়ই রাতের বেলা ঠিক ভাবে ঘুম হয় না। তাদের প্রতিদিন রাতে একটি কলার সাথে জিরার পাউডার মিশিয়ে ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা পূর্বে খাওয়া উচিত, এটি মস্তিষ্কে মেলাটনিন ক্ষরণ করতে সহায়তা করে ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুম চলে আসে। 

উপরিউক্ত বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে শেষ অবধি এই সিদ্ধান্তে আসতে হয় যে, জিরা একটি প্রাকৃতিক গুণ সম্পন্ন ভেজশ ঔষধ।

শাহী জিরার উপকারিতা,  Benefits of Shahi Cumin

শাহী জিরা হল এক সুগন্ধময় মশলা। বিভিন্ন ধরনের রান্নায় এর ব্যবহার করা হয়। রান্নার সুগন্ধ বৃদ্ধির পাশাপাশি এতে রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতাও। সাধারণ জিরা থেকে এটি দেখতে কিছুটা ভিন্ন হয়, এটি জিরা থেকে আকারে আরো সরু এবং রং কালচে ধরনের। শাহী জিরার কিছু উপকারিতা হলো-

• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

• কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

• ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে

• হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

জিরা চিবিয়ে খাওয়ার ভালো দিকগুলো কি ?

জিরা চিবিয়ে খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। সেগুলি হলো-

• দাঁত পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।

• ফাইবার বেশি পাওয়া যায় বলে হজমে সহায়তা করে।

• ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

• গর্ভবর্তী মহিলাদের জন্য গোটা জিরা খুবই উপকারি।

• চুলকে সুন্দর রাখে।

তাই উপরিউক্ত উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত জিরা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

জিরা চিবিয়ে খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে

জিরা খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নিন, Disadvantages of cumin

অপকারিতা হিসেবে জিরা খাওয়ার ফলে খুব কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যদিও সব কিছুরই উপকারী ও অপকারিতা দুই’ই রয়েছে। জিরার অপকারিতার কথা বলতে গেলে- 

• অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা হতে পারে; যেমন পেটে ব্যথা হতে পারে, পাতলা- পায়খানা হতে পারে।

• বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত জিরা খেলে তা রক্তকে তরল করে দিতে পারে।

অতিরিক্ত জিরা খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা হতে পারে

উপসংহার, Conclusion 

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা একটা বিষয় নিয়ে নিশ্চিত যে মসলা হিসেবে পরিচিত হলেও জিরা আসলে নানা ঔষধিগুণ সম্পন্ন। বিভিন্নভাবে এটি আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক। কিন্তু যে কোনো কিছুই অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের ক্ষতি করতে পারে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা শ্রেয়।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts