আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন ডি খুবই প্রয়োজনীয়। বড়দের মুখে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি গায়ে রোদ লাগানোর কথা। সাধারণত সূ্র্যরশ্মি থেকে আমরা ভিটামিন ডি পেয়ে থাকি। তাছাড়া নির্দিষ্ট কিছু খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন D পাওয়া যায়।
আমাদের দেহে স্বাভাবিক হাড়ের গঠনের জন্য ভিটামিন-ডি এর ভূমিকা অপরিসীম, কারণ হাড়ে ক্যালসিয়াম জোগায় ভিটামিন-ডি। তবে এই ভিটামিনের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে এবং প্রকারভেদে এদের কাজও ভিন্ন হয়। ভিটামিন ডি এর একটি প্রকার হল ভিটামিন D3 যা খাবার থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ভিটামিন D3 এর কাজ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ভিটামিন D3 এর কাজ, Function of vitamin D3
ভিটামিন ডি 3 কোলেক্যালসিফেরল হিসাবে পরিচিত। এই ভিটামিন রক্ত প্রবাহের মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের বিপাকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন D3 সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং অস্টিওপরোসিসের মতো হাড়ের সমস্যার সাথে সম্পর্কিত সকল শারীরিক অবস্থা ঠিক রাখার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
এটি সূর্যালোকের সাহায্যে কোলেস্টেরল থেকে সংশ্লেষিত মানুষের শরীরের মধ্যে একটি কার্যকর ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন। ভিটামিন D3 হাড় এবং কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে। ভিটামিন D 3 এর ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা টিউমার কোষগুলির বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
এছাড়া ভিটামিন ডি 3 হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর। কিছু গবেষণা অনুসারে, ভিটামিন ডি 3 হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। শরীরে ভিটামিন ডি 3 এর অভাবজনিত কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। অন্যদিকে ভিটামিন D 3 হতাশা এবং স্ট্রেস হ্রাস করে মেজাজ উন্নত করে। এই ভিটামিন আমাদের মানসিক এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালীকরণে কার্যকর। দেহে এই ভিটামিনের নিম্ন মাত্রার ফলে যে লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় সেগুলি হল :
- ভিটামিন D3 এর অভাব দেখা দিলে প্রায়শই ছোটো ছোটো মোচড় খেয়ে হাড়ে ফাটল দেখা দেয় অর্থাৎ ভঙ্গুর হাড় এর সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন অনেকে।
- শরীরে ভিটামিন D3 এর অভাব থাকলে অনেকেই সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করতে সমস্যা অনুভব করেন, কাজ মনোযোগ দিয়ে করতে পারেন না।
- দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন D3 এর অভাব থাকলে হাড়ের ক্যান্সার হতে পারে।
- ভিটামিন D3 এর অভাব থাকলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে দেহে সৃষ্টি হয় রোগ সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি।
- অত্যধিক ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব হওয়া।
মানবদেহে ভিটামিন D3 এর অভাবে কি কি হতে পারে, What can happen due to the lack of vitamin D3 in the human body
ভিটামিন D3 এর অভাবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যথা :
- দেহে ভিটামিন D3 এর অভাবে হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
- হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে।
- হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
- শিশুদের রিকেট রোগ হতে পারে।
- প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অস্টিওম্যালেসিয়ার মতো রোগ দেখা যেতে পারে।
- তবে শুধু হাড়ের সমস্যাই নয়, ভিটামিন D3-এর অভাবে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের প্রবণতাও বেড়ে গেছে। যেমন- কোলন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার। তাছাড়া এই ভিটামিনের অভাবে হৃদরোগ, হতাশা ও ওজন বৃদ্ধির সমস্যাও হতে পারে। অন্যদিকে দেহে ভিটামিন D3 এর পরিমাণ কম থাকলে শরীরের প্রতিরোধ শক্তি কম হয়ে যায় এবং রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।
ভিটামিন D3 এর ঘাটতির লক্ষণ, Symptoms of Vitamin D3 Deficiency
ভিটামিন ডি 3 এর ঘাটতির লক্ষণগুলো হল :
- পেশীতে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
- বাতের ব্যথা।
- ফ্র্যাকচার।
- পেশীতে প্রায়ই ব্যথা অনুভব হওয়া।
- পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া।
- পেশী তে বাধা অনুভব হওয়া।
কীভাবে ভিটামিন D3 এর অভাব প্রতিরোধ করবেন? How to prevent vitamin D3 deficiency?
ভিটামিন D3 এর ঘাটতি রোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে, সেগুলি হল :
- প্রতিদিনের ডায়েটে ভিটামিন D3 সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
- সকালে অনুশীলন ও যোগব্যায়াম করার পর, কিছুক্ষণ রোদে বসে গায়ে সূর্যের আলো লাগাতে হবে।
- ভিটামিন D3 এর অভাব দেখা দিলে ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার না করে ডাক্তারের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।
- ছোটো হোক কিংবা বড়, যেকোনো বয়সের মানুষকে ভিটামিন D3 সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় ভিটামিন D 3 সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
কোন কোন খাবার ভিটামিন D3 -এর ঘাটতি মেটাবে, Food that will compensate for vitamin D3 deficiency
ভিটামিন D3 এর অভাবজনিত কারণে একজন ব্যক্তি বিভিন্ন স্বাস্থ্য রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এইরকম পরিস্থিতিতে, ডায়েটে ভিটামিন D 3 সমৃদ্ধ খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এগুলি ছাড়াও আমাদের দেহের সুস্থতার জন্য সমস্ত রকম পুষ্টি চাহিদা মেটায় এমনসব খাবার সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
ভিটামিন D 3 -এর ঘাটতি যাতে না হয় তার জন্য নিয়মিত কিছু খাবার গ্রহণ করা উচিত। দুধ, দই, সিরিয়াল, সয়া জুস, ডিমের কুসুম, মাশরুম, কমলালেবুর রস, কড লিভার অয়েল, মাছ প্রভৃতি খাবার থেকেও ভিটামিন D3 পাওয়া যায়।
ভিটামিন D 3 এর উপকার, Benefits of Vitamin D 3
ভিটামিন D 3 আপনার শারীরিক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এই ভিটামিন থেকে প্রাপ্ত উপকারসমমূহ হল :
ভিটামিন D 3 হাড় শক্ত করে:
শরীরের ফসফরাসের মধ্যে ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন D3, উক্ত দুটি পদার্থ হাড়ের মূলগত গঠন তৈরি করে। ভিটামিন D3 সঠিক পরিমাণে দেহে উপস্থিত থাকলে হাড় সহজে দুর্বল হয় না।
শিশুদের জন্য উপকারী ভিটামিন D3 :
শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের হাড়ের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন D3 খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিটামিন-এর অভাবে শিশুদের হাড়ে বিকৃতি দেখা দিতে পারে। তাছাড়া এই ভিটামিন অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
মহিলাদের জন্য উপকারী:
ভিটামিন D3 সাপ্লিমেন্ট বহু মহিলাদের ঋতুস্রাবজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে , মহিলাদের ঋতুস্রাবজনিত উপসর্গের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি মহিলাদের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিও কমায়।
ভিটামিন D 3 এর প্রভাবে দাঁত শক্ত হয়:
গবেষণায় পাওয়া গেছে, ভিটামিন D সাপ্লিমেন্ট শিশু এবং বয়স্কদের দাঁতের ক্ষয়রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি এটি দাঁতের মিনারেলের উন্নতি ঘটায় এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
পেশির শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে:
শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন D 3, পেশির শক্তিবৃদ্ধি করে। শারীরিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এর ইতিবাচক ভূমিকা আছে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে:
ভিটামিন D 3 সমৃদ্ধ খাদ্য খিদে কম করে দেয় বলে ওজন কমাতে সহায়তা হয়। তাছাড়া পরিশ্রমের ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি কমায় বলে ওজনও নিয়ন্ত্রিত করা যায়।
ভিটামিন D 3 এর অভাব জনিত সমস্যার চিকিৎসা, Treatment of vitamin D 3 deficiency problems
চিকিৎসকরা ভিটামিন D 3 এর অভাব জনিত সমস্যায় ভুগছেন এমন একজন রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে বয়স, ওজন, উচ্চতা এবং একজন ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার কথা মনে রেখে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ওষুধ নির্ধারণ করেন, যা সেবন করলে ভিটামিন D3 এর ঘাটতি পূরণ হবে।
এর সাথে কিছু খাদ্য পরিপূরকও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়ে থাকে। ওষুধের প্রভাব ও ব্যবহার ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি অনুযায়ী পৃথক হতে পারে, তাই ফার্মেসি থেকে নিজে ওষুধ ক্রয় না করে বরং একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
শেষ কথা, Conclusion
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা হয়তো বুঝতেই পারছেন যে ভিটামিন D 3 আমাদের শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। তাই অবহেলা না করে দেহে ভিটামিন D3 এর মাত্রা সঠিক রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।