গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কে তথ্য, A detailed information about gastric in Bengali 

গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কে তথ্য

সকলের বাড়িতে হজমের গোলমাল তথা বিভিন্ন কারণে গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে। এই গ্যাস জনিত সমস্যা মারাত্বক হয়ে উঠলে তাকে সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক বলে ধরে নেন। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে গ্যাস্ট্রিক বলে কিছু নেই। তবে পেপটিক আলসার এবং নন–আলসার ডিসপেপসিয়া বলে দুটি সমস্যা আছে, যেগুলোকেও গ্যাস্ট্রিক বলে অভিহিত করেন অনেকেই।

এই সমস্যাগুলো কেন হয় এবং এর থেকে রেহাই কীভাবে পাওয়া যায়, তা না জেনে মুড়ি–মুড়কির মতো দীর্ঘ মেয়াদে টানা গ্যাসের ওষুধ খেলে চলবে না। এতে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা গ্যাস্ট্রিক হিসেবে অধিক পরিচিত পেপটিক আলসার এর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো।

গ্যাস্ট্রিক আসলে কি, What is gastric?

বৈজ্ঞানিকভাবে যে সমস্যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিক বলে থাকি সেটির আসল নাম হচ্ছে পেপটিক আলসার রোগ বা পিইউডি। পাকস্থলী, ডিওডেনাম ও ইসোফেগাস— এই তিনটির মধ্যে যেকোনো অংশে যদি দেহের পাকস্থলীতে নিঃসৃত হওয়া অ্যাসিডের কারণে কোনও ক্ষত হয়, তবে একে বলে পেপটিক আলসার ডিজিজ। তাই পেটের কোনো সমস্যায় রোগ কি তা নির্ণয় করতে গেলে যখন বলা হয় যে গ্যাস্ট্রিক আছে, তখন বুঝতে হবে যে সেই ব্যক্তির পেপটিক আলসার রয়েছে। এটা সাধারণত পাকস্থলী বা ডিওডেনামে হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক আসলে কি

Causes of peptic ulcer

পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে ঘা বা আলসার হওয়াকে পেপটিক আলসার বলে। এই সমস্যাটি দুটি কারণে হয়, একটি হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি Opens in a new tab.(এইচ পাইলোরি) নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে এবং অন্যটি হচ্ছে এনএসএআইডি–জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ দীর্ঘ সময় ধরে সেবন করার ফলে। যদি পাকস্থলীতে এইচ পাইলোরির সংক্রমণ ঘটে থাকে, তবে সাধারণ গ্যাসের ওষুধ খেলে সেই সংক্রমণ পুরোপুরি সেরে যায় না, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও কমবে না।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি কেউ এইচ পাইলোরিনাশক অ্যান্টিবায়োটিক ও এই জাতীয় কোনো ওষুধ খান। আমাদের শরীরে এইচ পাইলোরির প্রবেশ সাধারণত জল ও খাবারের সঙ্গে ঘটে। তারপর এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলী তে প্রদাহ সৃষ্টি করে। আবার কখনো আলসার বা ঘা সৃষ্টি করে, ফলে সারা বছর পেটের নানা সমস্যায় ভুগতে হয়।

পেপটিক আলসার কেন হয়?

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায়, Symptoms of gastric problems 

গ্যাস্ট্রিক হলেই যে লক্ষণ ধরা পড়বে এমন কোনো কথা নয়। তবে যকৃৎএ দীর্ঘদিনের প্রদাহ জনিত সমস্যা থাকলে সেটা থেকেই গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। আবার যদি এরূপ সমস্যার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কোনও চিকিৎসা না করা হয় তবে সেখান থেকে ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে। গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যার সূত্রপাত হয় হেলিকোব্যাকটর ফাইলোরি নামক এক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবেই। তবুও প্রাথমিক কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যা দেখে আপনি বুঝবেন যে গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যায় ভুগছেন :

বমি হাওয়া –

বেশিক্ষণ যদি পেট খালি থাকে, তাহলে যকৃৎ থেকে একটি বিশেষ রস নির্গত হয় যা গলব্লাডারে জমা হয়, উক্ত তরল আমাদের হজমে বাধা দেয়। তাই অসময়ে খাওয়া হলে অনেক সময় এসিডিটি হয়ে যায়, বা হজম না হওয়ার ফলে বারবার বমির ভাব হয়, অনেক সময় বমিও হয়। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে পেটের সমস্যা হয়, যেমন খাবারের সংক্রমণ থেকে প্রায়শই পেটে সমস্যা দেখা দেয়। তবে পিত্তরস বা অ্যাসিড যদি বেশিমাত্রায় ক্ষরণ হয় তবেই আমাদের গলায় জ্বালা করে, পেট ব্যথা হয়।

বমি হাওয়া

খিদে পেলেও অল্প খেতেই পেট ভরে যায়-

অনেকক্ষণ ধরে খিদে পেয়েছে কিন্তু যখনই কিছু খেতে যাবেন, একটু খেলেই মনে হয় যেন আর খেতে পারছি না, পেট ভরে গেছে, এটা গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ।

অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণ-

যদি বুঝতে পারেন যে আপনার দেহের ভেতরে কোনো কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তবে প্রথমেই সতর্ক হোন। রক্ত বমি, রক্ত আমাশা, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া হল গ্যাস্ট্রিক সমস্যার লক্ষণ।

হঠাৎ করে ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা –

বেশি ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে অনেকের ওজন বেড়ে যাওয়া, বাইরের তৈলাক্ত ভাজাভুজি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ার ফলে প্রায়শই গ্যাস হয়, যা পরবর্তী সময়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পরিণত হয়ে যায়। 

হঠাৎ করে ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা

প্রায়শই পেটে ব্যথা হয় –

আপনার যদি প্রায়শই পেটে ব্যথার সমস্যা হয় তাহলে এই লক্ষণকে অবহেলা করবেন না, কারণ পেট ব্যথা শুধু গ্যাস্ট্রিক নয় বরং আরো অনেক কিছুরই লক্ষণ হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থাকলে কি করা উচিৎ এবং কি কি এড়িয়ে যাওয়া উচিত, What to do and what to avoid if you have gastric problems

গ্যাসের সমস্যায় নিত্য ভোগেন এমন বহু মানুষ আছে। অনেকে এর জন্য সাবধানে খাওয়া দাওয়া করেন, আবার অনেকে যখন যা খুশি খেয়ে তারপর হজমের ওষুধ খেয়ে নেন, যা হয়তো পরবর্তী সময়ে সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হলে যা করা উচিত :-

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হলে আক্রান্ত ব্যক্তির নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। 

ভাজা-পোড়া-তেলজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না, কারণ যাদের গ্যাস হয় বেশি, জ্বালা অনুভব হয় বা পেট ফুলে থাকে তাদের ক্ষেত্র ভাজা-পোড়া সাংঘাতিক ক্ষতিকর। 

হজমে সহায়ক এমন সব যোগব্যায়াম নিত্য দিনের নিয়ম করে করতে হবে।

হজমে সহায়ক এমন সব যোগব্যায়াম নিত্য দিনের নিয়ম করে করতে হবে

দেহে ভিটামিন বি১২ এর অভাব যেন না হয় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। এই ভিটামিন রক্ত সঞ্চালনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। 

যারা গ্যাসট্রিকের সমস্যার ভুগছেন তারা যদি ডিম, কম ফ্যাট যুক্ত দুধ, কম ফ্যাট যুক্ত দুধ দিয়ে তৈরি দই ইত্যাদি খেতে পারেন তবে উপকার পাবেন।

আলসারের সমস্যা হলে কিভাবে সাবধান থাকতে হবে, How to be careful if you have an ulcer problem

যদি কারো আলসার হয়ে থাকে, তবে ঘরে বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তবে অনেক সময় আলসার চিকিৎসা ছাড়াও ভালো হয়ে যায়, কিন্তু এর জন্য খাবারে নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি। তৈলাক্ত ও বেশি মশলাযুক্ত খাবারগুলো আলসারের লক্ষণকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। যাদের এই সমস্যার কারণে প্রায়ই পেট ব্যথা হয় তাদের ব্যথার মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। সমস্যা হয় এই নিয়ে যে, আজকাল চিকিৎসা ক্রমশ উন্নত হওয়ায় মানুষ যা মনে আসে তাই খায় এই ভরসা নিতে যে ওষুধ খেলে সব হজম হতে যাবে, চিকিৎসক ওষুধ দিয়ে সকল সমস্যা ভালো করে দেবে।

বেশিরভাগ মানুষ খাওয়ার সীমাবদ্ধতা ছাড়াই চিকিৎসা করাতে চাই। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা টসের নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা উচিত। এর কারণ হল আমাদের শরীর একটি অভ্যাসের মধ্যে চলে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা অভ্যাসের কোনও ব্যতিক্রম হলেই সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে সাধারণত ডিওডেনাল আলসার এর ক্ষেত্রে একটু নিয়ম করে চললেই আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসা পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়, কারণ এক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি খাওয়ার বিষয়ে বেশ সাবধান থাকতে হয়।

তবে পেটের এইসব সমস্যা থেকে দূরে থাকতে কোনো রোগ বা লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগে থেকেই আপনি আপনার সাধারণ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন, যেমন – তৈলাক্ত খাবার না খাওয়া, বাইরে খাবার এড়িয়ে চলা, রোজ ব্যায়াম করা, হাঁটার অভ্যাস, পেটের একটু সমস্যা হতে না হতেই ওষুধ খাবেন না, বরং জল খান, তাছাড়াও আরো বহু ঘরোয়া উপায়ে গ্যাসের সমস্যা সরানো যায়, সেগুলোও প্রয়োগ করতে পারেন।

জল খান

উপসংহার, Conclusion 

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যারা আক্রান্ত তারা খুব ভালোই জানেন যে এই ব্যাপারটা কতটা অস্বিস্তিকর। তবে এটি আসলে তেমন কোনো রোগ নয়। সাধারণত আমাদের কিছু বদভ্যাসের কারণে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। তাই নিত্যদিন কিছু নিয়ম কানুন সঠিকভাবে মেনে চললে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। উপরে উল্লেখিত প্রতিকারগুলো ক্রমাগত অভ্যাস করে গেলে আপনি এসিডিটি মুক্ত থাকতে পারবেন।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts