কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়, Home Remedies for Cough in Bengali

কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়

একটু বৃষ্টি ভিজলেই অনেকের কাশি হয়। তবে বৃষ্টিতে না ভিজলেও কাশি হতে পারে, যে কোনোভাবে ঠাণ্ডা লেগে অথবা অতিরিক্ত ঘামের ফলে অনেক সময় ঠান্ডা লেগে গিয়ে গলা খুসখুস করতে শুরু করে, যা মূলত কাশির লক্ষণ। এছাড়াও অ্যালার্জি থেকে ভাইরাস, কাশির হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে।

কাশি সাধারণত শ্লেষ্মাযুক্ত হয় আবার শুষ্ক কাশির ক্ষেত্রে শ্লেষ্মার পরিমাণ কম থাকে। তবে শ্লেষ্মাযুক্ত কাশির চেয়ে শুষ্ক কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে, কাশির সমস্যা অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে ঘরে বসেই দূর করা যায়, হাতের কাছে থাকা কিছু উপাদান ব্যবহার করে ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে কাশি নিরাময় করা যেতে পারে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কাশি নিরাময়ের বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

কাশি কেন হয় ? Why do we cough?

কাশি হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন ফুসফুসে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, যক্ষা ইত্যাদি কারণেও কাশি হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কাশি চলতেই থাকে যার ফলে নিজেকে খুব দূর্বল বলে মনে হয় এবং হঠাৎ করে বুকে ব্যথা হয়ে যায়। তবে শ্বাসকষ্ট সহ আরও বিভিন্ন সমস্যাও হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কাশি কেন হয়

প্রায়ই দেখা যায় যে জ্বর নেই, সর্দি নেই, কিন্তু কফ ও বুকে ঘরঘর করছে, আবার অনেক সময় আর কোনো সমস্যা নেই, তবুও খুসখুসে কাশি ভাবটা থেকেই যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে অ্যালার্জি, অ্যাজমা, শুষ্ক আবহাওয়া ও ধূমপানের কারণেও কাশি হয়ে থাকে। তবে কারণ যাই হোক না কেনো, কাশি নিরাময়ের উপায় রয়েছে, সেগুলি অবলম্বন করার মধ্য দিয়ে আমরা কাশি থেকে মুক্তি পেতে পারি।

কাশি হওয়ার ফলে সৃষ্ট সমস্যা, Problems caused by coughing

কাশি রাতের দিকে বেড়ে ওঠে, সেটা শুকনো কাশি হোক কিংবা অন্য কোনো ধরনের কাশি; বেশিরভাগ মানুষই কাশি হলে সারা রাত ধরে কাশতে কাশতে জেরবার হয়ে যায়। কাশির কারণে রাতের ঘুম ভালো হয়না, যার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ নিত্যদিনের কাজ করতে গিয়েও অনেক কষ্ট হয়। কথা বলতে গিয়ে কাশি ওঠে, ফলে কথা ঠিকভাবে বলা যায়না। এছাড়াও শান্তিতে খাবার খেতে অসুবিধা হয় এবং আরো বহু সমস্যা কাশির কারণে দেখা দিতে পারে।

শুকনো কাশি নিরাময়ের উপায়, How to cure dry cough

সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণের কারণেই শুকনো কাশি হয়ে থাকে। এই ধরনের কাশি ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাই এধরনের কাশিকে দীর্ঘস্থায়ী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শুষ্ক কাশি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৮ সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং ছোট বাচ্চাদের মধ্যে ৪ সপ্তাহ সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই কাশি তে আক্রান্ত হলে আপনি কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের সাহায্যে এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন। সেই উপায়গুলি হল :

শুকনো কাশি থেকে মুক্তি দিতে মধু সহায়তা করতে পারে।

মধুতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা বুকে হওয়া জ্বালা কম করতে সাহায্য করে। শুষ্ক কাশি হলে গরম জলের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া উচিত অথবা মধু দিয়ে গলায় প্রলেপ দিতে পারেন।

শুকনো কাশি থেকে মুক্তি দিতে মধু সহায়তা করতে পারে

শুষ্ক কাশি সরাতে হলুদ ও গোলমরিচ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।

হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামক এক যৌগ যার মধ্যে প্রদাহরোধী বৈশিষ্ট রয়েছে। এছাড়াও আছে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যার কারণে এটি শুকনো কাশি- সারাতে এই উপাদান ভীষণ উপকারী।

অন্যদিকে গোল মরিচ আমাদের গলা পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে যা কিনা আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন। তাই কাশিতে গোল মরিচ দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন। হলুদ বেটে তা দিয়ে গলায় ও বুকে প্রলেপ দিতে পারেন, তাছাড়া হলুদ গরম দুধের সাথেও খেতে পারেন।

হলুদ ও গোলমরিচ

কাশির জন্য আদা ও নুন বিশেষ উপকারী।

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, আদায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী) বৈশিষ্ট্য। তাই এটি শুকনো কাশি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। এরজন্য এক টুকরো আদা নিয়ে তাতে এক চিমটি নুন ভালোভাবে মিশিয়ে দিন, এরপর এতে মধু লাগিয়ে দাঁতের নিচে চাপ দিয়ে রেখে দিন। এভাবে ধীর গতিতে আদার রস মুখের ভিতর যেতে দিন। প্রায় ৫-৭ মিনিট আদর টুকরো মুখে রাখার পর ফেলে দিয়ে কুলকুচি করে নিন।

কাশির জন্য আদা ও নুন

ঘি ও গোলমরিচ কাশি সারাতে সাহায্য করবে।

ঘি-তে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ আছে বলে এটি গলা নরম রাখতে সহায়তা করে। গোলমরিচের গুঁড়োর সঙ্গে ঘি ভালোভাবে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ খেলে শুকনো কাশি অনেকটাই উপশম হয়।

যেকোনো রকম কাশি দূর করার বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হল নুন জল দিয়ে গার্গল করা।

এভাবে করলে শুকনো কাশি থেকে অনেকটাই স্বস্তি পাওয়া যায় এবং গলায় ও বুকের জ্বালা কম করতে সাহায্য করবে নুন জল। এর কারণ হল এই নুন জল মুখ ও গলার ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতেও সাহায্য করে। দিনে কয়েকবার এই জলে অবশ্যই গার্গল করুন।

কাশি দূর করার সহজ কিছু উপায়, Some simple ways to get rid of cough

কাশি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে কম করা বেশ সহজ। এর জন্য কোন কোন উপাদান লাগবে এবং কিভাবে উপায়গুলো কাজে লাগাতে হবে তা-ই জানার বিষয়। কাশি দূর করার জন্য বেশ কিছু সহজ উপায় রয়েছে। সেগুলি হল :

  • ১. এক গ্লাস হালকা গরম জলে ২ টেবিল চামচ মধু নিয়ে অর্ধেকটা লেবুর রস এবং সামান্য আদার রস মিশিয়ে প্রতিদিন ১/২ বার খেতে হবে। এ মিশ্রণ খেলে কফ ও গলা ব্যথা কম হয়ে যাবে।
  • ২. চাইলে দিনে ৩ বার করে ১ টেবিল চামচ মধু খালি খালি খেয়ে নিলেও কাশি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
  • ৩. এক গ্লাস হালকা গরম জলে ১ চা চামচ গোল মরিচের গুঁড়া ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে কাশি খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
  • ৪. বাসক পাতা জলে সেদ্ধ করে নিয়ে, সেই জল ছেঁকে নিয়ে হালকা গরম থাকা অবস্থায় খেলে কাশি উপশম হয়। বাসক পাতার রস প্রতিদিন সন্ধ্যায় খাওয়া ভালো। ২-৩ দিনেই ভালো ফল পাওয়া যাবে। তেতোভাব কম করার জন্য রসের সাথে সামান্য চিনি মেশাতে পারেন।
  • ৫. সর্দি কাশি সারাতে তুলসী পাতা খুব উপকারী। একথা সবারই জানা আছে। বিশেষ করে কালো তুলসী পাতা। এরজন্য বেশ কিছু তুলসী পাতা একসাথে থেঁতো করে নিয়ে এতে কয়েক ফোটা মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করে তা দৈনিক ২/৩ বার খেলে কাশি কম হয়ে যাবে।
  •  ৬. মেন্থল বা পুদিনা দিয়ে তৈরী ক্যান্ডি বা চকোলেট কাশির জন্য উপকারী। বাজারে বা ফার্মেসিতে এসব ক্যান্ডি পাওয়া যায়, এগুলো খেলে শক্ত কফ নরম হয়ে যায় এবং গলা থেকে কফগুলো বেরিয়ে যায় ও কাশি কম হয়ে যেতে পারে।
সর্দি কাশি সারাতে তুলসী পাতা খুব উপকারী

উপসংহার, Conclusion 

 কাশি হলে ঠান্ডা জলের পরিবর্তে গরম জল পান করার চেষ্টা করুন এবং গরম জলে স্নান করুন। এতে শরীর থেকে কাশির জীবাণুগুলো বের হয়ে যায়।  কাশি কমাতে উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন, কিন্তু এতে যদি কোনো লাভ না হয়, বা এইসব ঘরোয়া প্রতিকার করার পরও যদি বহুদিন ধরে কাশি না কমে তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts