মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়, Ways to get rid of mental instability in Bengali

মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায়

ভবিষ্যতের ভাবনা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু  ভবিষ্যতে নিয়ে ভেবে কী হবে, কখন কি কোথায় এবং কীভাবে হবে এসব নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করতে করতে বর্তমানটাই বৃথা চলে যায়। আমরা অনেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে গিয়ে  অস্থিরতার শিকার হয়ে পড়ি। এই অস্থিরতার কারণে কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া সহ আরও বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু এই অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায় কি ? প্রশ্নটির উত্তর দিতে আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রয়োজনীয় কিছু উপায়, Some essential ways to get rid of restlessness

কোনো বিষয় নিয়ে অস্থিরতা থাকলে আমরা অনেক সময় জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত অনুভব করতে অক্ষম হয়ে পড়ি, কারণ আমাদের মস্তিষ্কে সেই নির্দিষ্ট বিষয়টি ঘুরতে থাকে। এসব কারণে আমরা মানসিক তথা শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারি। অস্থিরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রয়োজনীয় কিছু উপায় হল :

১. ব্রিদিং রিলাক্সেশন করুন :

অস্থিরতা থাকলে ব্রিদিং রিলাক্সেশন করুন। এরজন্য নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিতে হবে, শ্বাস টেনে বুক ভরে নিয়ে ভেতরের সব খালি জায়গা বাতাসে ভরে ফেলুন। তারপর দমটা অল্পক্ষণ আটকে রেখে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে পরপর তিনবার করুন। এতে স্বস্তি বোধ হবে।

ব্রিদিং রিলাক্সেশন করুন

২. বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকুন :

 ইচ্ছে না থাকলেও সত্ত্বেও গান শোনা, গল্পের বই পড়া, কবিতা পড়া, বাগানে সময় কাটানো—এমন ধরনের বিভিন্ন কাজ যা নিজের ভালোলাগে তা করুন। এই কাজগুলো মনকে অন্য দিকে সরিয়ে ব্যস্ত করে দিয়ে অস্থিরতা কাটাতে সাহায্য করবে।

৩. স্মৃতিচারণ :

 মনের অস্থিরতা কম করতে ফেলে আসা সময়ের কিছু ভালো স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করুন।

স্মৃতিচারণ

৪. অস্থিরতার কারণ নিয়ে ভাববেন না :

অস্থিরতার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা না করার চেষ্টা করুন।

৫. উল্টো দিকে সংখ্যা গুনুন :

উল্টো দিক থেকে সংখ্যা গুনুন। যেমন ১০০ থেকে ১অবধি গুনতে চেষ্টা করুন। 

৬. অস্থিরতার বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন :

যে কারণে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, অনেক সময় সেই বিষয়টি নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বললেও অস্থিরতা অনেকটা কম হয়ে যায়। তাই আপনার যার প্রতি আস্থা আছে এবং যার সাথে যেকোনো কথা ভাগ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তার সঙ্গে অস্থিরতার বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন।

৭. সবার থেকে আলাদা হয়ে যাবেন না :

অস্থিরতা বোধ করার কারণে যদি সবার থেকে নিজেকে আলাদা করে, একা থেকে অস্থিরতার বিষয়টি নিয়ে বার বার ভাবতে থাকেন, তবে আপনার মানসিক অস্থিরতা কম না হয়ে বরং আরো বাড়বে। তাই এমন অবস্থায় ঘরে থাকলে বাড়ির অন্যদের সঙ্গে সময় কাটান, অফিসে থাকলে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলুন। সুযোগ থাকলে বাইরে বেরিয়ে কোথাও একটু ঘুরে আসুন, সম্ভব হলে সিনেমা দেখুন, নাটক দেখুন, পছন্দের খাবার খান, শপিং করুন। এভাবে মন কিছুটা চিন্তামুক্ত থাকবে।

সবার থেকে আলাদা হয়ে যাবেন না

৮. অস্থিরতার কারণগুলো থেকে দূরে থাকুন :

 একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তা করতে গিয়েও অনেক সময় অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। তাই এমন পরিস্থিতিতে প্রথমেই যে কারণে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা খুঁজে বের করুন এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। পাশাপাশি অস্থিরতার কারণগুলো থেকে যতটা পারা যায় দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

৯. পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করুন :

অস্থিরতার পেছনে যেসব কারণগুলো রয়েছে তা সব সময় দূর করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করুন, এবং সমস্যা নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা না করে বরং ইতিবাচক ভাবনার সাথে অস্থিরতার ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন।

১০. নির্দিষ্ট সময়ে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন :

অস্থিরতার সময় সমস্যা নিয়ে চিন্তা বারবার ব্যক্তির মনে আসতে থাকে। সে ক্ষেত্রে সারা দিন ধরে এ বিষয়ে না ভেবে বরং চেষ্টা করুন যেন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ওই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবেন। 

১১. সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলুন :

 যদি কোনো ব্যক্তির আচরণে অস্থিরতা তৈরি হয়, তবে তার সঙ্গে এ নিয়ে সরাসরি কথা বলে বিষয়টা পরিষ্কার করুন, হয়তো এতে মনে অনেকটা শান্তি পাবেন।

১২. ব্যায়াম করুন :

অস্থিরতা বোধ হলে বা না হলেও প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন, নিয়মিত হাঁটুন। এতে মানসিক চাপ কম থাকবে।

ব্যায়াম করুন

১৩. সুশৃঙ্খল জীবনযাপন :

সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলুন, নেশাজাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলুন।

১৪. নিজের জন্যও সময় বের করুন :

 সবার সঙ্গে সময় কাটানোর পাশাপাশি নিজের জন্যও আলাদাভাবে কিছু সময় বের করে রাখুন। সে সময় নিজের ভালোলাগার বিভিন্ন কাজ করুন। যেমন : চোখ বন্ধ করে পছন্দের গানটি শুনুন, প্রিয় কবিতা বা গল্পটি পড়ুন।

নিজের জন্যও সময় বের করুন

১৫. ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না :

 ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে ভেবেও অনেকে মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করুন এবং সেই অনুযায়ী অগ্রসর হন।

১৬. ইতিবাচক চিন্তা :

অস্থিরতা কম করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতোই সব ভালোর একটি মন্দ দিকও আছে। খারাপ চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন এবং ভাল ভালো ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করুন। ইতিবাচক চিন্তাগুলো অনুপ্রেরণা দেবে, এতে মনের অস্থিরতা দূর করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। 

১৭. বই পড়ার অভ্যাস :

বই পড়ার উপকারিতা হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। মন খারাপ থাকলে নতুন বইয়ের গন্ধ পেলেই ঠিক যেন মন ভাল হয়ে যায়। বই পড়ার মাধ্যমে কত মজার মজার তথ্য নিমেষেই জানতে পারা যায়! এই অভ্যাসটি কল্পনা শক্তিকে সমৃদ্ধ করবে এবং মনে প্রশান্তি আনবে, যা অস্থিরতা দূর করতে সহায়তা করবে। তাই নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস রাখুন।

বই পড়ার অভ্যাস

১৮. সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকুন :

সৃজনশীল কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন, এতে মনের অস্থিরতাও অনেকাংশেই কমে যায়। যেমন ছবি আঁকার মাধ্যমে অস্থিরতার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। 

১৯. বর্তমান সময়কে উপভোগ করুন :

আজকের দিনটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ ভবিষ্যতের উপর আমাদের কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই ভবিষ্যতের জন্য অতিরিক্ত চিন্তা না করে বরং বর্তমান সময়কে উপভোগ করা এবং কাজে লাগানোর দিকে বেশি গুরুত্ব দাও। আজকের সময়কে কাজে লাগাতে পারলেই আগামীকাল তুমি নিজের লক্ষ্য অর্জনে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।

২০. প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহার বন্ধ করুন : 

প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে, যেমন :স্মার্টফোন, ভিডিও গেমস আমাদের মস্তিষ্ককে খুব সহজেই বিভ্রান্ত করে, তাছাড়া কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকার কারণে মস্তিষ্কে যে চাপ পড়ে তা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

২১. পর্যাপ্ত ঘুম :

পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক সুস্থতার জন্য খুব জরুরী। নিয়মিত ঘুমানোর মাধ্যমে মানসিক শান্তি লাভ করতে পারেন এবং সাথে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেন।

পর্যাপ্ত ঘুম

২২. মেডিটেশন করার অভ্যাস :

ধ্যান এবং মেডিটেশন করার অভ্যাস মানসিক শান্তি এবং স্থিরতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী। নিয়মিত ধ্যান করে মন ও শরীরের সামঞ্জস্য এবং অবস্থান সম্পর্কে আরও উন্নতি করা যেতে পারে, ফলে মানসিক চাপ থাকবেনা এবং অস্থিরতা বোধ হবে না।

২৩. সময়ের সঠিক ব্যবহার :

সময় ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা উচিত। সময়ের সঠিক ব্যবহার করার মানসিকতা থাকলে অস্থিরতা দূর করা আরো সহজ হয়ে ওঠে। নির্ধারিত কাজের জন্য সময়ের ব্যবহারে গম্ভীর হতে হবে।  

২৪. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন :

পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয় লোকগুলির সাথে সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় রাখার চেষ্টা করুন, সকলের সাথে মেলামেশা করুন। এতে মন স্থিতিশীল থাকে। পাশাপাশি মন অন্যদের কথা শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে অস্থিরতাও কিছুটা দূর হয়।

শেষ কথা, Conclusion 

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে শারীরিক স্বাস্থ্যেরও সমস্যা দেখা দেয়। তাই চেষ্টা করুন উপরোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করার মধ্য দিয়ে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার এবং অস্থিরতা দূর করার। আশা করি উল্লেখিত উপায়গুলো আপনাদের অস্থিরতা দূর করতে সহায়তা করবে।

Contents show

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts