আদার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত, Details about the harmful effects of Ginger in Bengali :

আদার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত

আমাদের প্রতিদিনের রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হল আদা। নিরামিষ হোক কিংবা আমিষ, বেশিরভাগ রান্নার ক্ষেত্রে আদা ব্যবহার করা হয়। সকলের পরিচিত এই ভেষজটির মধ্যে রয়েছে অনেক গুণ। এর উপকারিতা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন। তবে আদার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে হয়তো খুব কম মানুষই জেনে থাকবেন। তাই উপকারী বলে অধিক পরিমাণ আদা না খেয়ে বরং এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আদার ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

আদায় কি কি উপাদান আছে? What ingredients are there in ginger?

আদায় প্রোটিন ২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩% , আঁশ ২·৪% , খনিজ পদার্থ, ১·২% জল ৮০·৮% ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং কিছু বিশেষ যৌগ যার শক্তিশালী ঔষধি উপকারিতা রয়েছে।

আয়ুর্বেদ পাঠ্যপুস্তকে, আদার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। তাইতো বহু প্রাচীন কাল থেকে এটি ওষুধের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে।

আদায় কি কি উপাদান আছে?

আদা খাওয়ার অপকারিতা, Con of consuming ginger :

কথায় আছে, অতিরিক্ত কোনোকিছুই ভালো নয়। একথা আদার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। উপকারী আদাও অতিরিক্ত খেলে দেখা দিতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

প্রতিদিন কাঁচা আদা খেলে লাভের পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে। তাই, বিপদ ঘটার আগেই জেনে নিন অত্যধিক কাঁচা আদা খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে। আমি আশা করি এই প্রতিবেদনটি পড়ার পরে, আপনিও এই খারাপ অভ্যাসটি বন্ধ করবেন।

জেনে নিন অতিরিক্ত আদা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে :

  • রক্তক্ষরণ হওয়ার ঝুঁকি :

আদায় অ্যান্টিপ্লেটলেট বৈশিষ্ট্য থাকে। তাই অতিরিক্ত আদা খাওয়ার ফলে তা রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে রসুন ও লবঙ্গের সাথে আদা যদি খাওয়া হয় তবে রক্তপাতের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। সেই কারণেই এ ধরনের সমস্যাগুলি এড়াতে অতিরিক্ত আদা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • ডায়রিয়ার সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি :

সাধারণত খাবারে অনিয়ম হওয়ার ফলেই বাড়ে ডায়রিয়ার ঝুঁকি। জেনে রাখা ভালো যে, উপকারী খাবার অতিরিক্ত খেলেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই খাবার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি।

অতিরিক্ত আদা খেলে তা ডেকে আনতে পারে ডায়রিয়ার সমস্যাকে। তাই আদা খাওয়া বা রান্নায় অতিরিক্ত আদা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।

  • হৃদযন্ত্রের সমস্যা :
হৃদযন্ত্রের সমস্যা

অতিরিক্ত আদা খাওয়ার বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা। তবে শুধু এতটুকুই নয়, এছাড়াও ঝাপসা দৃষ্টিশক্তি, অনিদ্রা ইত্যাদি সমস্যাও হতে পারে।

আদা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে রক্তচাপের ওঠানামার উপর প্রভাব পড়ে, ফলে হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। তাই হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে আদা সঠিক পরিমাণ খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।

  • ত্বকের সংক্রমণ জনিত সমস্যা :

বাইরের ধুলোবলি কিংবা রোদ ত্বকে সমস্যা সৃষ্টির জন্য তো দায়ী থাকেই, সেইসঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসও কিছু ক্ষেত্রে দায়ী থাকে।

এভাবেই খাদ্যে অতিরিক্ত আদা ব্যবহার করার কারণে চোখ ও ত্বকে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে, যেমন : অকারণে ঠোঁট ফুলে ওঠা, গলায় অস্বস্তিকর বোধ হওয়া ইত্যাদি। এমন সমস্যা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

  • পাকস্থলী সম্পর্কিত সমস্যা :

আদা একটি প্রাকৃতিক উষ্ণায়নকারী, তাই এর অতিরিক্ত সেবন করার কারণে অম্বল বা অন্যান্য পাকস্থলী সম্পর্কিত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

  • মুখের জন্য ক্ষতিকর :

অত্যধিক আদা আপনার মুখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমনকি এটি মুখে ব্যথা, জ্বালাপোড়া এবং চুলকানির কারণ হতে পারে। তাই আদা খাওয়া কমিয়ে দিন।

আপনি যদি আদা খাওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের আদা দেওয়ার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। তাদের শরীরে অতিরিক্ত আদা সেবন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিকাশ করতে পারে।

অত্যধিক আদা আপনার মুখের জন্য ক্ষতিকর

কতটুকু আদা সেবন করা উচিত ? How much ginger should be consumed?

উপকারী উপাদান বলে অধিক সেবন ভালো হবে এমন কোনো কথা নেই, কারণ অতিরিক্ত আদা উপকারের তুলনায় ক্ষতি বেশি করে। আদা অতিরিক্ত সেবনে গলা ব্যথা হতে পারে। এটি মুখ এবং গলার আস্তরণের ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়ায়।

বেশি আদা খেলেও পেটের সমস্যা হতে পারে। আদা অত্যধিক সেবনের ফলে পেটে ব্যথা, ফোলাভাব ইত্যাদি হতে পারে। অতএব, যত তাড়াতাড়ি আমরা আদা খাওয়া কমাতে পারি, আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য তত ভাল হবে।

যাইহোক, পরিমিত পরিমাণে আদা খাওয়ার নিজস্ব স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। অতএব, আদা ব্যবহার করার সর্বোত্তম উপায় হল পরিমাণ জানা। প্রতিদিন 1.5 মিলিগ্রাম আদা যথেষ্ট।

অত্যধিক আদা খাওয়া গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়। এইভাবে, চিকিৎসার সুপারিশ অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়া উচিত বা এড়ানো উচিত।

কাদের জন্য অতিরিক্ত আদা খাওয়া ভয়ঙ্কর, For whom consuminging excess ginger is harmful?

আদা উপকারী উপাদান, এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে অতিরিক্ত আদা খাওয়ার অভ্যাস কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বিপদজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। জেনে নিন কাদের জন্য অতিরিক্ত আদা খাওয়া ভয়ঙ্কর :

  • ওষুধ সেবনকারী

আপনি যদি আপনার ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত কিছু ওষুধ গ্রহণ করেন তবে আপনার সতর্কতার সাথে আদা ব্যবহার করা উচিত।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা রক্তচাপের ওষুধ সেবনকারীদের জন্য আদা খুবই ক্ষতিকর। এই দুটি রোগের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ওষুধ এবং আদার মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অতএব, আপনার নিয়মিত ওষুধের পাশাপাশি আদা খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

  • গর্ভবতী মহিলা

গর্ভবতী মহিলাদের আদা খাওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন ধরণের উদ্দীপক রয়েছে যা শরীরের পেশীকে শক্তিশালী করে। এই কারণে, গর্ভবতী মহিলাদের আদা এড়িয়ে চলতে বলা হয়।

বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে আদা খাওয়া এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

কাদের জন্য অতিরিক্ত আদা খাওয়া ভয়ঙ্কর!
  • ওজন কম হলে

আপনার ওজন কম হলে অল্প পরিমাণে আদা খাওয়া উচিত। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা শরীরে পিএইচ মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে হজম প্রক্রিয়া খুব ভালোভাবে চলবে।

তবে পিএইচ মান খুব বেশি বাড়লে ওজন কমতে থাকবে।

  • হিমোফিলিয়াক

হিমোফিলিয়াকদের জন্য, আদা প্রায় বিষের মতো। অতএব, প্রথমে আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন আপনার কতটা আদা খাওয়া উচিত।

  • ওজন বৃদ্ধি করতে

আদা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। তাই আদা অতিরিক্ত ওজনের মানুষ এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কেউ যদি নিজের ওজন বৃদ্ধি করতে চায় তবে তাদের আদা কম সেবন করাই উচিত।

শেষ কথা,Conclusion :

শীতকাল মানেই বিকেলের চায়ে একটু আদা দিয়ে দেওয়া। এছাড়া রান্নার ক্ষেত্রে, তরকারি তৈরিতে আদা প্রায়শই অনেক খাবারে ব্যবহৃত হয়। তবে খুব বেশি আদা খাওয়া ভালো নয়, উপরের আলোচনা থেকে এই বিষয়টা আমরা বুঝতে পেরেছি।

আদা হিমোফিলিয়াকদের জন্য বিষাক্ত এক উপাদান। গর্ভবতীদের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত আদা সেবন ক্ষতিকর। তাই আদা খেতে হলে কতটুকু খেতে হবে তা জেনে নিন।

প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে আদা খেতে পারেন। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা আদার ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্য দিয়ে আপনারা এর সেবন নিয়ে সতর্ক হয়েছেন।

Frequently Asked Questions

কাদের জন্য অতিরিক্ত আদা খাওয়া ভয়ঙ্কর?

গর্ভবতী মহিলা, ঔষুধ সেবনকারী, হিমফিলিয়াক, ওজন কম হলে।

আদার মধ্যে কি কি উপাদান থাকে ?

আদায় প্রোটিন ২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩% , আঁশ ২·৪% , খনিজ পদার্থ, ১·২% জল ৮০·৮% ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং কিছু বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ যার শক্তিশালী ঔষধি উপকারিতা রয়েছে।

আদা খেলে কি ক্ষতি হয় ?

আদা একটি উপকারী উপাদান, কিন্তু অতিরিক্ত আদা সেবন করলে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts