কাঠ বাদাম খাওয়ার ক্ষতিকর দিকসমূহ, Harmful aspects of consuming Almonds in Bengali

কাঠ বাদাম খাওয়ার ক্ষতিকর দিকসমূহ

‘আমন্ড’ বা কাঠবাদাম স্বাদ ও স্বাস্থ্যগুণের কারণে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কাঠ বাদামে থাকে প্রোটিন, ভোজ্য আঁশ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামন E, তাই এর স্বাস্থ্যগুণের তালিকাও নেহাত ছোট নয়।

তবে অন্য সব স্বাস্থ্যকর খাবারের মতো এর অতিরিক্ত সেবনের ক্ষতিকর প্রভাবও আছে। তাই বলা যায় যে, আদর্শ খাবারের মধ্যে কাঠবাদামের নাম থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এর বদনামও রয়েছে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কাঠ বাদামের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করবো।

কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম, Almond consumption rules : 

ডায়েট বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন ৮-১০ টি কাঠ বাদাম খাওয়া ভাল। তবে মনে রাখবেন, একসাথে অনেক বাদাম খাওয়ায় আপনার শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম

বাদাম আপনার ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে এবং অনেক বেশি বাদাম খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, পেটে ব্যথা হতে পারে, এমনকি অসুস্থও হতে পারে। তাই পরিমিত মাত্রায় কাঠবাদাম খাওয়া উচিত। 

কাঠবাদাম খেলে কি কি সমস্যা হতে পারে ? What are the problems caused by consuming almonds?

পরিমিত পরিমাণে রোজ কাঠবাদাম খাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত কিছুই সেবন করা উচিত নয়। বাদাম বেশি খেলে কি কি সমস্যা হতে পারে দেখে নিন : 

১. কাঠ বাদামে রয়েছে  প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। তাই অত্যাধিক পরিমাণে কাঠ বাদাম খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিণ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

২. ভিটামিনের উৎস হিসাবে কোনো ব্যক্তি সারাদিন কাঠ বাদাম খেতেই পারেন। কিন্তু তাতে বিশেষ কোনও ক্ষতি হলেও কাঠ বাদামে যে ভিটামিন- E রয়েছে তার পরিমাণ আমাদের শরীরে বৃদ্ধি হয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। সেক্ষেত্রে ডায়েরিয়া, দুর্বলতা এমনকী চোখও খারাপ হয়ে যেতে পারে।

কাঠবাদাম খেলে কি কি সমস্যা হতে পারে ? 

৩. প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট এবং ক্যালোরি রয়েছে কাঠ বাদামের মধ্যে। ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে রয়েছে প্রায় ৫০ গ্রাম ফ্যাট, যার ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই যাদের ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রে কাঠ বাদাম এড়িয়ে চলা উচিত। 

৪. বেশি পরিমাণে কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে দেহে টক্সিন জমা হতে থাকে। এর কারণ হল কাঠবাদামে রয়েছে হাইড্রোকার্বন অ্যাসিড। এই অ্যাসিড দেহে বেশি জমলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়, নার্ভের সমস্যা হয়, এমনকী আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এজন্যই দিনে ৪০ গ্রামের বেশি কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত নয়। সুস্থ থাকতে পরিমিত পরিমাণে এর সেবন করাই শ্রেয়। 

 যাদের ক্ষেত্রে কাঠবাদাম খাওয়া একেবারেই নিষেধ, Who is forbidden to consume almonds?

কাঠবাদাম খেলে বহু উপকার পাওয়া যায়, তবে কিছু কিছু শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে কাঠবাদাম এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। নয়তো সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চিকিৎসকদের মতে এমন কিছু রোগ আছে যেক্ষেত্রে কাঠ বাদাম থেকে বিরত থাকা জরুরি। যেসব রোগের রোগীদের ক্ষেত্রে কাঠবাদাম খাওয়া একেবারেই নিষেধ, তারা হলেন : 

  • নির্দিষ্ট ওষুধ সেবনকারী ব্যক্তি

যেসব ব্যক্তি ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ সেবন করেন কিংবা নিয়মিত রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে কাঠবাদামকে খাদ্যাভ্যাসে যোগ করার পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত, কারণ এই বাদামে প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ থাকে।

একমুঠ কাঠবাদাম সেবনের মাধ্যমে মিলতে পারে প্রায় ০.৬ গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ, যা শরীরের দৈনিক চাহিদার প্রায় ২৭ শতাংশ।

এদিকে খাদ্যাভ্যাসের অন্যান্য খাবারেও উক্ত খনিজের উপস্থিতি বর্তমান; যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ম্যাঙ্গানিজ প্রবেশ করার মাধ্যমে তা ‘ল্যাক্সাটিভ’, ‘অ্যান্টিবায়োটিক’, রক্তচাপের ওষুধের কার্যকারিতা কম করে দিতে পারে। এতে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তথা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

  • বাদামে অ্যালার্জি
অ্যালার্জি

 বাদামে কোনো ধরনের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকলেই কাঠবাদাম এড়িয়ে চলা উচিত। অ্যালার্জির কারণে শরীর চুলকানি ও ত্বকের বিভিন্ন অংশে ফুলে ওঠা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি বিভিন্ন উপসর্গ যাদের ক্ষেত্রে দেখা দেয় তাদের আরও বেশি সাবধান থাকতে হবে।

এইসব উপসর্গ একসাথে দেখা দেওয়াকে ‘অ্যানাফিল্যাক্সিস’ বলা হয়, যা অনেক সময় প্রাণঘাতিও হয়ে উঠতে পারে। 

  • খাবার গিলতে সমস্যা হলে

শিশুদের ক্ষেত্রে কিংবা কিছু বয়ষ্ক মানুষের ক্ষেত্রে খাবার গিলতে না পারার সমস্যা হয়। শক্ত খাবার খাবার সময় তাদের কষ্ট হয়। এসব সমস্যার ক্ষেত্রে কাঠবাদামসহ সবধরনের বাদামেই এড়িয়ে চলা উচিত।

কোনোভাবে শক্ত এই খাবার যদি গলায় আটকে যায়, তবে সমস্যা বেড়ে গিয়ে দম বন্ধ করে দিতে পারে। অন্যদিকে যাদের ‘ডিমেনশিয়া’, ‘পার্কিনসন’স ডিজিজ’ এবং চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা আছে তাদের ক্ষেত্রেও এইসব খাবার না খাওয়াই উত্তম, কারণ তাদের ক্ষেত্রে দম আটকে যাওয়া ঝুঁকি বেশি থাকে। 

  • ভিটামিন E সাপ্লিমেন্ট নিচ্ছেন যারা

২৮ গ্রাম পরিমাণ কাঠবাদামের মধ্যে ভিটামিন E’র মাত্রা থাকে প্রায় ৭.৪ মিলিগ্রাম। শরীরের ভিটামিন E’র দৈনিক চাহিদা হল ১৫ মি.লি.গ্রাম।

তাই যেসব ব্যক্তি ভিটামিন E ‘সাপ্লিমেন্ট’ নিচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে আবার কাঠবাদাম সেবন করার ফলে ভিটামিন E ‘ওভারডোজ’ জনিত সমস্যা হতে পারে।

ওভারডোজের ফলাফল হল অবসাদ, দুর্বল দৃষ্টিশক্তি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হওয়া।

অতিরিক্ত কাঠবাদাম সেবনের ক্ষতিকর দিক, Harmful effects of excess almond consumption : 

  • ওজন বৃদ্ধির সমস্যা
ওজন বৃদ্ধির সমস্যা

অতিরিক্ত বাদাম সেবনের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রথমেই হল ওজন বৃদ্ধির সমস্যা। একথা থেকে আপনারা হয়তো ভাবছেন যে বাদামে উপকারী ফ্যাট থাকে, তবে কি করে এরূপ সমস্যা হবে?

জেনে রাখা ভালো যে, আপনি যদি প্রতিদিন কাঠ বাদাম খান তবে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। গবেষকদের মত অনুসারে, এক মুষ্ঠী বাদামের মধ্যে ১৭০ ক্যালোরি থাকে।

সঠিক ভাবে চিন্তা করতে গেলে, ডায়েটারি গাইডলাইন অনুসারে, প্রতিদিন আমাদের শরীরে ১৬০০ থেকে ২৪০০ ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। সেখানে বাদাম খেয়েই যদি আমরা এততাই ক্যালোরি গ্রহণ করি, তবে মোট ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এভাবেই বাড়তে থাকে ওজন।

  • দেহে মিনারেলের শোষণে বাধা দেয় :

কাঠ বাদাম হোক কিংবা অন্য কোনো বাদাম, বেশি খেলে তা শরীরে মিনারেল শোষণ কম করে দেয়। এর জন্য দায়ী হল বাদামে থাকা ফাইটিক এসিড।

উক্ত ফাইটিক এসিড আমাদের শরীরে আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে দেয়। এর ফলে অ্যালার্জি, খাদ্যনালিতে জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে। 

  • উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি :

 বাদামে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যখন হালকা লবণ যোগ করে বাদাম খাবেন তখন তা নিমেষে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।

লবণের অতিরিক্ত সোডিয়াম আমাদের দেহের রক্তপ্রবাহ থেকে জল এবং ফ্লুইড শোষণ করে নেয় যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা দেখা দেয়।

  • বাদামে প্রভাবে প্রদাহ সৃষ্টি হয় : 

বাদামে রয়েছে ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড, কিন্তু এতে ওমেগা-৩ থাকেনা। বাদাম বেশি খাওয়ার ফলে দেহে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬-এর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ফলে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

শেষ কথা, Conclusion :

এটা আমরা সকলেই জানি যে, কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। তাই বাদাম খাওয়াও অবশ্যই ভালো, তবে তা যেন শরীরের চাহিদার তুলনায় অধিক না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে করা আলোচনা থেকে আপনারা কাঠ বাদাম খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। 

Frequently Asked Questions:

কাঠ বাদাম বেশি খেলে কি হয়?

বদহজম, ডায়রিয়া, পেটব্যথাসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।

কাঠ বাদাম কতটা খাওয়া উচিত?

দিনে চার থেকে ছয়টি বাদামের বেশি খাওয়া উচিত না।

কাঠ বাদাম কখন খাওয়া উচিত?

সাধারণত বাদাম খালি পেটেই খাওয়া ভালো। সকালে বা বিকেলে বাদামের গুণাগুণ বেশি পাওয়া যায়। ভিজিয়ে খেতে পারেন বা না ভিজিয়েও।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts