কিসমিসকে শুকনো ফলের রাজাও বলা হয়। এই ফলের রয়েছে বিভিন্ন উপকারিতা। বিভিন্ন খাবারে স্বাদ বৃদ্ধিতে এটি ব্যবহৃত হয়। যেকোন মিষ্টি খাবারের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কিসমিস ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পোলাও, কোরমা এবং বিরিয়ানি ইত্যাদি বিভিন্ন খাবারে কিসমিসের ব্যবহার হয়। তবে প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত, সেটা নিয়ে সচেতন থাকাও জরুরী। নয়তো দেহে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
কিশমিশের বিস্তৃতি, Expansion of Raisin :
আঙ্গুর সাধারণত ইরাক, ইরান, পাকিস্তান ও ভারতে জন্মে থাকে। এই আঙুরকেই নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কিশমিশে রূপান্তরিত করা হয়।
কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়? How are raisins made?
কিসমিস তৈরি করা হয় সূর্যের তাপ অথবা আজকাল অনেকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সাহায্যে কিশমিশ তৈরি করেন। তাপের প্রভাবে আঙ্গুরের ফ্রুক্টোজগুলো জমাট বেঁধে পরিণত হয় কিশমিশে। এভাবেই আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি করা হয় মিষ্টি স্বাদের কিসমিস। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, যা হার্টকে ভাল রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।
কিশমিশ এর স্বাস্থ্য উপকারিতা, Health Benefits of Raisins :
জেনে নিন কিসমিস খাওয়ার ৭টি স্বাস্থ্য উপকারিতা :
1. হজমে সহায়ক :
কিসমিস পেটে ফাইবার ধারণ করে। এটি পেটে রেচক হিসেবে প্রভাব ফেলে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে সহায়তা করে। প্রতিদিন কিশমিশ খাওয়া নিয়মিত মলত্যাগে অবদান রাখে এবং কিশমিশের মধ্যে থাকা ফাইবারও শরীর থেকে টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।
2- পেটের সমস্যা কমায় :
কিসমিস পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ উপাদান। এটি অ্যাসিডিটি কমাতেও সাহায্য করে। এটি যে শুধুমাত্র শরীর থেকে টক্সিন দূর করে তা না বরং আর্থ্রাইটিস, গাউট, কিডনিতে পাথর এবং হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
3. রক্তাল্পতা দূর করে :
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন B রয়েছে, যা রক্তাল্পতা নিরাময়ে সহায়ক। কিশমিশে থাকা তামা লোহিত রক্তকণিকা গঠনেও সাহায্য করে।
4. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক :
কিশমিশে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা টিউমার এবং কোলন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিক্যালের কার্যকলাপ থেকে দেহ কে রক্ষা করে।
5. সংক্রমণ সারাতে সহায়ক :
কিশমিশে পলিফেনল ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে, যা প্রদাহবিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে বিবেচিত। এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জ্বরের ঝুঁকি কম কর সহায়ক এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
6.ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক :
কিশমিশ ফ্রুক্টোজ এবং গ্লুকোজ সমৃদ্ধ, যা আপনাকে প্রচুর শক্তি প্রদান করতে পারে। এছাড়াও এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয় এবং ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
7. ত্বকের জন্য ভালো :
কিশমিশ কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষ, কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের ফ্রি র্যাডিক্যাল ক্ষতি প্রতিরোধ করে। এটি বার্ধক্যের লক্ষণ যেমন বলিরেখা, সূক্ষ্ম রেখা এবং বয়সের দাগগুলির চেহারা ধীর করতে সাহায্য করে।
প্রতিদিন কয়টি কিসমিস খাওয়া উচিত? How many raisins should be eaten daily?
কিশমিশ উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার, 100 গ্রাম কিশমিশে প্রায় 320 ক্যালোরি থাকে। কিশমিশ খুব মিষ্টি, এবং তাদের চিনির পরিমাণ খুব বেশি। 100 গ্রাম কিশমিশে প্রায় 20 থেকে 30 গ্রাম চিনি থাকে। দিনে 20 থেকে 30 গ্রাম কিশমিশ খাওয়া বেশি উপযুক্ত।
কিশমিশ খেলে কি মোটা হয়? Does eating raisins make you fat?
কিসমিস খেলে ওজন কমতে পারে, আবার ওজন বাড়তেও পারে। এর কারণ হলো কিসমিস একটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসিতে প্রায় ২৮৭ ক্যালোরি থাকে। তাই অনিয়ন্ত্রিতভাবে কিশমিশ খেলে ওজন বাড়তে পারে।
সকালে খালি পেটে কিসমিস ভিজিয়ে খেলে কি হয়? What happens if you eat raisins on an empty stomach in the morning?
কিসমিস ভিজিয়ে রাখলে এতে থাকা ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরে শোষিত হয়। ফলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ক্লান্তি দূর হয়। কিসমিস ভিজিয়ে রাখলে এতে থাকা ফাইবার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে হজমশক্তি বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
কিসমিস কখন খেতে হয়? When to eat raisins?
প্রতিদিন রাতে ২কাপ জল নিয়ে তাতে কয়েকটি কিসমিস দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখবেন, দেখবেন এর রঙ গাঢ় হবে আর যতো গাঢ় হবে ততোই উপকারি। পরের দিন সকালে জল থেকে ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিন। এর আধা ঘন্টা পর অন্যান্য খাবার খান। এতে অতি শীঘ্রই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
খালি পেটে কিসমিস এর জল খেলে কি হয়? What happens if you eat raisins soaked in water on an empty stomach?
কিশমিশ ভেজানো জলের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের পরিমাণ যথেষ্ট। ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে এই পানীয়। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতেও সাহায্য করে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কিশমিশের জল।
দিনে কয়টি কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া উচিত? How many soaked raisins should be eaten a day?
ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন কতগুলো কিসমিস খেতে হবে তা আপনার জানা উচিত। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১৫-২০টি কিশমিশ ভেজানো ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর আরেকটি কার্যকরী উপায় হল কিশমিশ ভেজানো জল পান করা।
কিসমিস খেলে কি রক্ত বাড়ে? Does the blood level increase by eating raisins?
কিশমিশ খাওয়া আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে কারণ এটি আয়রনের একটি ভাল উৎস। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হলে রক্তাল্পতা নামে পরিচিত অবস্থা হয়।
কিসমিস আর আঙুর কি এক? Are raisins and grapes the same thing?
কিশমিশ বা কিসমিস হলো শুকনো আঙ্গুর। এটিকে ইংরেজিতে রেইসিনও বলা হয়। কিশমিশ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত হয় এবং এটি সরাসরি খাওয়া যায় ও বিভিন্ন খাদ্য রান্নার সময় উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রাচীনকাল থেকে শক্তি বা ক্যালরির চমৎকার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কিসমিস খেলে কি ঘুম আসে? Does eating raisins make you sleepy?
কিসমিস অনিদ্রার জন্য একটি কার্যকর প্রাকৃতিক প্রতিকার হতে পারে । কিশমিশের ট্রিপটোফ্যান এবং মেলাটোনিনের উচ্চ ঘনত্ব শিথিলতাকে উন্নীত করতে পারে এবং ঘুমের ধরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আপনার খাদ্যতালিকায় কিশমিশ যোগ করা, বিশেষ করে শোবার আগে, আপনার ঘুমের মান উন্নত করার একটি সহজ এবং কার্যকর উপায় হতে পারে।
কিসমিস বেশি খেলে কী হয়? What happens if you eat too many raisins?
কিশমিশে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, পটাসিয়াম, কপার এবং ভিটামিন B6 এর মতো পুষ্টি উপাদান। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে কিশমিশ খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তবে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। নয়তো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- হজমের সমস্যা:
কিসমিস ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত কিশমিশ খাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া এটি অন্যান্য পুষ্টির শোষণ হ্রাস করতে পারে। আপনারা হয়তো জানেন যে ফাইবার আমাদের শরীরের অতিরিক্ত তরল শোষণ করতে পারে। এটি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়রিয়ার প্রশমনে সহায়ক। কিন্তু অতিরিক্ত কিশমিশ খেলে দেহে জলশূন্যতা দেখা দেয়। এছাড়া বদহজম বা পেটে ব্যথার মতো বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। খুব বেশি কিশমিশ খাওয়ার বিষয়ে আরেকটি উদ্বেগ হল দ্রবণীয় ফাইবার বৃদ্ধি। অত্যধিক ফাইবার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে, যেমন ক্র্যাম্প, গ্যাস এবং ফোলা ।
- ত্বকের এলার্জি:
বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন খাবারের অ্যালার্জি থাকতে পারে। একইভাবে কিশমিশেও অনেকেরই অ্যালার্জি থাকে। প্রথমবার কিশমিশ খাওয়ার পর যদি কোনোও ধরনের ফুসকুড়ি বা চুলকানি থেকে সাবধান থাকুন। সমস্যা দেখা দিলে কিশমিশ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- ওজন বৃদ্ধি:
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। এমন পরিস্থিতিতে কেই ওজন কমাতে চাইলে তাদের ক্ষেত্রে কিশমিশ সীমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো। নয়তো ওজন কমানোর পরিবর্তে ওজন বৃদ্ধি হয়ে যেতে পারে।
- রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি:
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। তাই এটি উপকারী হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ক্ষতিকর হয়ে পারে। বেশি কিসমিস খাওয়ার ফলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে।
শেষ কথা, Conclusion :
কিশমিশ খেয়ে অনেকেই পছন্দ করেন। শুকনো ফলের মধ্যে এর বহু মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে আর জনপ্রিয়তা প্রচুর, থাকবে নাই না কেন! এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর আপনারাও হয়তো নিজের খাদ্যতালিকায় এই উপাদান যোগ করবেন। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলো আপনাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার কাজে সহায়ক হবে।
Frequently Asked Questions
দিনে 20 থেকে 30 গ্রাম কিশমিশ খাওয়া উচিত।
কিসমিস ভেজানো জল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কিশমিশের জল।
বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন : ত্বকে এলার্জি, রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি