সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়, Home remedies to get rid of cold in Bengali

সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

সর্দি হলে সাধারণত চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সর্দি হলে যেকোনো কাজ করতে গিয়ে অসুবিধা হয় এবং সারাদিন ধরে কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ হয়। সেক্ষেত্রে কিছু উপদেশ মেনে চললে ঘরে বসেই সর্দি থেকে আরাম পাওয়া যায়। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রায় সারাবছর জুড়েই সর্দির সমস্যা হয়, তবে শীত ও বসন্ত কালে সমস্যাগুলো বেড়ে যায়। বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই সর্দিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমানো যায়।

সর্দির লক্ষণসমূহ, Symptoms of cold

ফ্লু ও সাধারণ সর্দির লক্ষণ প্রায় একই রকম, অনেক সময় এগুলোর সাথে কাশিও যোগ হয়। সর্দি হলে সাধারণত যে সমস্যাগুলো হয় :

  • নাক দিয়ে জল পড়া।
  • নাক বন্ধ হয়ে থাকা, শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া।
  • চোখ জ্বালা করা, চোখ দিয়ে জল পড়া।
  • মাথা ব্যাথা।
  • একটু পর পর হাঁচি।
  • নাকের ভেতর চুলকানি।
  • অস্বস্তি বোধ হওয়া ইত্যাদি।
  • সর্দি হলে সাধারণত এই সমস্যাগুলো দেখা যায়, তবে অনেকের ক্ষেত্রে এসবের সাথে গলা খুসখুস করার সমস্যাও দেখা যায়। 
একটু পর পর হাঁচি

সর্দির ঘরোয়া চিকিৎসা, Home remedies for cold

দ্রুত সর্দি সারাতে প্রাথমিকভাবে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন—

বিশ্রাম নিন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান : 

চেষ্টা করুন যেন ভালোভাবে ঘুম হয়, তবে ঘুমের সময় অনেকের নাক বন্ধ হয়ে যায়, ফলে শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়ার ঘুম ভেঙে যায়। সেক্ষেত্রে নাকে সর্ষে তেল লাগিয়ে ঘুমোতে পারেন।

বিশ্রাম নিন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান

শরীর উষ্ণ রাখার চেষ্টা করুন : 

প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। কারণ সর্দিতে শরীর ডিহাইড্রেট হয়। তবে হালকা গরম জল পান করে ভালো। এছাড়াও তরল খাবারও এসময় উপকারী। যেমন: ফলের জুস, স্যুপ, ইত্যাদি।

এছাড়া সর্দির সাথে গলা ব্যথা থাকলেই সেই সমস্যা উপশমের জন্য লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম জল দিয়ে গড়গড়া করুন। তবে ছোটো শিশুরা ঠিকমতো গড়গড়া করতে পারে না বলে তাদের ক্ষেত্রে গরম জলে মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। শীতের দিনে সর্দি হলে গরম জামাকাপড়ের সাথে পায়ে মোজা ও গলায় মাফলার ব্যবহার করুন।

নাক বন্ধের ড্রপ ব্যবহার করুন : 

সর্দির সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে বাজার থেকে ‘ন্যাসাল ডিকনজেসট্যান্ট’ এনে ঘুমানোর আগে নাকে ড্রপ দিতে ঘুমাতে পারেন। নাক বন্ধ উপশমে এসব ড্রপ ব্যবহার করা যায়। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার না করে ভালো। এই ড্রপ বাচ্চাদের এবং বড়দের ক্ষেত্রে আলাদা হয়। বড়দের ড্রপ ভুল করেও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবেন না।

আদা- তুলসী দিয়ে চা পান করুন : 

সর্দির সমস্যায় চা বেশ আরাম দেয়। তবে এসময় সাধারণ চা না খেয়ে বরং আদা, তুলসী, লং ইত্যাদি দিয়ে চা তৈরি করে খান। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে এবং সর্দিতে আরামও পাবেন। আপনি চাইলে এক টুকরো আদা নিয়ে মুখে চিবোতে পারেন। আদার রস বুকের কফ বা শ্লেষ্মা শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করবে।

আদা- তুলসী দিয়ে চা পান করুন

রসুন তেলের ব্যবহার :

সর্দির সময় সর্ষের তেলে কয়েক কোয়া রসুন দিয়ে ভালোভাবে গরম করে নাক সহ সারা শরীরে তথা গলা ও বুকে ভালোভাবে লাগিয়ে একটু সময় রোদে বসে তারপর হালকা গরম জল দিয়ে স্নান করুন। রসুন তেল সর্দি সারাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

পেঁয়াজের ব্যবহার : 

পেঁয়াজের ঝাঁঝ চোখ- নাক পরিষ্কার করতে বেশ কার্যকরী। সুস্থ অবস্থায় পেঁয়াজ কাটতে বসেই চোখ নাক থেকে জল বের হয়ে যায়, ফলে চোখ পরিষ্কারও হয় বটে। তবে সর্দির সময়ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পেঁয়াজ ব্যবহার করা যায়।

এরজন্য একই পরিমাণের পেঁয়াজের রস, লেবুর রস, মধু এবং জল একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। এই ভাবে সামান্য উষ্ণ এই জল দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার পান করুন। উপকার পাবেন।

লেবু ও মধুর মিশ্রণ : 

লেবু ও মধুর মিশ্রণটিও সর্দির সময় আদা চায়ের মতোই অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা পালন করে। এই মিশ্রণ তৈরি করার জন্য এক গ্লাস গরম জলে দুই চা চামচ মধু নিয়ে তাতে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে পান করলে সর্দি-কাশি তাড়াতাড়ি দূর হবে।

হলুদ মিশ্রিত দুধ সেবন : 

হলুদে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা ব্যথা সহ বিভিন্ন ভাইরাসজনিত ইনফেকশন সারাতেও কার্যকর। সর্দি হলে মাথা ব্যথার পাশাপাশি শরীরে মেজমেজ করে, এই সমস্যা দূর করতে গরম দুধের সঙ্গে খানিকটা হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে পান করলে সর্দি ও গলা ব্যথা থেকে অতি দ্রুত মুক্তি পাওয়া যাবে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

হলুদ মিশ্রিত দুধ সেবন

গোলমরিচ গুঁড়োর ব্যবহার :

 সর্দি ও কাশির সমস্যায় গোলমরিচ বেশ কার্যকরী উপাদান। এর সেবনে গলায় খুসখুসির সমস্যাও নিমেষে দূর হয়ে যায়। সর্দি হলে গরম জলে এক চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে তার সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে নিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এভাবে রেখে দিলে গোলমরিচের দানা নিচে জমা হয়ে যাবে এবং জলে এর ঝাঁঝ থেকে যাবে। এবার এই জল ধীরে ধীরে পান করুন। গোলমরিচের ঝাঁঝের কারণে বেশ আরাম পাবেন এবং অতি দ্রুত ঠাণ্ডা অনুভূতি তথা সর্দি থেকে মুক্তি পাবেন।

উষ্ণ জলে ভাপ নেওয়া: 

সর্দি থেকে মুক্তি পেতে লবণ জলে গার্গল করেন অনেকেই, এতে বুকে জমে থাকা কফ বের হয় ফলে বেশ হালকা বোধ হয়; এর মতোই বেশ কার্যকর আরেকটি পদ্ধতি হল উষ্ণ জলে ভাপ নেওয়া। সর্দির কারণে অনেক সময় মাথা ভার লাগে এবং ব্যথাও হয়, তাছাড়া নাকে জমে থাকা সর্দি অনেক সময়ে সহজে বের হতে চায় না।

তখন উষ্ণ জলে ভাপ মিলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। ভাপের মাধ্যমে উষ্ণ বাতাস সর্দি কমাতে এবং ফুসফুস সচল রাখতে সহায়তা করে। সর্দি হলে সকাল-বিকেল উষ্ণ জলে ভাপ মিলে সর্দি থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এরজন্য জল ভালোভাবে গরম করে তাতে ভিক্স বা কোনো ঝাঁঝালো বাম জাতীয় কিছু মিশিয়ে নিয়ে একটি গামলায় গরম জল নিয়ে সেই জলের সামনে মুখ এনে উপর থেকে কোনো পাতলা কাপড় দিয়ে মাথা সহ গামলা পুরোপুরি ঢেকে উষ্ণ বাতাস নাকের সাহায্যে ভেতরে টেনে নিন।

উষ্ণ জলে ভাপ নেওয়া

এভাবে কিছুক্ষন ধরে এই গরম ভাপের মধ্যে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস নিন, ১০ মিন ধরে এভাবে করলে নাক পরিষ্কার হবে এবং নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যাও থাকবে না। এভাবে সর্দির কারণে জমে থাকা শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসবে এবং আপনিও বেশ আরাম পাবেন। 

শেষ কথা, Conclusion 

অনেকের ক্ষেত্রে শীতের দিনে সর্দির সমস্যা বেশি হয় আবার কেউ কেউ শীত- গ্রীষ্ম বারো মাস ধরেই সর্দিতে ভোগেন। ঘন ঘন সর্দি কাশি হলে অনেকেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করেন যার কারণে বুকে জমে থাকা কফ বা শ্লেষ্মা শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না। তাই কিছু দিন পর পর সর্দি বা কাশি হয়। তাছাড়া শীতের দিনে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম হয়ে যায়, যার কারণে সহজেই রোগ আমাদের শরীরে বাসা বেঁধে নেয়। উপরিউক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করে আপনারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্দি কাশি তথা ফ্লু এর সমস্যা থাকে রেহাই পেতে পারেন।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts