ইসবগুলের ভুসি খেলে কি উপকার হয়, Benefits of taking Isabgol husk in Bengali

ইসবগুলের ভুসি খেলে কি উপকার হয়

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘদিন যাবৎ পেটের নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ওষুধ খেয়েও গ্যাস অম্বলের সমস্যা মিটছে না, অনেকে আবার দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন; কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া যদি এসব সমস্যার সমাধান পেতে চান তবে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী হবে ইসবগুলের ভুসি। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

ইসবগুলের ভুসির ঔষধি গুণ, Medicinal properties of Isabgol husk

ইসবগুলের ভুসিতে নানা ধরণের ঔষধিগুণ রয়েছে। প্ল্যান্টাগো ওভাটা নামক গাছের বীজের খোসা থেকে তৈরি হয় এই ঔষধ। এটি হল এক ধরণের ঔষধি গাছ যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণ রয়েছে।

তাছাড়া ইসুবগুলে অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যে উপাদান শরীরের বিভিন্ন উপকার সাধনে ভূমিকা রাখে। ১ টেবিল চামচ ইসবগুলে থাকে ৫৩% ক্যালোরি, ০% ফ্যাট, ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৫ গ্রাম শর্করা, ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৯ মিলিগ্রাম আয়রন। জেনে নিন ইসবগুলের ভুসির ঔষধি গুণ সম্পর্কে :

  • আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এটি ভেষজ ঔষধ হিসেবে স্বীকৃত। তাছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহৃত কেমিক্যালযুক্ত ঔষধের আবিষ্কারের পূর্বে পেটের বিভিন্ন অসুখ সরাতে এটি ব্যবহার করা হতো।
  • এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
  •  এতে থাকা ফাইবার আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
  • ইসবগুলের ভুসি মুত্রপ্রদাহ ও মূত্র স্বল্পতার সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 
  • এটি খাওয়ার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা কোনো রকম বিষক্রিয়া হয় না, বরং এটি পাকস্থালিতে গিয়ে এক ধরণের আবরণ সৃষ্টি করে দেয় যা এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
ইসবগুলের ভুসির ঔষধি গুণ

ইসবগুলের ভুসির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন, Benefits of Isabgol husk in Bangla

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক:

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এতে অদ্রবণীয় ফাইবার উপস্থিত থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের মল নরম করে দেয়, ফলে পেট খুব পরিষ্কার হয়। সেজন্য প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি ও ১ গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করতে পারেন। 

রক্তে কোলেস্টেরল কম করতে সহায়তা করে:

ইসবগুলের ভুসি খেলে অন্ত্রে একধরনের স্তর তৈরি হয়, যা খাদ্য থেকে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দান করে, ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে না বরং কম হয়ে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। হৃদরোগীদের জন্য এটি খুব ভালো ঔষধ।

ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে :

অনেকেরই ডায়রিয়ায় সমস্যা হতে থাকে। তাদের সুস্থ করে তুলতে দারুণ টনিক হিসেবে কাজ করে ইসবগুলের ভুসি ও দই। দুটি একসাথে মিশিয়ে খাওয়ার ফলে সহজেই ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাবেন।

ওজন কম করতে সহায়তা করে:

ইসবগুলের ভুসিতে ফাইবার উপস্থিত থাকে বলে এটি হজম প্রক্রিয়া ধীরগতিতে সম্পন্ন হতে সাহায্য করে। তাই সহজে ক্ষুধা লাগে না ফলে এটি খেলে ওজন কমানো অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

ওজন কম করতে সহায়তা করে

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক :

ইসবগুলের ভুসিতে জিলাটিন নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা দেহে গৃহীত খাদ্যের থেকে গ্লুকোজের শোষণ ও ভাঙার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে দেয়, যার ফলস্বরূপ রক্তে সুগারের পরিমাণ সহজে বাড়তে পারে না। এজন্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এই ভুসি খুবই উপযোগী।

অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে :

ইসবগুলের ভুসিতে থাকা ফাইবার আমাদের পাকস্থলীতে একটি আস্তরণ তৈরি করে দেয়, যার ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয় না। এছাড়া হজম প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে এই ঔষধি ভুসি।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে :

প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়ার সমস্যা অনেকেরই হয়ে থাকে। তাদের এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা পালন করে ইসবগুলের ভুসি। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা কমবে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আখের গুড়ের সাথে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। সকাল ও বিকালে এটি তৈরি করে খেতে পারেন।

প্রতিদিন কি পরিমাণ ইসবগুলের ভুসি খেতে পারবেন, Quantity of isabgol husk to be taken daily  

ইসবগুল খাওয়ার কারণে সাধারণত কোনো সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা যায় না। তবে সবকিছুই একটা পরিমিত মাত্রায় সেবন করা সঠিক। ইসবগুল নিত্যদিন সেবন করতে হলে দিনে ২ বার খেতে পারবেন। তবে এটি অবশ্যই জলে মিশিয়ে খেতে হবে।

প্রতিদিন কি পরিমাণ ইসবগুলের ভুসি খেতে পারবেন

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম হলো, রাতে দুই বা তিন চামচ ইসবগুলের ভুসি এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে সকালে তা শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। কিন্তু এছাড়াও আরো অনেক নিয়ম আছে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার, তবে যেভাবেই খাওয়া হোক, এই ঔষধি সেবনের সঙ্গে সারাদিন পর্যাপ্ত জল পান করাও জরুরী। মনে রাখবেন ইসবগুলের ভুসি খেয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খাওয়ার ফলে খাদ্যনালি এবং অন্ত্রের মুখ আটকে থাকতে পারে, ফলে পরিপাকতন্ত্রে খাবারের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। 

ইসবগুলের ভুসি কোন পরিস্থিতিতে খাওয়া উচিত না? Under what circumstances isabgol husk is to be avoided?

ইসবগুলের ভুসি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে, এতে কোনো সন্দেহ নেই, তবে কিছু বিশেষ শারীরিক পরিস্থিতিতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত, নয়তো বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এমন কিছু বিশেষ পরিস্থিতির কথা নিচে তুলে ধরা হলো—

  • ১. ঘুমোতে যাওয়ার ঠিক আগে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া উচিত নয়। এতে ঘুমের সময় বৃহদান্ত্রের মুখে ভুসি জমা হয়ে সেই অংশ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যাকে ‘অবস্ট্রাকশন’ বলা হয়।
  • ২. যদি কোনো কারণে পেটেব্যথা, বমিবমি ভাব বা বমি হয়
  • ৩. আগে যদি কখনও ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে শরীরে কোনোও ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, তবে আর তা না খাওয়াই ভালো।
  • ৪. দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হওয়ার কারণে যদি পায়খানা জমে পায়ুপথের মুখে আটকে যায় তবে এমন অবস্থায় ইসবগুলের ভুসি না খাওয়া ভালো।
  • ৫. মলত্যাগের ধরণ বা অভ্যাসে যদি হঠাৎ কোনোও রকম লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে আর সেই পরিবর্তন যদি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, তবে এমন অবস্থায় ইসবগুলের ভুসি সেবন না করাই উচিত।
  • ৬. পায়ুপথ দিয়ে রক্ত যাওয়ার মত সমস্যা থাকলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া শুরু না করাই উচিত।
  • ৭. বৃহদান্ত্রের মাংসপেশির দুর্বলতা বা ধীরগতি জনিত কোনো রোগ থাকলে ইসবগুলের ভুসি সেবন না করা শ্রেয়।
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হওয়ার কারণে যদি পায়খানা জমে পায়ুপথের মুখে আটকে যায় তবে এমন অবস্থায় ইসবগুলের ভুসি না খাওয়া ভালো।

ইসবগুলের ভুষির অপকারিতা, Bad effects of isabgol husk 

আপনি যদি নতুন নতুন ইসবগুলের ভুসি সেবন শুরু করে থাকেন তবে সঠিকভাবে খাওয়ার নিয়ম জেনে নেওয়া ভালো। তা না হলে ভুল করে কখনো দৈনিক প্রয়োজনীয় মাত্রার অধিক পরিমাণে ইসবগুলের ভুসি খেয়ে নিলে আপনার বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন : কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা এবং মোচড়ানোর মত অনুভূতি, ডায়রিয়া, গ্যাস, অম্ল, বমি বমি ভাব এবং বমি ইত্যাদি। এমনটা হলে অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার খুবই বিরল কিছু ঝুঁকি হলো,

শ্বাসকার্যের সমস্যা, চুলকানি, চামড়ায় লাল লাল ফুসকুড়ি, ফোলা, বিশেষ করে মুখ এবং গলার চারপাশে ইত্যাদি। তাই প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে একদম দ্বিধা করবেন না।

উপসংহার, Conclusion 

দীর্ঘদিন একটানা ইসবগুলের ভুসি খাওয়া ঠিক নয়, এতে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ডায়রিয়া ও অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। তাছাড়া যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানের জন্য একটানা ৩ দিন ইসবগুলের ভুসি খেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যার যদি কোনো সমাধান না হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এক কথায় ঔষধী গুণ আছে বলে এই ইসবগুলের ভুসি অত্যধিক সেবনের চিন্তা মাথায় না রাখাই ভালো।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts