ইসবগুলের ভুসি সম্পর্কে সকলেই হয়তো জানেন। শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে ইসবগুলের ভুসি উপকারী। তবে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে কি নিয়মে আর সেবন করতে হয় সে বিষয়ে অনেকেই সতর্ক নয়। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, Isabgul consumption rules :
ইসবগুল আমাদের দেহের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। শারীরিক সমস্যা যেমন : কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা, ডায়াবেটিস, আমাশয়, হৃদরোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি সেবন উপকারী। তবে বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে সেবনের নিয়ম ভিন্ন। এখানে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম আলোচনা করা হলো :
কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে ইসবগুল কিভাবে খাবেন ?
ইসবগুল সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ব্যবহৃত হয়। তবে উক্ত সমস্যা দূর করতে এটি কিভাবে খাবেন জেনে নিন :
- ১-২ চামচ ইসবগুল নিয়ে ২৪০ মিলিলিটার জলে তা মিশিয়ে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেতে হবে।
- ইসবগুল পায়খানায় জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেয়, ফলে পায়খানা নরম থাকে এবং সহজে বের হতে সাহায্য করে।
- কতটা পরিমাণ ইসবগুল খেতে হবে, সেটা ব্যক্তির বয়স, ওজন, শারীরিক অন্যান্য অসুস্থতার ওপর নির্ভর করে। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
- যারা দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকঠিন্যতায় ভুগছেন তারা ২ মাস নিয়মিত ইসবগুল খেলে কোষ্ঠকঠিন্য দূর হবে। পেট স্বাভাবিক হলে সপ্তাহে ১-২ দিনের বেশি না খাওয়াই ভালো।
ডায়রিয়া চিকিৎসায় ইসবগুল কিভাবে খাবেন ?
ইসবগুল বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ডায়রিয়া চিকিৎসায় ইসবগুল সেবন করা যায়। কিভাবে তা দেখে নিন :
- কারও ডায়রিয়া হলে কিছু খাওয়ার পর ২ চামচ ইসবগুল ৩ চামচ দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
- প্রতিদিন এই নিয়মে যদি ইসবগুল সেবন করেন তবে পায়খানা নরম হওয়ার বদলে শক্ত হবে। এই পদ্ধতিতে দই প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করবে।
- ইসবগুল সেবনের মাধ্যমে যে কারণে ডায়রিয়া হয়েছে, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস খাদ্যনালির যে ক্ষতি সাধন করে, তা সেরে যাবে।
দীর্ঘদিন হজমের সমস্যা দূর করতে ইসবগুলের ব্যবহার কিভাবে করবেন?
পেট পরিষ্কারে ওষুধের চেয়ে ইসবগুল অনেকগুণে উপকারী। ইসবগুলের ভুসি প্রাকৃতিকভাবে আমাদের সুস্থ রাখে। দীর্ঘদিন হজমের সমস্যা দূর করতেও ইসবগুলের ব্যবহার করা যায়। কিভাবে তা করতে হবে দেখে নিন :
- প্রতিদিন ২ চামচ ইসবগুল ২৪০ মিলিলিটার জলে মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেবন করতে হবে।
- ইসবগুল আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার করে।
- ইসবগুল খাদ্যনালিকে রাখে টক্সিনমুক্ত, অন্ত্রে থাকা ক্ষতিকর পদার্থ সহজে শরীর থেকে বের করে দেয়।
অর্শ্বরোগ নিরাময়ে ইসবগুলের ব্যবহার কিভাবে করবেন?
অর্শ্বরোগ অনেক সময় ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতেও রূপান্তরিত হতে পারে। তবে এই সমস্যার সমাধান করতে ইসবগুলের ভুসি উপকারী। অর্শ্বরোগ নিরাময়ে ইসবগুলের ব্যবহার কিভাবে করবেন তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- কুসুম গরম জলে ২ চামচ ইসবগুল মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেবন করতে হবে।
- এভাবে সেবন করলে পায়খানায় জলের পরিমাণ বাড়ে, ফলে পায়খানা নরম থাকে, ফলে মল ত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব হয় না।
- ইসবগুলের ভুসি উক্ত পদ্ধতিতে সেবন করলে পায়খানা নরম থাকার ফলে বৃহদন্ত্রে কম চাপ পড়ে এবং মল ত্যাগের সময় কম রক্তপাত হয়।
হৃদরোগ নিরাময়ে ইসবগুল কিভাবে খাবেন ?
উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত ব্যক্তিদের কোলেস্টেরল কমাতে ইসবগুল উপকারী। কোলেস্টেরল কমায় বলে ফলে দেহে রক্তচলাচল সঠিক থাকে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
- প্রতিদিন খাবারের পর ইসবগুল খেতে পারেন, এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম হয়।
- ইসবগুল শরীর থেকে টক্সিন অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং এইভাবে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা পরিচালনা করে।
বুক জ্বালাপোড়া বা গ্যাসের সমস্যা দূর করতে ইসবগুল কিভাবে ব্যবহার করবেন?
গ্যাসের সমস্যা দূর করতে ইসবগুল সেবন করতে পারেন। এক্ষেত্রে কিভাবে সেবন করতে hobecdekhe নিন :
- ১/২-১ চামচ ঠান্ডা দুধে ২ চামচ ইসবগুল মিশিয়ে খাবার গ্রহণ করার পর সেবন করলে অ্যাসিডের সমস্যা দূর হয়।
- দুধ ও ইসবগুল পেটে গিয়ে অ্যাসিড প্রশমিত করে।
- ইসবগুল আমাদের পাকস্থলী ও খাদ্যনালির ভেতরে আলাদা একটি পর্দা তৈরি করে দেয়, যা অ্যাসিড থেকে খাদ্যনালীর পর্দাকে রক্ষা করে, এতে বুক জ্বালাপোড়া কম হয়।
- ইসবগুল ও দুধের প্রভাবে পাকস্থলী থেকে সঠিক পরিমাণ অ্যাসিড নিঃসৃত করে। ফলে বুক জ্বালাপোড়া বা গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
আমাশয় থেকে পরিত্রাণ পেতে কিভাবে ইসবগুল খাবেন ?
ইসবগুল আমাশয়ের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না, তবে শরীর থেকে সেই জীবানু বের করে দিতে পারে। ওষুধ খেয়ে আমাশয় দূর করতে গিয়ে জীবাণুগুলো পেটের ভেতরে মরে গেলেও শরীর থেকে বের হয় না; তাই আবারও আমাশায় রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এক্ষেত্রে যা করতে হবে :
- আমাশয়ের রোগীরা সকালে ও রাতে একগ্লাস ইসবগুলের শরবত খেলে উপকার পাবে।
- এছাড়াও প্রতি রাতে ভুসি খেয়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করলে আমাশয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
ইউরিনে জ্বালাপোড়া দূর করতে ইসবলগুল সেবন :
যেসব ব্যক্তির ইউরিনে জ্বালাপোড়া আছে তাদের ক্ষেত্রে ইসবলগুল সেবন উপকারী।
- সকালে-বিকালে শরবতের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমবে। পাশাপশি ইউরিনের রং স্বাভাবিক থাকবে।
- এছাড়াও হাতে, পায়ে জ্বালাপোড়া ও মাথা ঘোরানোর সমস্যা থাকলে আখের গুড়ের সঙ্গে ইসবগুলের ভুসি মিলিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেয়ে দেখতে পারেন, এতে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
ওজন কমাতে ইসবগুলের খাওয়ার নিয়ম :
ওজন কমানোর জন্য ইসবগুলের ভুসি সেবন করতে পারেন। এক্ষেত্রে যা করবেন :
- ২ চামচ ইসবগুল ২৪০ মিলিলিটার জল ও ১-২ চামচ লেবুর রসের সাথে একটি গ্লাসে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এর ফলে অনেকটা সময় পেট ভরা থাকে।
- ইসবগুল আমাদের খাদ্যনালি পরিষ্কার রাখে ও শরীরে জমে থাকা চর্বি কমায়।
ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইসবগুল কিভাবে খাবেন?
উল্লেখ্য বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ইসবগুল উপকারী ভূমিকা পালন করে। এই সমস্যায় কিভাবে ইসবগুল খাবেন দেখে নিন :
- ২৪০ মিলি জলের সঙ্গে ১-২ চামচ ইসবগুল মিশিয়ে খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কম হয়।
- একটা কথা মনে রাখতে হবে যে ডায়াবেটিস রোগীরা দইয়ের সঙ্গে ইসবগুল সেবন থেকে বিরত থাকবেন।
ইসবগুল সেবনে কিছু সতর্কতা জরুরি, Precautions for Isabgul consumption :
- অতিরিক্ত ইসবগুল সেবনের ফলে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে।
- ওষুধ সেবনের ২ ঘণ্টা আগে অথবা পরে ইসবগুল সেবন করতে হবে, কারণ ইসবগুল বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে।
- ইসবগুল দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে তা শোষণ করে ফুলে যায়। এর ফলে এই ভিসির কার্যকারিতা কমে যায়। ফুলে যাওয়ার কারণে এটি গলায় আটকে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- প্রাপ্তবয়স্কদের বা বয়স্কদের জন্য প্রস্তাবিত দৈনিক ডোজ 7-11 গ্রাম এক থেকে তিন ডোজ যেখানে শিশুদের জন্য প্রস্তাবিত ডোজটি প্রাপ্তবয়স্কদের ডোজের অর্ধেক বা দুই তৃতীয়াংশ।
এসব বিষয় ছাড়াও একটি কথা মাথায় রাখতে হবে যে, ইসবগুলের কার্যকারিতা এর খাওয়ার পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। তাই বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে সেবনের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি জেনে ইসবগুল খেতে হবে।
শেষ কথা, Conclusion :
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে পরিমিত পরিমাণে ইসবগুলের ভুসি প্রতিদিনের ডোজ হিসেবে শরীর দ্বারা খুব ভালভাবে গৃহীত হয়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে সঠিক নিয়মে ইসবগুলের ভুসি সেবনের অভ্যাস করতে পারেন।
আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলো থেকে আপনারা কোন ধরনের সমস্যায় কোন নিয়মে ইসবগুলের ভুসি সেবন করতে হবে তা জানতে পেরেছেন।
Frequently Asked Questions
ইসবগুল বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ডায়রিয়া চিকিৎসায় ইসবগুল সেবন করা যায়। ডায়রিয়া হলে কিছু খাওয়ার পর ২ চামচ ইসবগুল ৩ চামচ দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।
হজম প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা দূর করতে ও পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে রোজ সকালে খালি পেটে ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।
প্রাপ্তবয়স্কদের বা বয়স্কদের জন্য প্রস্তাবিত দৈনিক ডোজ 7-11 গ্রাম এক থেকে তিন ডোজ যেখানে শিশুদের জন্য প্রস্তাবিত ডোজটি প্রাপ্তবয়স্কদের ডোজের অর্ধেক বা দুই তৃতীয়াংশ।