কিডনি রোগের লক্ষণ ও যাবতীয় তথ্য, Kidney disease symptoms and detailed information in Bengali

কিডনি রোগের লক্ষণ ও যাবতীয় তথ্য

আজকাল প্রায় সব বাড়িতেই কিছু না কিছু রোগ লেগে থাকে, বিশেষ করে কিডনির সমস্যা যেন আমাদের প্রায় সকলের বাড়িতেই কারও না কারও আছেই। প্রথম থেকে সচেতনতা অবলম্বন করলে সহজে কিডনির সমস্যা দেখা দেয় না, কিন্তু একবার সমস্যা দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে, আর যদি কিডনির সমস্যা বেড়ে যায় তখন এর সম্পূর্ণ নিরাময় অনেক সময় অসম্ভব হয়, যা দেহের অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করে।

কিডনি রোগের লক্ষণ ও যাবতীয় তথ্য

তবে একটু সচেতন থাকলেই আমরা এসব দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। শরীরের অর্ধেক কাজই করে কিডনি। তাই এই অতিমূল্যবান অঙ্গকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব সকলের। তাই আজকের এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে আমরা কিডনির রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের কিছু উপায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

কিডনির কাজ কি, Role of the kidneys

কিডনি যে শুধুমাত্র আমাদের শরীরের রক্ত শোধন করে তা না, এটি দেহের বর্জ্য নিষ্কাশনও করে; তাছাড়াও দেহে রক্তকণিকা তৈরি হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, আমাদের হাড়ের সুস্থতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, জল ও লবণের ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি সহ আরও নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এজন্যই কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের দেহের অন্য অঙ্গের উপরও কু-প্রভাব পড়ে।

কিডনির ক্ষতি কি কি কারণে হতে পারে, What causes kidney damage?

বিভিন্ন কারণে কিডনির ক্ষতি হতে পারে। তবে প্রধান কিছু কারণ আছে যার জন্য কিডনির সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলি হল : 

  • পর্যাপ্ত জল পান না করার ফলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। যেসব কারণে কিডনির ক্ষতি হয় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো পর্যাপ্ত জল পান না করা। 
  • দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে থাকা। প্রস্রাব আটকে রাখা উচিত না।
  • বেশি লবণ খাওয়ার অভ্যাস রাখা উচিত না।
  • ক্যাফেইনে বেশি আসক্তি থাকার ফলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ব্যথানাশকের প্রতি নির্ভরশীলতা না রাখাই ভালো।
  • বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া উচিত না।
  • অ্যালকোহলে আসক্তি থাকার ফলে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
  • ধূমপানে আসক্তি না থাকা উচিত।
কিডনির ক্ষতি কি কি কারণে হতে পারে

কিডনির রোগের বিভিন্ন লক্ষণসমূহ, Various symptoms of kidney disease

আমাদের কিডনি সম্পর্কিত নানা ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, তবে বিভিন্ন রোগের লক্ষণও আলাদা আলাদা হয়। এই ভিন্ন লক্ষণগুলোর মধ্যে যেসব উপসর্গ প্রধানত পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল :

  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে চোখ ফুলে যাওয়া।
  • হঠাৎ মুখ এবং পা ফুলে যাওয়া।
  • ক্ষুধামান্দ্য , বমি ভাব , দুর্বল ভাব অনুভব করা।
  • বার বার প্রস্রাবের বেগ পাওয়া, বিশেষ করে রাত্রের দিকে।
  • কম বয়সেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেওয়া।
  •  রক্ত ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
  • অল্প কিছুক্ষণ হাঁটার পর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, কোনো কাজ করতে গিয়ে তাড়াতাড়ি ক্লান্তি অনুভব করা।
  • ৬ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরও রাত্রে বিছানায় প্রস্রাব করা।
  • সাধারণ মাত্রার তুলনায় প্রস্রাব কম আসা।
  • প্রস্রাব করার সময় জ্বালা অনুভব করা এবং প্রস্রাবের সাথে রক্ত বা পুজ-এর নির্গত হওয়া।
  • প্রস্রাব করার সময় কষ্ট অনুভব হওয়া। অল্প করে বা ফোঁটা ফোঁটা করে প্রস্রাব হওয়া।
  • প্রায়ই পা আর কোমরের যন্ত্রণা হওয়া।

উল্লেখিত সকল লক্ষণগুলির মধ্যে কোনও একটি দেখা দিলেই বুঝতে হবে যে আমাদের কিডনির কোনো রোগের সম্ভাবনা রয়েছে এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

কিডনির রোগের বিভিন্ন লক্ষণসমূহ

কিডনির রোগ নির্ণয় করার বিভিন্ন উপায়, Different ways to diagnose kidney disease

কিডনির জটিল সমস্যাগুলোর চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল, আবার কিছু রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করাই সম্ভব হয় না। কিছু কিছু কিডনির রোগের লক্ষণ শুরুতে প্রকাশ পায় না, তাই যখনই এমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় যা কিডনির রোগের আশঙ্কা সৃষ্টি করে, সেক্ষেত্রে বিনা বিলম্বে তখনই ডাক্তারবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত।

কিডনির রোগের নির্ণয় করার জন্য আবশ্যক পরীক্ষাগুলি কি কি, Necessary tests to diagnose kidney disease

কিডনির সমস্যা নির্ণয়ে প্রস্রাবের পরীক্ষা

কিডনি রোগের নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রস্রাব পরীক্ষা অতি প্রয়োজনীয় কারণ মূত্রনালিতে সংক্রমণ হওয়ার ফলে সাধারণত প্রস্রাবের পুঁজ আসে। এবার প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বা রক্তকণিকা বেরিয়ে আসলে একে গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস এর লক্ষণ বলে ধরা হয়। তাছাড়া প্রস্রাবের পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির বিভিন্ন রোগের ব্যাপার জানা যায়। কিন্তু প্রস্রাব পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক হলেও কিডনির যে কোনও সমস্যা নেই সেটা নিশ্চিত বলা যায় না।

কিডনির রোগ নির্ণয় করতে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা- নিরীক্ষা

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা : রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি যেমন রক্তাল্পতা, অ্যানিমিয়া ইত্যাদির কারণে কিডনি ফেল হবার সম্ভাবনা থাকে। রক্তে ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার মাত্রা এবং কিডনির কার্যক্ষমতা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়। এবার কিডনির বিভিন্ন রোগের নির্ণয়ের জন্য রক্তের অন্যান্য পরীক্ষাও করা যায়, সেগুলি হল কোলেস্টোল, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফেটস, কমপ্লিমেন্টস ইত্যাদি।

কিডনির রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা দ্বারা রোগ নির্ণয়

কিডনির সোনোগ্রাফি : এই পদ্ধতিতে কিডনির অবস্থান, মূত্রমার্গের অবরোধ, পাথরের উপস্থিতি ইত্যাদি ব্যাপারে জানা যায়। বিশেষত, ক্রনিক কিডনি ফেলিওর-হলে রোগীর কিডনির সংকোচন এই পরীক্ষার দ্বারা বোঝা যায়। 

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা

উক্ত পরীক্ষা ছাড়াও আরো বেশ কিছু পরীক্ষা আছে যা কিডনির বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে। যেমন কিডনি বায়োপসি,  মূত্রনালিকার পরীক্ষা এবং ইউরোডাইনামিক্সের মতো বিশেষ প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিডনির জটিল রোগ নির্ণয়ের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।

কিডনির রোগের নির্ণয় করার জন্য আবশ্যক পরীক্ষাগুলি কি কি

কিডনির সমস্যা থেকে কিভাবে দূরে থাকবেন, How to stay away from kidney problems

কিডনির সমস্যাগুলো থেকে সাবধান হতে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেমন :

  • আমাদের দেহের দুটি অসুখ হলো কিডনির বড় শত্রু। এক হল উচ্চ রক্তচাপ, আর অন্যটি হল ডায়াবেটিস, তাই এই দুটি সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী।
  • বেশি দিন ধরে ইউরিন ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর অথবা প্রস্টেটের সমস্যা থাকার ফলে কিডনির ক্ষতি হয়। তাই উক্ত অসুখগুলো পুষে রাখবেন না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
  • যেকোনো ব্যথানাশক ঔষধকে কিডনির জন্য বিষ বলে মনে করা হয়। তাই ব্যথানাশক ঔষধ পারতে না খাওয়াই উত্তম।
  • পরিবারে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রচুর শাক-সবজি, ফলমূল খেতে হবে। তবে লাল মাংস কম খাওয়া উচিত।
  • কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ আছে যা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিৎ নয়।
  • ধূমপান আমাদের কিডনিতে রক্ত চলাচল ব্যহত করে তুলে। এছাড়া কিডনির ক্যানসারেরও ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই ধূমপান একেবারেই বর্জন করে দেওয়া উচিত।
  • প্রস্রাব আটকে রাখা খারাপ। প্রস্রাবে সংক্রমণ এড়াতে ব্যক্তিগত ও টয়লেটের পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন। 
  • জল বেশি খেলেই যে কিডনি ভালো থাকবে এমন কোনো কথা নেই। তবে আবহাওয়া অনুযায়ী যথেষ্ট জল পান করার চেষ্টা করুন।
  • নিজেকে সক্রিয় ও ফিট রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • জীবনধারা এবং খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন রক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, ফলে কিডনিও সুস্থ থাকবে।
কিডনির সমস্যা থেকে কিভাবে দূরে থাকবেন

উপসংহার, Conclusion

কিডনির সমস্যা সহজে ধরা পড়ে না। বিশেষত প্রাথমিক সময়ে বুঝতে পারা যায় না যে আমাদের কিডনিতে কোনো সমস্যা হয়েছে, কিন্তু উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা খুব সহজেই রোগের আশঙ্কা করতে পারি, তাই এরূপ কোনো ব্যতিক্রম লক্ষ্য করলে সতর্ক হন। তবে আরেকটা ব্যাপার মনে রাখা উচিত যে ছোটদেরও কিডনিতে প্রদাহ হয়। শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রস্রাব কম হওয়া, লাল প্রস্রাব হওয়া ও শরীরে জল জমা প্রদাহের লক্ষণ। এমন হলে শীঘ্রই চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts