নাকে গন্ধ না পাওয়ার চিকিৎসা, Treatment for loss of smell in Bengali

নাকে গন্ধ না পাওয়ার চিকিৎসা

আপনাদের কি কখনো এমন অনুভব হয়েছে যে হঠাৎ করে কিছুর গন্ধ পাচ্ছে না? ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত কিছু সামনে থাকলেও আপনার নাকে সেই গন্ধ আসছে না! সবারই হয়তো এমন অভিজ্ঞতা একবার হলেও হয়েছে। তখন খুব বিরক্ত বোধ হয়, পাশাপশি মুখের স্বাদও চলে যায়, ফলে কিছু খেতেও ইচ্ছে হয় না।

ঠান্ডা লেগে সর্দি-জ্বর হলে বা বার্ধক্যের কারণবশত অনেক সময় আমরা স্বাদ বা গন্ধ হারাতে শুরু করি। একসময় এই লক্ষণগুলি জ্বর বা সর্দি-কাশির কারণে হচ্ছে বলেই মনে করা হত। আবার করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার সময় থেকেই এই লক্ষণগুলি করোনা ভাইরাসের লক্ষণ হিসাবে ধরা হয়েছে।

তবে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই গন্ধ এবং স্বাদ হারাতে শুরু করেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা নাকে গন্ধ না পাওয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

নাকে গন্ধ না পাওয়ার কারণ, causes of loss of smell 

অলফেক্টরি নামক একটি নার্ভের মাধ্যমে আমরা নাকে ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই। আমাদের নাকের উপরের অংশ থেকে এটি ছড়ানো রয়েছে। এটি আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কোনও কারণে যদি এই নার্ভটি অকার্যকর হয়ে যায়, তখনই আমরা ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই না। অন্যদিকে ঘ্রাণ না পাওয়ার কারণে আমাদেরকে খাদ্যের স্বাদ পেতে সাহায্যকারী জিহ্বার টেস্ট বাড-ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে একই সাথে আমরা নাকে ঘ্রাণ না পেলে মুখে স্বাদও পাই না।

নাকে গন্ধ না পাওয়ার কারণ

কোন কোন ক্ষেত্রে গন্ধ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, Under what circumstances  it is more likely to not  get smell?

সাধারণত দেখা গেছে যে ঠান্ডা লাগা থেকে বার বার হাঁচি দেওয়া, অ্যালার্জি, অথবা নাকের ভিতরে বা সাইনাসে পলিপাস হয়ে নাকের ছিদ্রগুলো যদি বন্ধ হয়ে থাকে তখন আমরা বিভিন্ন ওষুধ খাই, যেমন- এজিথ্রোমাইসিন, এমপিসিলিন, জিটিএন, ক্যাপট্রোপিল ইত্যাদি, এই ওষুধগুলোর প্রভাবেও অনেক সময় আমরা নাকের গন্ধ হারাই।

কোন কোন ক্ষেত্রে গন্ধ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি

এছাড়াও অনেক সময় জীবাণুনাশক ওষুধ সেবনের ফলে মাথায় আঘাত পড়ে, ফলে মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নার্ভের কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে নেশা জাতীয় দ্রব্য যদি নাক দিয়ে গ্রহণ করা হয়, যেমন- কোকেন, হিরোইন, ইয়াবা প্রভৃতির প্রভাবেও নাকে গন্ধ না পাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আলঝেইমার, পারকিনসন ডিসিজ ইত্যাদি রোগ থাকলে, অথবা মুখে বা গলায় ক্যান্সার হলে রেডিও থেরাপি নিলে, বা কোনো বয়সজনিত কারণে এবং কোনোও কারণে কারও যদি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, তাহলেও এই নাকে গন্ধ না পাওয়ার সমস্যা হতে পারে।

নাকে গন্ধ না পাওয়ার সমস্যা এবং প্রতিকার, problem of not getting smell and remedies

আপনার যদি কখনো নাকে গন্ধ এবং মুখে স্বাদ সমস্যা হয় তবে এর মানে এই নয় যে, আপনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কখনো এমন সমস্যা হলে যে কোনও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া ভাল। এর কারণ হল আমাদের অজান্তে ডাইজেসিয়া, ইনোসিমিয়া এবং সাইনাসের মতো রোগগুলো এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

নাকে গন্ধ না পাওয়ার সমস্যা

এই রোগগুলোর প্রভাবে অনেক সময় আমরা নাকে গন্ধ হারাতে শুরু করি। তবে এইসব সমস্যার ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে ওষুধ গ্রহণ করার পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা করার চেষ্টা করা শ্রেয়, কারণ অনেক সময় বিভিন্ন ওষুধের প্রভাবেও নাকে গন্ধ না পাওয়ার সমস্যা হয়। তাই আপনি যদি কোনও সময় নাকে গন্ধ পাচ্ছেন না বলে অনুভব করেন তবে কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকার ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার হারিয়ে যাওয়া গন্ধ ও স্বাদ ফিরিয়ে আনতে পারে। উপায়গুলি হল :

নাকে গন্ধ ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করুন জোয়ান:

আমাদের ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পেতে সহায়তা করতে পারে জোয়ান। জোয়ান নাক থেকে গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা ফিরে পেতে সাহায্য করে। আমরা অনেকেই জানতাম যে এটি কেবল হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কিন্তু শুধু তা না, বরং জোয়ান অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে এবং সর্দি-কাশি থেকেও মুক্তি দেয়। পাশাপাশি গন্ধ ফিরে পাওয়ার ক্ষমতাও বাড়ায়।

গন্ধ ফিরে পেতে প্রথমে জোয়ান গুঁড়ো করে নিন, তারপর একটি কাপড়ে সেই গুঁড়ো মুড়ে নিয়ে তা শুঁকলে দেখবেন মাথা যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি মেলে। কিছুক্ষণ পর পর শুঁকতে থাকুন। ধীরে ধীরে ঘ্রাণ না পাওয়ার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

আপেল সিডার ভিনিগারের ব্যবহার :

আপেল সিডার ভিনেগারকে আমরা পেটের সমস্যা দূর করার জন্য একেবারে যথাযথ উপাদান হিসেবে জানি। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে এই টনিক খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই টনিক শুধু আপনার পেটের সমস্যা বা ওজন হ্রাস করতে যে সিদ্ধহস্ত তাই নয়, বরং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ তথা রক্তে শর্করার পরিমাণ কম করা সহ আমাদের বহু উপকার করে।

আপেল সিডার ভিনিগারের ব্যবহার

পাশাপাশি, আপেল সিডার ভিনেগার (আপেল ভিনেগার) গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাসের সমস্যা দূর করতেও কার্যকরী, কারণ এতে আছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা বন্ধ নাক পরিষ্কার করে দেয় এবং ঘ্রাণ শক্তি বৃদ্ধি করে। ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পেতে এক গ্লাস জলে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে তার সাথে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।

তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এই ভিনিগারের অতিরিক্ত ব্যবহার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করুন।

ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পেতে রসুন ব্যবহার করুন :

সর্দি এবং জ্বরের সাথে আসা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য রসুন অন্যতম ঘরোয়া প্রতিকার। রসুন প্রতিটি রান্নাঘরে পাওয়া যায়। এতে অ্যান্টিইনফ্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বুকে জমে থাকা কফ, মাথা ধরা, বন্ধ নাক খোলা রাখার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সমস্যা থেকে আমাদের দেহ কে দূরে রাখে।

কেউ চাইলে জ্বর সর্দির সময় রসুন ভাজা করে সেটি খেতে পারেন। এছাড়াও কয়েক কোয়া রসুন কেটে নিয়ে সেগুলো জলে ফুটিয়ে এবং সেই জল ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পরে এটি পান করতে পারেন। এছাড়াও সর্ষে তেলে রসুন কোয়া গরম করে সেটি নাকে, গলায়, বুকে মালিশ করলেও অনেক আরাম পাওয়া যায়। দিনে অন্তত একবার এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলেই ধীরে ধীরে শরীর স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং আপনার মুখে স্বাদ ও নাকে ঘ্রাণ উভয়ই ফিরে আসবে।

শুকলো লঙ্কার গুঁড়ো ও গোলমরিচ এর ব্যবহার :

শুকলো লঙ্কার গুঁড়ো ও গোলমরিচ- হল স্বাদ ও গন্ধ ফেরানোর জন্য অন্যতম উপাদান। উক্ত সমস্যা সমাধানে এদের জুড়ি মেলা ভার। নাক বন্ধ হয়ে গেলেও এই টোটকা ব্যবহার করতে পারেন।

এরজন্য এক কাপ জলের মধ্যে উক্ত দুটি মশলা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তবে মধু বা মিষ্টি জাতীয় কিছু সঙ্গে মেশানোই ভালো হবে। তারপর একটু একটু করে তা খেতে পারেন, এই মিশ্রণটি দু চামচ করে দিনে কয়েকবার এভাবে খেতে পারেন। এর ঝাঁঝ নাকের ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পেতে সহায়তা করবে এবং স্বাদও ফিরে পাবেন।

শুকলো লঙ্কার গুঁড়ো ও গোলমরিচ- হল স্বাদ ও গন্ধ ফেরানোর জন্য অন্যতম উপাদান

উপসংহার, Conclusion

শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ঘ্রাণ শক্তি হ্রাস পায়, তবে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে এর সমাধান করা শ্রেয়, এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। তাছাড়া রুচি ফেরানোর ওষুধ থাকলেও ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পাওয়ার তেমন কোনো ওষুধ হয়তো নেই। তবে উপরিউক্ত প্রাকৃতিক উপাদান নাকে গন্ধ ফিরিয়ে আনতে আমাদের সহায়তা অবশ্যই করবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই টোটকাগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts