মুখে কামড় পড়ে বা কখনো মুখের ভেতরের ছাল ওঠার ফলে ঘা হওয়ার সমস্যা অনেকেই ভোগেন কিন্তু কিভাবে এর থেকে রেহাই পাওয়া যায় তা অনেকেই জানেন না। ফলে ঘা নিয়ে কষ্ট ভোগ করতে হয়। খেতেও অসুবিধা হয় ঘা এর কারণে। তবে মুখে ঘা হলে ঘরোয়া উপায়েই এর উপশম সম্ভব। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা মুখে ঘা কি কারণে হয় এবং এর থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করবো।
- 1 মুখে ঘায়ের প্রাথমিক লক্ষণগুলো, primary symptoms of mouth ulcer
- 2 মুখে ঘা হওয়ার বিভিন্ন কারণ, various causes of mouth ulcer
-
3
মুখে ঘা হলে করণীয়, What to do if you have mouth sores
- 3.1 মুখের ঘা সারানোর জন্য কার্যকরী হল যষ্টিমধু:
- 3.2 মুখে ঘা হলে ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা জেল:
- 3.3 মুখে ঘা সারাতে নারকেল দুধ এর ব্যবহার :
- 3.4 মুখের ঘা তে তুলসী পাতার ব্যবহার :
- 3.5 লবণজল এর ব্যবহারে মুখের ঘা সারানো যায় :
- 3.6 মুখের ঘা সারান হলুদ এর ব্যবহার করে :
- 3.7 টমাটো ঘা সারানোর জন্য কার্যকরী:
- 3.8 মুখের ঘা সারাতে ধনেপাতার ব্যবহার:
- 3.9 মুখের ঘা সারাতে টি ব্যাগ এর ব্যবহার :
- 4 মুখের ঘা থেকে কি কি ভাবে সাবধান থাকবেন জেনে নিন, Know how to avoid mouth sores
- 5 উপসংহার, Conclusions
মুখে ঘায়ের প্রাথমিক লক্ষণগুলো, primary symptoms of mouth ulcer
মুখে ঘায়ের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মুখের ভেতরের মাংস বা জিহ্বায় ঘা এর সৃষ্টি, মাড়িতে ব্যথা অনুভব হওয়া, কিছু খেতে গেলে জ্বালা অনুভূত হাওয়া ইত্যাদি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে মুখ ফুলে যাওয়ার সমস্যা বা রক্ত ও পুঁজ বের হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

মুখে ঘা হওয়ার বিভিন্ন কারণ, various causes of mouth ulcer
মুখের ভেতরে ঘা নানা কারণে হতে পারে। এর মধ্যে সাধারণ কিছু কারণ হল :

- মুখের কোন জায়গা যদি কেটে যায় তাহলে অনেক সময় ক্ষত অংশে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে মুখের ভেতরের অংশে বা জিভে ঘা হয়।
- ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলেও অনেক সময় জোরে ঘষা লাগার ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
- খুব গরম পানীয় পান করার ফলে অনেক সময় মুখের ভেতরের চামড়ায় প্রভাব পড়লেই ঘা হতে পারে।
- খাবার সময় কিছু চিবাতে গিয়ে গালের ভেতরে কামড় লাগলেও সেই ক্ষত থেকে ঘা হতে পারে।
- অপুষ্টি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া, দুর্বল স্বাস্থ্য এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণেও মুখে ঘা হয়।

মুখে ঘা হলে করণীয়, What to do if you have mouth sores
মুখের ভেতরে যদি ঘা হয় তবে তা সারাতে কিছুদিন সময় লাগে। এর কারণ হল মুখের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো ঘা হওয়ার জায়গাটিকে সারিয়ে তুলতে বাধা দান করে। তাছাড়া মুখের ভেতরের অংশ বেশিরভাগ সময় ভেজা থাকে, এর ফলে কখনো ঘা সারতে সপ্তাহ বা মাসও লেগে যেতে পারে।
তবে যতক্ষণ না ঘা সারছে, ততক্ষণ শুকনো হোক কিংবা তরল, যেকোনো খাবার খাওয়াই যেন দুরূহ হয়ে ওঠে। তাই ঘা যদি তাড়াতাড়ি সারাতে হয় তবে সবার প্রথমে মুখের ভেতরের অংশে থাকা ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব কম করার চেষ্টা করতে হবে। মুখে ঘা হলে ঘরোয়া উপায়েই তা সারিয়ে নেওয়া যায়। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মুখের ঘা সারানোর ঘরোয়া উপায়গুলো হল :
মুখের ঘা সারানোর জন্য কার্যকরী হল যষ্টিমধু:
মুখে ঘা হলে তার থেকে মুক্তি পেতে এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দুই কাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এই জল দিয়ে কয়েকবার কুলকুচি করুন। দিনে কয়েকবার এই কাজ করে দেখুন অবশ্যই উপকার পাবেন।
মুখে ঘা হলে ব্যবহার করুন অ্যালোভেরা জেল:
অ্যালোভেরা জেল মুখের ঘা কম করে দিতে পারে। অ্যালোভেরা জেল হল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক, যার মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে, পাশাপাশি এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিফিংগাল, অ্যান্টিভাইরাল উপাদান ক্ষত কমিয়ে দিতে পারে।
মুখে ঘা সারাতে নারকেল দুধ এর ব্যবহার :
মুখের ঘা সারানোর জন্য নারিকেল দুধ এর ব্যবহার করা যায়। ঘরোয়া উপায় হিসেবে মুখের ঘা সারানোর জন্য এটি বেশ উপকারী। এক্ষেত্রে এক টেবিল চামচ নারকেল দুধের সাথে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে নিন। এবার দুটো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি দিনে তিন থেকে চারবার ঘায়ের জায়গায় আঙুলের সাহায্যে লাগান। চাইলে মধু ছাড়া শুধু নারকেলের দুধ দিয়েও মুখের ক্ষত স্থানে মালিশ করতে পারেন। এই পদ্ধতি দিনে দুই থেকে তিন বার করলে খুব শীঘ্রই ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।
মুখের ঘা তে তুলসী পাতার ব্যবহার :
তুলসী পাতার গুণ সম্পর্কে জানে না এমন লোক হয়তো কম আছে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কম করার জন্য তুলসীর রস এর তুলনা নেই। মুখে ঘা সারাতে কয়েকটি তুলসী পাতা ডাঁটা সহ জলে ভিজিয়ে রাখুন, এই জল দিনে তিন থেকে চারবার পান করুন। এটি খুব দ্রুত মুখের ঘা প্রতিরোধ করে এবং মুখের ঘা হওয়ার প্রবণতাকেও কমিয়ে দেবে, কারণ তুলসীর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ মুখের ভেতরে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে বাধা দেয়।

লবণজল এর ব্যবহারে মুখের ঘা সারানো যায় :
মুখের ঘা সারানোর জন্য লবণের ব্যবহার করতে হলে প্রথমে এক কাপ গরম জল নিয়ে তাতে এক চিমটি লবণ ফেলে দিন। এই জল দিয়ে কুলকুচি ও গড়গড়া করুন। এতে ঘা হওয়া জায়গাটি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গিয়ে সেরে উঠবে। তাছাড়া লবণ জলের প্রভাবে ঘা ছড়াতে পারবে না। কোনো কিছু খাওয়ার আগে এভাবে কুলকুচি করলে বেশি ভালো ফল পাবেন।

মুখের ঘা সারান হলুদ এর ব্যবহার করে :
হলুদের মধ্যে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ থাকে। তাই মুখের ঘা ঠিক করতে এটি সহায়তা করতে পারে। এক্ষেত্রে হলুদ গুঁড়ো নিয়ে তাতে সামান্য মধু মিশিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটিকে মুখের ভেতরে হওয়া ঘা-এর উপর ভালোভাবে লাগান।
টমাটো ঘা সারানোর জন্য কার্যকরী:
শরীরের জন্য টমেটো খুব উপকারী। এতে ভিটামিন থাকে যার ফলে ঘা, কাটা ইত্যাদি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। তাই খাবারের সঙ্গে রোজ কাঁচা টমাটো খাওয়া অভ্যাস করুন। কয়েক দিন খেলেই দেখবেন মুখের ভেতরের ঘা সেরে যাবে।
মুখের ঘা সারাতে ধনেপাতার ব্যবহার:
ধনেপাতা রান্নার স্বাদ বাড়ায়, তা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মুখে ঘা হলে তা সারাতেও সহায়তা করে ধনেপাতা। এক্ষেত্রে জলে ধনেপাতা ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে দিনে কয়েকবার কুলকুচি করুন। এতে যথেষ্ট আরাম পাবেন এবং ঘা খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
মুখের ঘা সারাতে টি ব্যাগ এর ব্যবহার :
শরীরের যেকোনো অংশে দ্রুত ব্যথা এবং জ্বালা দূর করার ক্ষেত্রে টি-ব্যাগ খুবই কার্যকর। সেইভাবেই মুখের ঘা তে ব্যথা বা জ্বালা অনুভব হলে তা উপশম করতে টি-ব্যাগ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে একটি টি ব্যাগ ঠান্ডা জলেতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন এরপর সেটি তুলে এনে ঘায়ের জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। এভাবে কয়েকবার করলে দেখবেন ব্যথা এবং ক্ষত দ্রুত সেরে গেছে।
উপরিউক্ত উপায়গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে মুখের ঘা সারানো যায়। তবে মুখের ঘায়ের ক্ষেত্রে যদি কখনো ব্যথা অনুভব হয় তাহলে এক টুকরা বরফ নিয়ে কিছুক্ষণ ধরে ঘায়ের স্থানে লাগিয়ে রাখুন, অথবা ঠান্ডা জল দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। এছাড়াও আরো একটি কাজ করতে পারেন, এক টুকরো লবঙ্গ নিয়ে মুখে দিয়ে রেখে দিন বা লবঙ্গের রস বা তেল ক্ষত স্থানটিতে লাগাতে পারেন। এতে যথেষ্ট উপকার পাবেন।
মুখের ঘা থেকে কি কি ভাবে সাবধান থাকবেন জেনে নিন, Know how to avoid mouth sores
মুখের ঘা সেরে গেলেও পরবর্তী সময়ে যাতে আবার ঘা না হয় তার জন্য পূর্ব থেকেই সাবধান থাকা জরুরি। এরজন্য যা করতে পারেন :
- ১. মুখে যেন কোনো আঘাত না লাগে সেক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন। কখনো কোনো কিছু খাওয়ার সময় কোনোভাবে আঘাত লাগলে সে বিষয়ে সাবধানে থাকবেন।
- ২. দাঁত ব্রাশের সময় সতর্কভাবে ব্রাশ মুখের ভেতরে ঘষবেন। কারও দাঁত যদি আঁকাবাঁকা থাকে তবে তা সোজা করার জন্য চিকিৎসা করানো উচিত।
- ৩. মুখের ভেতরের সমস্যাগুলো রোধ করার জন্য পরিমিত খাবার, ঘুম, মানসিকভাবে স্বতস্ফূর্ত থাকার চেষ্টা করবেন।

উপসংহার, Conclusions
মুখে ঘা হওয়া থেকে বাঁচতে সঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি। এর কারণ হল সাধারণত মুখের যত্নের অভাবে প্রায়ই আমাদের মুখে নানান ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, আর মুখের ভেতরে হওয়া বিভিন্ন রোগের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল মুখের ঘা। এই ঘা থেকেই আরো বেশী সমস্যা সৃষ্টি হয়ে পারে। তাই সাবধান থাকা খুব জরুরী। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দ্বিধা বোধ করা উচিত নয়।