সাধারণত গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কোনোও সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না। প্রথম ১ মাস মায়েরা সাধারণত বুঝতেই পারেন না যে তারা গর্ভধারণ করেছেন। প্রথম যে লক্ষণটি খেয়াল করা হয় তা হলো পিরিয়ড বাদ যাওয়া। এ ছাড়া আরো বেশ কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে বুঝতে পারা যায় যে গর্ভে কনসিভ হয়েছে।
কনসিভ করার বিভিন্ন লক্ষণ হল, Various signs of conceiving are as follows:-
সাধারণত মাসিক/পিরিয়ড বাদ হওয়ার ১ বা ২ সপ্তাহ মাঝে গর্ভবতী হওয়ার কিছু লক্ষণ দৃশ্যমান হয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত, লক্ষণগুলি প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের ৬ সপ্তাহ বা কমবেশি ৪৫ দিনের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। কারও যদি কনসিভ করা নিয়ে সন্দেহ থাকে তবে আপনি নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ আপনার মধ্যে আছে কি যা যা মিলিয়ে দেখতে পারেন, এতে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি গর্ভবতী কি না। গর্ভধারণ করা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপসর্গগুলো হল :
১. খাবারে অনীহা:
গর্ভবস্থার শুরুর দিকে খাবারে অনীহা বোধ হওয়া বেশ স্বাভাবিক। এসময় আপনার খুব পছন্দের কোন খাবার খেতে বিস্বাদ লাগলেও আশ্চর্য হবেন না। বরং এরকমই হয়ে থাকে!
২. মন মেজাজের ওঠানামা:
এসময় মন মেজাজের কোন ঠিক ঠিকানা না থাকাই স্বাভাবিক। শরীরে এসময় হরমোন বদলের কারণে ব্রেনের অভ্যন্তরে মেসেজ বহনকারী নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমানে পরিবর্তন আসে। তাই মুড সুইং হয়ে থাকে।
৩. পেট ফুলে গেছে এমন অনুভূতি:
হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে জরায়ুতে তেমন কোন পরিবর্তন আসার আগে থেকেই সন্তান সম্ভবা মায়ের পেট ফুলে যাওয়ার অনুভুতি হয়। এটা মাসিক হবার আগ মুহুর্তের অনুভুতির মত।
৪. ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভব হওয়া :
হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে এসময় শরীরে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি হয়, ফলে বার বার প্রস্রাবের বেগ হয়। তবে এই উপসর্গ সাধারণত আপনার প্রথম ট্রিমেস্টার বা ৬ সপ্তাহের মাথায় দেখা যাবে। গর্ভে বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে।
৫. মাঝেমাঝেই আচমকা ক্লান্ত বোধ হয় :
কিন্তু কেউই ব্যাখ্যা করতে পারেনা যে সন্তান সম্ভবা মা’র প্রথম দিকের ক্লান্তির কারণ কী। সম্ভবত প্রোজেস্ট্রেরন হরমোনের ক্রমবর্ধমান প্রবাহ আপনাকে এই ঘুম ঘুম অনুভুতি দিচ্ছে।
৬. স্তন কোমল ও স্ফীত হওয়া :
গর্ভধারণের পর থেকে শরীরে বিশেষ কিছু হরমোন প্রবাহ শুরু হয়, যার কারণে স্তনযুগল বেশ স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে, এটি গর্ভধারণ নিশ্চিত করার আরেকটি চিহ্ন। স্তন ফুলে ওঠতে শুরু করে এবং অনেক সময় ব্যথা অনুভব হয় যা অনেকটা মাসিক পূর্ববর্তী অবস্থায় ব্যথার মত।
৭. বমি বমি ভাব :
গর্ভধাণের এক মাসের আগে সাধারণত বমি বমি ভাব দেখা যায় না। অনেকের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের দুই সপ্তাহের মাঝেই বমিভাব দেখা দেয়।
৮ . স্পটিং ও সাদা স্রাব :
সহবাসের পর নিষিক্ত ডিম্বানু জরায়ুর দেয়ালে আটকে যায়, তখন স্বল্প রক্তপাত বা স্পটিং ও মাসিকের ব্যথার মতো ব্যথা হতে পারে। গর্ভধারণের খুব প্রাথমিক সময়ের লক্ষণ এটি। গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিনের মাঝে এমন হতে পারে। এছাড়া এসময় মহিলাদের সাদা স্রাব নির্গত হয়, অনেকের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে নির্গত হয়। ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার পরে যোনির অভ্যন্তরে পরিবর্তনের কারণে এমন হয়ে থাকে।
৯ . বর্ধিত শারীরিক তাপমাত্রা :
যদি আপনি দেখেন যে একনাগাড়ে ১৮ দিনের বেশি সময় ধরে আপনার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তবে খুব সম্ভবত আপনি গর্ভবতী।
১০. মাসিক মিস হওয়া :
আপনার মাসিক প্রতিমাসে সঠিক ভাবে হয়ে থাকে এবং হঠাৎ কোনো এক মাসে ঠিক সময়ে মাসিক না হয় এবং উপসর্গগুলো দেখা যায়, তবে বাড়িতে বসেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করার কথা চিন্তা করতে পারেন। তবে আপনার মাসিক যদি অনিয়মিত হয়, তবে বমি ভাব, স্তনে ব্যথা এবং বেশি বেশি বাথরুমে যাওয়ার দিকে খেয়াল করুন।
তবে উপরিউক্ত লক্ষণগুলো ছাড়াও কনসিভ করার যেসব সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলো হল :
- যোনিপথ দিয়ে হালকা রক্তপাত হওয়া
- মাথা ঘুরানোর মত সমস্যা
- চাপ দিলে স্তনে ব্যথা অনুভব হয়।
- হঠাৎ হঠাৎ বমি হওয়া।
- অল্প কাজ করে কিংবা কোনো কাজ না করেও ক্লান্তি অনুভব করা।
- পেটে অস্বস্তি বোধ করা বা পেট ফাঁপা হয়ে আছে এমন মনে হওয়া।
- পিরিয়ড বা মাসিকের ব্যথার মতো হঠাৎ হঠাৎ তলপেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা হওয়া।
- প্রিয় কোনো খাবারে অকারণেই অরুচি। অন্যদিকে নতুন কোনো খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা জন্মায়।
- মুখে অদ্ভুত স্বাদ অনুভব করা।
- প্রখর ঘ্রাণশক্তি।
তবে এসব লক্ষণ আছে দেখলেই যে আপনি গর্ভবতী তা সুনিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়; কারণ উপরিউক্ত লক্ষণগুলোর মধ্যে এমনও কয়েকটি লক্ষণ আছে যা অনেক সময় কারও কারও ক্ষেত্রে মাসিকের আগেও দেখা দেয়। যেমন: স্তনে ব্যথা হোক, পেট ফাঁপা ও কোনো নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরই সাথে সাথে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট, Pregnancy test
কোনো মহিলা গর্ভবতী কি না তা জানার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হল প্রেগন্যান্সি টেস্ট। আপনি চাইলে ফার্মেসি থেকে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট এনে খুব সহজেই ঘরে বসে জেনে নিতে পারেন আপনি গর্ভবতী কি না। তবে অনেকের কাছে এই টেস্ট কিট বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়না, সেক্ষেত্রে নিকটস্থ কোনো ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল বা গাইনী ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েও আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে পারেন।
গর্ভবতী কি না তা পরীক্ষা করার অন্যান্য পদ্ধতি, Other methods of testing whether pregnant or not
১) রক্ত পরীক্ষা :
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট ছাড়াও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভবতী কি না তা নির্ধারণ করা যায়। গর্ভধারণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা বেশ নির্ভরযোগ্য, এমনকি গর্ভধারণের প্রাথমিক সময়েও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার আপনার রক্তে Human Chorionic Gonadotrophin (HCG) হরমোনের উপস্থিতি কি পরিমাণে আছে তা দেখে নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনি গর্ভবতী কি না।
২) প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ :
মাসিক মিস হবার ২ সপ্তাহ পরে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার জরায়ু ও গলদেশ (Cervix) পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। কনসিভ করলে সেই গর্ভবতীর সার্ভিক্স নরম হয় এবং এর রং পরিবর্তন হয়। তাছাড়া জরায়ু ক্রমশ বড় হতে থাকে। সরাসরি পরীক্ষা করার পরও ডাক্তাররা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রক্তপরীক্ষা দিয়ে থাকেন।
সহবাস এর কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়? How many days after intercourse to take a pregnancy test?
কোনো মাসের পিরিয়ড যদি বাদ যায় এবং আপনার যদি কনসিভ করার কোনো লক্ষণ থাকে তবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। যদি কেউ অনিরাপদভাবে সহবাস করে থাকেন, অর্থাৎ কোনো জন্মনিরোধক (কনডম, পিল বা বড়ি, ইনজেকশন) ব্যবহার না করে সহবাস করে থাকেন, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তারিখে পিরিয়ড শুরু না হলে আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিতে পারেন। পিরিয়ড শুরু হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ যদি জানা না থাকে তবে অনিরাপদ সহবাসের কমপক্ষে ২১ দিন পরে টেস্ট করে দেখেতে পারেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি না।
শেষ কথা, Conclusion
কোনো মহিলা কনসিভ করলে তিনি গর্ভবতী কি না তা নিশ্চিত হবার আগে থেকেই গর্ভে বাচ্চার গঠন শুরু হয়। তাই গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার পর প্রাথমিক অবস্থা থেকেই আপনার নিজের যত্ন নেয়া জরুরী।
এব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি উপরোক্ত কনসিভ করার লক্ষণগুলো নিয়ে করা আলোচনা আপনাদের গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।