গলা ব্যথা আমাদের কাছে সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকে এই সমস্যা নিয়ে তেমন গা করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরম জল খাওয়া অথবা গার্গল করার মধ্য দিয়ে গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে গলা ব্যাথা কোনো না কোনো রোগের উপসর্গ স্বরূপ দেখা দেয়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা গলা ব্যথা হলে করণীয় কি উপায় আছে এবং এই সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
গলা ব্যাথা হওয়ার কারণ, Causes of sore throat
গলায় ব্যথা সাধারণ আমাদের জন্য একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এটি দেহের জটিল কোন রোগের পূর্ব লক্ষণও হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ঋতু পরিবর্তন, কোনো কারণে বহুক্ষণ ধরে জোরে কথা বলা ইত্যাদি কারণে উক্ত সমস্যাটি হয়ে থাকে। গলা ব্যথার ফলে গলায় খুশখুশ করলে বা ব্যথা হওয়ার কারণে কথা বলতে, ঢোক গিলতে, অথবা খাবার খেতে বেশ অসুবিধা হতে পারে। তাতে অনেকেই অসুস্থ বোধ করতে পারেন।
বিশেষ করে যাদের টনসিলের সমস্যা আছে, সামান্য ঠান্ডাতেও তাদের গলা ব্যথা হতে পারে। কিন্তু তাই বলে সামান্য শরীর খারাপ বা গলার খুশখুশ হলেই অ্যান্টি-বায়োটিক ঔষধ মুড়িমুড়কির মতো খেয়ে নেবেন না, তাতে বরং সমস্যা সমাধান না হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি কারণে গলা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয় :
- -দূষণ এর কারণে শরীরে কোনোও ধরনের প্রভাব পড়লে।
- – খুব গরম খাবার খাওয়া হলে,
- – ঝাল ও মলশাদার খাবার বেশি খেলে,
- – পোর্টাল অ্যাকিউট অ্যাসিড রিফ্লাক্স, অর্থাৎ খাদ্যনালীর সঙ্কুচনের ফলে।
- – বিভিন্ন রকম সংক্রমণ এর প্রভাবে।
- – সামান্য আলসার থেকেও অনেক সময় গলা ব্যথার মত সমস্যা দেখা দেয়।
- – নির্দিষ্ট খাবারের এলার্জি থাকলে অভ্যন্তরে চুলকানির সমস্যা থেকে ব্যথা শুরু হতে পারে।
- -আবহাওয়ার গতিবিধির ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে সর্দি কাশি এবং গলাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়।
গলা ব্যথার লক্ষণ সমূহ, Symptoms of sore throat
গলা ব্যথা হলে বা ব্যথার সম্ভাবনা থাকলে প্রধানত নিম্নের কতিপয় লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ দেখা দেয়। যথা-
- গলায় খসখসে ভাব, চুলকানো এমনকি গলা ফুলেও যেতে পারে।
- শ্বাস নেয়া, ঢোক গিলা কিংবা কথা বলার সময় গলায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- ঠান্ডার জন্য গলা ব্যথা হলে এর সাথে শরীরে ব্যথা সহ সর্দি, কাশি, হাঁচি ও জ্বর হতে পারে।
গলা ব্যথার বিভিন্ন উপসর্গ জেনে নিন :
- কারো গলা ব্যথা যদি কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করে, তাহলে টনসিল ফুলে যাওয়া সহ আরো বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। নিম্নে উল্লেখিত উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তরের কাছে গিয়ে সুচিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
- ঢোক গিলতে সময় বা যেকোনো খাবার বা জল খেতে অসুবিধা হওয়া।
- কিছুদিন পর পর অর্থাৎ বার বার গলা ব্যথা হওয়া।
- গলা ব্যথার পাশাপাশি বমি হওয়া।
- শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া।
- গলা ব্যথার পাশাপাশি অতিরিক্ত মাথা ব্যথা করা।
- গলা ব্যথার কারণে শরীরের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে
- গলার টনসিল ফুলে গিয়ে লালচে হয়ে যাওয়া।
- অনেক সময় ব্যথার পাশাপাশি গলায় বা টনসিলে পুঁজও হতে পারে, সেক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকা উচিত, গলা ব্যথা বেশিদিন স্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান।
- গলার ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি সময় দীর্ঘ হলে
- গলার ব্যথার কারণে গলার স্বরের পরিবর্তন হলে।
গলা ব্যথায় করণীয়, what will you do if you have a sore throat?
গলা ব্যথার সমস্যা দেখা দিলে কয়েকটি ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলেই ব্যথা থেকে দ্রুত স্বস্তি মিলবে। বাড়িতে থাকা কয়েকটি প্রাকৃতিক ভেষজের সাহায্যেই প্রচণ্ড গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। জেনে নিন গলা ব্যথা উপশমে কি কি করণীয় :
গলা ব্যথা কম করতে মধু ব্যবহার করুন : গলার ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মধু ঘরোয়া ওষুধ হিসেবে দারুণ কার্যকরী উপাদান। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন যে মধুতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা গলার ঝিল্লিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম। তাই গলা ব্যথা হলে রোজ সকালে উঠে ২ চামচ মধু খেতে পারেন বা হালকা গরম জলের সাথে মিশিয়ে মধু পান করতে পারেন। এটা অনেকটা আরাম পাবেন।
গরম জল দিয়ে গার্গল করুন : গার্গল করার বিষয় হয়তো সকলেরই জানা আছে। গলা ব্যাথা বা খুশখুশ করলে গরম জলে নুন মিশিয়ে গার্গল করার এই পদ্ধতি আপনি যে কোনও সময়েই করতে পারেন। এতে কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। এতে গলায় আটকে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলি দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায়।
ঠান্ডা দুধ খেতে পারেন : শরীরের যেকোনো ব্যথা উপশমের জন্য আপনি এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করতে পারেন। দুধ ইলেক্ট্রোলাইট ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ, যা ডিহাইড্রেশন এর সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তাই ঠাণ্ডা দুধ আমাদের গলা ব্যথা, চুলকানি ভাব ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পিপারমিন্ট বা পুদিনার ব্যবহার : একটি উপযোগী ভেষজ উপাদান হল পুদিনা, এতে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উক্ত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে এটি ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাস ধ্বংস করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। পুদিনা পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খেতে পারেন, অথবা বেটে নিয়ে ভাতের সাথেও খেতে পারেন, এতে শুরু গলা ব্যাথা না অন্য আরও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে।
ভেষজ চা পান করুন : গলাব্যথার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর উপশমকারী হল ভেষজ চা। আদা, লবঙ্গ, গোল মরিচ, তুলসী ইত্যাদি দিয়ে তৈরি চা গলা ব্যথার রোগীর ক্ষেত্রে বেশ আরামদায়ক। এই চা খেলে গলার ব্যথা সারার পাশাপাশি বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। এছাড়া গরম জলের সঙ্গে লেবু বা মধু মিশিয়ে খেলে বেশ আরাম পাবেন।
গলা ব্যাথা হলে যে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, If you have a sore throat, you should be careful about :
গলা ব্যাথা হলে নিম্নলিখিত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন, গলা ব্যথার সমস্যা দ্রুত কম হবে।
• ব্যথা হলে গলাকে পূর্ণ বিশ্রাম দিন। কথা বলা, চিৎকার করা, এসব থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকুন।
• ঠান্ডা জল পান করবেন না। সব সময় কুসুম গরম জল পান করুন। গরম স্যুপ পান করতে পারেন।
• চকলেট বা লজেনস চুষতে পারেন। এটা গলা সহজে শুকিয়ে যাবে না এবং গলাব্যথা উপশমে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে এটি।
• গলা ব্যাথা হলে যথাসম্ভব হালকা খাবার খান। যেহেতু হালকা খাবার অন্ত্রের প্রদাহ উপশম করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, তাই হালকা খাবার খান, তাহলে হজমও ভালো হবে। তাছাড়া হালকা খাবার খেলে চিবানোর সময় অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার হবে না এবং গিলতে তেমন অসুবিধাও হবে না; যেমন ডিমের সাদা অংশ, দই, আলু, ওটস ইত্যাদি খাবার খান।
শেষ কথা, Conclusion
গলা ব্যথার সাধারণ সমস্যার ক্ষেত্রে মুঠো মুঠো ওষুধের বদলে আমাদের রান্না ঘরে থাকা উপাদান দিয়েই আরাম পেতে পারেন। উপরিউক্ত ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে গলায় যদি মারাত্মক ব্যথা বাড়ে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পারমর্শ নিতে হবে, নয়তো সমস্যা বেড়ে উঠতে পারে, কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসুস্থ হওয়ার পূর্ব লক্ষণ হিসেবে গলা ব্যথা করে। তাই সাবধান থাকা জরুরি।