বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে, তার মধ্যে পার্কিনসন্স অন্যতম। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই জটিল রোগে আক্রান্ত, যা তাদের গতিশীলতা, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। তবে সম্প্রতি জাপানের চিকিৎসকেরা এই রোগের চিকিৎসায় এক নতুন আশার আলো দেখিয়েছেন।
পার্কিনসন্স রোগের লক্ষণগুলো এতই সূক্ষ্ম যে প্রাথমিক পর্যায়ে তা ধরা পড়ে না। রোগ নির্ণয়ে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লেগে যায়, এবং ততদিনে রোগের তীব্রতাও অনেক বেড়ে যায়।
কিন্তু এখন এই অবস্থার পরিবর্তন হতে চলেছে! ল্যাবে তৈরি মস্তিষ্কের কোষ রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করে পার্কিনসন্স রোগের চিকিৎসায় অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। জাপানের এই নতুন ‘স্টেম সেল’ চিকিৎসা পদ্ধতি কোনো উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।

এক যুগান্তকারী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে জাপানি বিজ্ঞানীরা পার্কিনসন্স রোগীদের মস্তিষ্কে ল্যাবে তৈরি ডোপামিন-উৎপাদনকারী নিউরন সফলভাবে স্থাপন করেছেন। এটিকে মানব স্নায়ুবিজ্ঞানে প্লুরিপোটেন্ট স্টেম (আইপিএস) কোষের সবচেয়ে উন্নত ব্যবহার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুমিতোমো ফার্মার সহায়তায় পরিচালিত এই পদ্ধতির প্রাথমিক ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এই পদ্ধতি শুধু পার্কিনসন্স নয়, বরং এএলএস (ALS) এবং আলঝাইমার (Alzheimer’s)-এর মতো অন্যান্য নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের চিকিৎসাতেও বিপ্লব ঘটাতে পারে।
এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিটি রোগটিকে সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলার পরিবর্তে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করে কাজ করে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই পদ্ধতির প্রয়োগের পর ডোপামিন উৎপাদন ৬৩.৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৫ সালের শেষের দিকে পার্কিনসন্স রোগের চিকিৎসায় আরও উন্নত ব্যবস্থা আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই গবেষণা নিঃসন্দেহে স্নায়ু রোগের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং পার্কিনসন্স রোগীদের জন্য এক নতুন আশার বার্তা নিয়ে এসেছে।