তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, Benefits and Harmful effects of Tulsi in Bengali

তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আধুনিক চিকিৎসা আসার আগে প্রাকৃতিক ওষুধ গুলোতেই নির্ভর করতে হয়েছে মানুষকে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতি থেকে যে সব উপাদান নিয়ে ওষুধ খাওয়া হতো তা ব্রেন সেলের জন্মহার বাড়িয়ে তুলতে সহায়ক। এমনই একটি ভেষজ উপাদান হল তুলসী; যার গাছের পাতা, বীজ, বাকল ও শেকড় সবকিছুই অতি প্রয়োজনীয়।

তুলসী একটি ভেষজ গাছ যার বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum Sanctum। বলাই বাহুল্য যে তুলসী বিভিন্ন রোগ সারাতে কাজ করে।

তুলসী পাতার উপকারিতা, Benefits of Tulsi Leaves :

তুলসী পাতার উপকারিতা

তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই।  হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। ভেষজ তুলসী পাতার সুগন্ধিযুক্ত, রুচিকর রস সর্দি, কাশি, কৃমি ও মুত্রকর এবং বায়ুনাশক, এন্টিসেপটিক ও হজমকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেখে নিন তুলসী পাতার বিভিন্ন উপকারিতা :

  • মানসিক চাপ কম করে  :

আমাদের মানসিক চাপ কমাতে তুলসী পাতা সহায়তা করে। এতে রয়েছে ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা খেলে আমাদের শরীরের কার্টিসেলের মাত্রা কমে যায় এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

  • সর্দি, কাশি ও জ্বর নিরাময়ে তুলসি :

তুলসির পাতা খেলে জ্বর, সর্দি ও কাশি নিরাময় হয়ে থাকে। উক্ত রোগগুলো থেকে রক্ষা পেতে তুলসী পাতার রস অনেক উপকারী।

  • কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

রক্তে থাকা কোলেস্টেরল ও সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে তুলসী পাতার উপকারী।

  • দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে :

তুলসী পাতা দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ-সবল রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতার মধ্যে মাইক্রোবিয়াল ও এন্টি-ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান থাকে, যা আমাদের দাঁতকে শক্ত রাখে এবং মুখ দুর্গন্ধ মুক্ত করে।

  • ব্রণ দূর করতে কার্যকরী :

তুলসী পাতা ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে উপকারী। তুলসী পাতার পেস্ট চন্দন এর সাথে মিশিয়ে মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে জল দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন, এতে ব্রণ থেকে মুক্তি পুরোপুরি মুক্তি পাবেন।
তাছাড়াও তুলসী পাতা ত্বকের সংক্রমণ দূর করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। তুলসী পাতায় থাকা এন্টি-বায়োটিক উপাদান ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়তা করে।

  • চোখের সমস্যা সমাধানে তুলসী পাতা

তুলসী পাতার ভূমিকা চোখের সমস্যা সমাধানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুলসী পাতায় রয়েছে এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা আমাদের চোখ সুস্থ রাখতে সহায়ক। তাই চোখের কোনো সমস্যা থাকলে তুলসী পাতা বা রস খেতে পারেন।

  • মাথাব্যথা কমাতে তুলসী ব্যবহার

দৈনিক ১-২ বার করে ৩-৪ টি তুলসী পাতা খেলে মাথা ব্যথা থেকে দূরে থাকতে পারেন।

সর্দি, কাশি ও জ্বর নিরাময়ে তুলসি
  • কিডনি পরিষ্কার রাখে

তুলসী পাতা কিডনি সুস্থ-সবল রাখার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ ও এন্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। এভাবে কিডনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সচল থাকে।

  • হার্টের সুরক্ষায় তুলসীর ভূমিকা

হার্টের সমস্যা সমাধান করার কাজে তুলসী পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তুলসী পাতা রক্তের জমাট বাঁধা দূর করে পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে, ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

  • ক্যান্সার নিরাময়ে তুলসী

তুলসী পাতায় রেডিও প্রটেক্টিভ উপাদান রয়েছে যা টিউমারের কোষ ধ্বংস করতে সহায়ক। এছাড়াও তুলসী পাতায় ফাইটো- কেমিক্যাল উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তুলসী

তুলসী পাতা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক, কারণ তুলসী পাতার রস খেলে রক্ত পাতলা হয় এবং রক্তে সুগারের মাত্রা কম হয়ে যায়। সেইসাথে তুলসী পাতা

  • পেট পরিষ্কার রাখে

 পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তুলসী পাতা খুবই উপকারী। কারও পেটে ব্যথা থাকলে তুলসী পাতা গরম হলে ফুটিয়ে খেতে পারেন।

  • লিভার ঠিক রাখতে সহায়ক

তুলসী পাতায় হেপাটো-প্রটেক্টিভ উপাদান থাকে যা লিভার ঠিক রাখতে সহায়ক। লিভারে কোনো প্রকার বিষক্রিয়া থাকলে তুলসী পাতা সেটা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে লিভারের সমস্যা সমাধানের জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তুলসী পাতার রস খেতে পারেন।

  • ব্যথা ও ফোলা ভাব দূর করতে সহায়ক

আমাদের শরীরের সকল ব্যথা তুলসী পাতা দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদান আমাদের শরীরের ফোলা ভাব দূর করে অর্থাৎ তুলসী পাতাকে ‘পেইনকিলার’ ও বলা চলে।

তুলসী পাতা কখন খেতে হয়? When to consume Tulsi leaves?

তুলসি পাতা সকালে খালি পেটে খান।

 তুলসি পাতা সকালে খালি পেটে খান। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে তুলসি খাওয়ার অভ্যাস করেন তবে এটি আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। এটি কেবল সর্দি, কাশি নয় হজমের মতো সমস্যাও দূর করবে। এর পাতা হজমকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

তুলসী পাতার রস মধু দিয়ে খেলে কি হয়? What happens if you consume Tulsi leaf juice with honey?

আয়ুর্বেদের মতে, তুলসি পাতা আর মধু খেয়ে দিন শুরু করা উচিত। গরম জলে তুলসি পাতা থেঁতো করে মিশিয়ে দিন। এবার এতে মধু মিশিয়ে খান। এই মিশ্রণ খেলে ঠান্ডা লাগার ধাত, কাশি ও গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।

তুলসী দুধ খেলে কি ক্ষতি হয়? Is Tulsi leaves taken with milk harmful?

তুলসী এবং দুধের মিশ্রণ আপনার শ্বাসযন্ত্রের জন্যও দারুণ । এটি কেবল কাশি, গলা ব্যথা, সাধারণ সর্দি নিরাময়ের জন্য আপনার গলা পরিষ্কার করে না শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও বাধাও পরিষ্কার করে। হাঁপানির রোগীদের জন্যও প্রতিদিন তুলসীর দুধ পান করা উপকারী বলে জানা যায়।

প্রতিদিন তুলসী চা খেলে কি হয়? What happens if you drink Tulsi tea every day?

নিয়মিত তুলসি চা পান করলে প্রশান্তি ও শিথিলতার অনুভূতি জাগাতে পারে। তুলসীতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয় যা শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।

এটি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস বা অ্যালার্জির মতো অবস্থার ব্যক্তিদের জন্য উপকারী হতে পারে।

তুলসী চা

প্রতিদিন একটি করে তুলসি পাতা খেলে কি ক্ষতি হবে? Is it harmful to consume Tulsi leaf every day?

সামান্য তুলসি পাতা খেলে তা ক্ষতিকর নয় তবে অতিরিক্ত তুলসি পাতা খেলে এসময় নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে তুলসি এড়িয়ে চলাই উত্তম। অতিরিক্ত তুলসি পাতা খেলে তা নারীর ক্ষেত্রে হতে পারে বন্ধ্যাত্বের কারণ। তাই পরিমিত গ্রহণ করতে হবে।

রাতে তুলসী পাতা তোলা উচিত নয় কেন? Why we should not pick Tulsi leaves at night?

মনে করা হয় তুলসী পাতায় রাধাজির বাস। সূর্যাস্তের পর, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ রাধা রাণী বনে রাধাজীর সাথে রাস করেন। এমন অবস্থায় সূর্যাস্তের পর তুলসী পাতা ছেঁড়া উচিত নয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এটি ভগবান কৃষ্ণ এবং রাধার রাসকে বিরক্ত করে ।

তুলসী কাদের খাওয়া উচিত নয় ? Who should not consume Tulsi?

তুলসি খেলে শরীরের কিছু ক্ষতিও হতে পারে। সেগুলি কি কি, জেনে নিন :

১. ডায়াবেটিস রোগী

অনেকেই মনে করেন যে ডায়াবেটিক রোগীর তুলসি খাওয়া ভালো, কিন্তু তারা ভুল ভাবছেন। জেনে রাখা ভালো যে, আপনি যদি ডায়াবেটিস বা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার রোগী হন এবং সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাদের তুলসি না খাওয়া উচিত। নয়টি রক্তে শর্করা কম হয়ে যেতে পারে এবং এটি শরীরের পক্ষে মোটেই ভাল নয়।

২. গর্ভবতী মহিলা

 ডায়াবেটিক রোগীর তুলসি খাওয়া ভালো

 গর্ভবতী মহিলারা তুলসি না খাওয়াই উচিত। এর কারণ তুলসিতে ইউজেনল নামক একটি উপাদান থাকে, যার প্রভাবে পিরিয়ডস শুরু হয়ে যেতে পারে, এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ডায়রিয়ার সমস্যাও হতে পারে।

৩. তুলসী রক্ত পাতলা করে দেয়

 একদিনে খুব বেশি তুলসি পাতা খাওয়ার ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে। তুলসি পাতায় এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রক্তকে পাতলা করে দেয়, যা দেহের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। তাই অতিরিক্ত তুলসি খাওয়া উচিত নয়।

৪. পেটে জ্বালাপোড়া

তুলসির প্রভাবে আপনার পেটে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই সীমিত পরিমাণে তুলসি খাওয়া উচিত।

শেষ কথা, Conclusion :

ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনী তুলসীকে একটি পবিত্র ভেষজ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে মাধ্যমে আপনারা তুলসী পাতার ও রসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

Frequently Asked Questions

প্রতিদিন একটি করে তুলসি পাতা খেলে কি ক্ষতি হবে?

সামান্য তুলসি পাতা খেলে তা ক্ষতিকর নয় তবে অতিরিক্ত তুলসি পাতা খেলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তুলসী পাতা কখন খেতে হয়?

 তুলসি পাতা সকালে খালি পেটে খান।

তুলসী চা খেলে কি হয়?

নিয়মিত তুলসি চা পান করলে প্রশান্তি ও শিথিলতার অনুভূতি জাগাতে পারে।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts