টিউমার চেনার উপায় কি ? What is the way to Identify tumor? Details in Bengali

টিউমার চেনার উপায় কি

শরীরে টিউমারের মতো ব্যথাহীন লাম্প দেখা যাচ্ছে! ভয় হয়, ক্যানসার ছড়াচ্ছে না তো? এইভাবে সাতপাঁচ ভেবে আতঙ্কিত হয়ে যাই আমরা। তবে শরীরের কোনও অংশে টিউমারের মতো ফোলা মাংসপিণ্ড দেখা দিলেই আঁতকে উঠবেন না, আবার অবহেলাও করবেন না৷ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে টিউমারটি ক্ষতিকর কি না তা যাচাই করুন। সব টিউমার ক্ষতিকারক নয়। টিউমার চেনার উপায় অনেকেরই অজানা। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা উক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

টিউমার কি? What is a tumor?

এক কথায় বলতে গেলে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই হলো টিউমার। এটি মূলত অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো লাগাম ছাড়া অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বাইরের দিকে সৃষ্টি করে একটি উঁচু ঢিপি। সহজভাবে বলা যায় যে, শরীরের অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক এ কোষগুলো কোথাও জমা হয়ে একটি লাম্প বা প্লি বা চাকতির মতো হয়ে প্রকাশ পেলে তাকে তখন টিউমার বলে।

টিউমার কেন হয় ? Why do tumors occur?

টিউমার কেন হয় ?

বিভিন্ন কারণে এবং মানবদেহের যেকোনো অঙ্গে টিউমার হতে পারে। টিউমার হওয়ার জন্য দায়ী কিছু সাধারণ কারণ হল :

  • বংশগত কারণ
  • জেনেটিক সমস্যা
  • হরমোনাল সমস্যা
  • কোনো রকম আঘাত লাগা
  • কেমিক্যাল
  • অনিয়ন্ত্রিতভাবে জীবন যাপন
  • ঘন ঘন সন্তান প্রসব
  • অ্যালকোহল, ধুমপান
  • বিষাক্ত রাসায়নিক ইত্যাদি।

টিউমার কত প্রকার? What are the types of tumors?

টিউমারের ধরণ ও প্রকারভেদের কথা বলতে গেলে নির্দিষ্ট প্রকার বলা কঠিন। তবে সাধারণভাবে দেখতে গেলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রকম টিউমার দেখা যায়। ধরণ অনুযায়ী টিউমারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো –

১.হিস্টোমা বা কানেকটিভ টিস্যু টিউমার

২.সাইটোমা

৩.টেরাটোমা বা মিক্সড সেল টিউমার।

উক্ত প্রকারগুলোর মধ্যে হিস্টোমা টিউমার দুই ধরনের। একটি হল বিনাইন টিউমার এবং অন্যটি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। মানবদেহে এই দুই ধরণের টিউমারই দেখা যায়।

টিউমার কোথায় হয় ?

টিউমার কোথায় হয় ? Where is tumor generally located?

মানবদেহের যেসব স্থানে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে সেগুলো হলো হাত, পা, ঠোঁট, গলা, পিঠ, পাকস্থলী, স্তন, কিডনি, জরায়ু ও মস্তিস্ক। লক্ষ্য করে দেখা গেছে, মহিলারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্তন ও জরায়ু টিউমারের সমস্যায় ভুগেন। দেহের বিভিন্ন অংশের টিউমার ভিন্ন নামে পরিচিত। সেগুলো হল :

  • সাধারণত মাথার খুলি, মুখ-মণ্ডল ও নাসিকা গহ্বর প্রভৃতি স্থানে হাড়ের অস্থি টিউমারকে অস্টিওমা বলে।
  • হাড়ের কার্টিলেজ এর টিউমারকে কনড্রমা বলা হয়।
  • পিঠ ও কাঁধের ফ্যাটি টিস্যু টিউমারকে লিপোমা বা লাইপিমা বলা হয়।
  • চর্মের উপরের টিউমার এপিথেলিওমা নামে পরিচিত।
  • জরায়ু ও পাকস্থলীর টিউমারকে মাইওমা বলা হয়।
  • নাক, জরায়ু প্রভৃতি শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির টিউমারকে প্যাপিলোমা নামে অভিহিত করা হয়।
  • মস্তিষ্ক কোষের টিউমারকে গ্লাইওমা বলা হয়।
  • মস্তিষ্ক, লিভার প্রভৃতি স্থানের লসিকা নালীর টিউমারকে লিমফ্যানজিওমা বলা হয়।

টিউমার কি নরম হয় না শক্ত ? Is tumor soft or hard?

টিউমারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ টিউমার হচ্ছে লাইপোমা। লাইপোমা একটি নির্দোষ টিউমার,  যা মূলত চর্বিযুক্ত টিস্যু দিয়ে গঠিত। নরম টিস্যুযুক্ত লাইপোমাগুলোতে হাত দিয়ে স্পর্শ করলে নরম অনুভূত হয়, সাধারণত নড়ানো চড়ানো যায় এবং সাধারণভাবে এগুলো ব্যথাহীন।

বেনাইন টিউমার চেনার উপায়, Ways to identify benign tumors :

বেনাইন টিউমার

বিনাইন টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক কোষের সমষ্টি যা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে না। বেনাইন টিউমার সাধারণত বাহ্যিক পৃষ্ঠ দ্বারা ঘেরা থাকে বা এপিথেলিয়ামের সাথে অবস্থান করে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বেনাইন টিউমার সাধারণভাবে আঁচিল হিসেবেই দেখা দেয়। যদিও বেনাইন টিউমার মেটাস্ট্যাসাইজড হয় না, অর্থাৎ আশেপাশের কলায় কোনো সংক্রমণ ঘটায় না, কোষগুচ্ছ একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ ধরনের টিউমার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন মস্তিস্কের বিনাইন টিউমার ক্ষতিকর এবং এতে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার চেনার উপায়, Ways to identify malignant tumors :

মূলত ত্বকে মেলানোসাইট নামের এক ধরনের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ম্যালিগন্যান্ট মেলানমা হয়ে থাকে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হল সেই সমস্যা যে ধরণের টিউমারে আক্রান্ত হলে কোষগুচ্ছ একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ না থেকে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার নিজের প্রতিলিপি গঠন করতে থাকে এবং রক্ত ও লসিকা প্রবাহের মাধ্যমে সারা শরীরে মিশে যায়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার খুব দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। এ ধরণের টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক।

টিউমারগুলো যখন শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়ে গিয়ে সমস্যা তৈরি করে, সেই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারগুলোই মূলত বেশিরভাগ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার প্রাথমিক পর্যায়ে সারিয়ে ফেলা যায়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিউমার দেহ থেকে বের করে দিলে পুনরায় তা ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম৷

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের প্রাথমিক পর্যায়ে সেভাবে কোনও নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ওজন হ্রাস, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি লক্ষণ চোখে পড়ে৷ এই টিউমারের আকৃতি যত বাড়তে থাকে, ততই তা আশপাশের স্নায়ু এবং পেশিগুলিতে প্রভাব ফেলে, আর তখনই ব্যথা বা যন্ত্রণা অনুভূত হয়৷

টিউমার কি?

পেটে টিউমার হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়? What are the symptoms of tumor in the stomach?

পেট ক্যান্সারের লক্ষণ :

  • ক্লান্তি
  • খাওয়ার পর ফোলা অনুভব করা
  • অল্প খেলেও পেট ভরে যায়
  • তীব্র এবং ক্রমাগত অম্বল
  • তীব্র এবং অবিরাম বদহজম
  • অবিরাম এবং অব্যক্ত বমি বমি ভাব এবং বমি
  • অব্যক্ত পেট ব্যাথা
  • ব্যাখ্যাতীত ওজন হ্রাস ইত্যাদি।

ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ কি কি? What are the signs of breast tumor?

অল্পবয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হল :

  • স্তনে বা বগলে লাম্প বা পিণ্ড
  • উভয় স্তনের রঙের পরিবর্তন
  • উভয় স্তন থেকে অস্বাভাবিক স্রাব নির্গমন
  • পুরো স্তন বা স্তনের একটি অংশ ফুলে যাওয়া
  • স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন
  • স্তনবৃন্তে (Nipples) চুলকানি বা ব্যথা
  • স্তনের ত্বক অস্বাভাবিক কুঁচকে যাওয়া

টিউমার হলে কিভাবে সাবধান থাকবেন ? How to be careful if you have a tumor?

এমন একটা সময় ছিল যখন মানুষের টিউমার যদি হতো তা ওষুধ খেয়ে সাধারণভাবে ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে কারও টিউমার হলে তা শুধুমাত্র ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যায় না বরং অপারেশন পর্যন্ত যেতে হয়। তাই সাবধান থাকবেন যেন টিউমার এর সমস্যা না হয়। তবে যদি টিউমার হয়ে যায় তবে কিছু বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। সেগুলি হল :

  • টিউমার ভালো করার জন্য সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • টিউমার ভালো করতে অবশ্যই তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
  • ব্যথা বা অন্য কোনো সমস্যা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

টিউমার হলে কখন চিকিৎসকের দরকার? When to visit a doctor if you have a tumor?

টিউমার হলে কখন চিকিৎসকের দরকার?

যখনই আপনি শরীরের কোনও অংশে হঠাৎ করে অস্বস্তি বোধ হয়, সেটা টিউমারের কারণে হতে পারে। এছাড়াও টিউমারের স্থানে ব্যথা অনুভব হলে দেরি না করে আপনার পরীক্ষা করা উচিত, যাতে সময় থাকতে এর বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়া যায়। শরীরে থাকা টিউমারের কোষগুলি অতিরিক্ত বাড়তে শুরু করলে এর বিভিন্ন লক্ষণও দেখা দিতে শুরু হয়। এই লক্ষণগুলি মাথায় রেখে, আপনি আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।

শেষ কথা, Conclusion  :

টিউমার হলে অনেকেই ক্যান্সার ভেবে ঘাবড়ে যান। তবে টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তা হয়তো অনেকেই জানেন না। তাই আগেই দুশ্চিন্তা না করে বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে টিউমারটি ক্ষতিকর কি না তা সহজেই জেনে নেওয়া যায়। আশা করি আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা কোন টিউমার ক্ষতিকর সেটা জানতে পেরেছেন।

Frequently Asked Questions

টিউমার মানে কি?

সাধারণভাবে বলতে গেলে দেহের কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকলে ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। 

টিউমার কত প্রকার?

ধরণ অনুযায়ী টিউমারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো –
১.হিস্টোমা বা কানেকটিভ টিস্যু টিউমার
২.সাইটোমা
৩.টেরাটোমা বা মিক্সড সেল টিউমার।

বিনাইন টিউমার ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার এর পার্থক্য?

একটি সৌম্য টিউমারের স্বতন্ত্র, মসৃণ, নিয়মিত সীমানা রয়েছে। একটি ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের অনিয়মিত সীমানা থাকে এবং এটি একটি সৌম্য টিউমারের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পায় ।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts