চিনির প্রতি মানুষের আসক্তি নতুন কিছু নয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে সচেতনতা। এখন পুষ্টিবিদেরা মুখে মুখে বলে থাকেন—চিনি মানেই বিপদ! ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ—সব কিছুর মূলে নাকি এই সাদা বিষ। তবে তার মাঝেই আলোচনায় উঠে এসেছে এক নতুন নাম—টারবিনাডো। একে বলা হচ্ছে চিনির কম ক্ষতিকর সংস্করণ। কিন্তু আদৌ কি তা-ই?
টারবিনাডো কী?

টারবিনাডো আসলে আখের রস থেকে তৈরি হওয়া অপরিশোধিত চিনি। এই চিনি পরিপূর্ণভাবে প্রক্রিয়াজাত নয়। আখের রসের প্রাথমিক পর্যায়ের পরিশোধনের পরে যে হালকা বাদামি বা সোনালি রঙের দানাদার ক্রিস্টাল তৈরি হয়, তাকেই টারবিনাডো বলা হয়। সেখান থেকেই একাধিক পর্যায়ে প্রক্রিয়াকরণ করে তৈরি হয় রিফাইন্ড বা সাদা চিনি।
ব্রাউন সুগার নয়
অনেকেই টারবিনাডোকে ব্রাউন সুগার বলে ভুল করেন। তবে দুটির মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। ব্রাউন সুগার অনেক সময় রিফাইন্ড চিনিতে মোলাসেস (Molasses) মিশিয়ে তৈরি হয়। আর টারবিনাডো হল প্রাকৃতিকভাবে আখের রসে থাকা মোলাসেস-সহ প্রাথমিক স্তরের চিনি, কম প্রক্রিয়াজাত।
গবেষণায় কী বলছে?
সম্প্রতি ‘অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস’ নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, টারবিনাডো তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর। এটি বেশি মিষ্টি হলেও এতে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াকরণ না থাকায় শরীরের জন্য কম বিপজ্জনক বলে মনে করছেন গবেষকেরা। তবে এটিকে পুরোপুরি নিরাপদ বলা হচ্ছে না। কারণ, অপরিশোধিত হওয়ার ফলে এতে মাটি বা অন্যান্য অশুদ্ধ পদার্থ মিশে থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা—আসল না বাহুল্য?

টারবিনাডোতে প্রতি চামচে প্রায় ৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ১৬ ক্যালোরি থাকে। এই হিসেব সাদা চিনির মতোই। তবে এতে কিছু পরিমাণে মিনারেল (যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম) থাকতে পারে, যা রিফাইন্ড চিনিতে থাকে না। তাই তুলনামূলক দিক থেকে এটিকে একটু ‘ভাল’ বলা চলে, কিন্তু একে সুপারফুড ভাবার কোনও কারণ নেই।
পরিমিত ব্যবহারেই সুরক্ষা
আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) স্পষ্টভাবে জানিয়েছে—টারবিনাডো সেবন যদি সীমিত মাত্রায় করা হয়, তবে ক্ষতি নেই। তবে চা বা কফিতে মুঠো মুঠো চিনি মেশালে, সেটা যতই ‘কম প্রক্রিয়াজাত’ হোক না কেন, রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়বে, ওজনও বাড়বে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও থেকে যাবে।
টারবিনাডো এক ধরনের কম প্রক্রিয়াজাত চিনি। একে নিরাপদ বা স্বাস্থ্যকর বলে ব্যবহার করলে বিপদ বাড়তেই পারে।
তবে কেউ যদি দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার এড়িয়ে চলে এবং বিকল্প হিসেবে টারবিনাডো বেছে নেয়, তাতে কিছুটা উপকার হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে—যে কোনও চিনি, যতই প্রাকৃতিক হোক না কেন, পরিমিত ব্যবহারেই সত্যিকারের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত হয়।