প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই অপরিহার্যতা কি অজান্তেই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ডেকে আনছে চরম বিপদ? বিশেষ করে কোল্ড ড্রিংকস বা সফট ড্রিংকসের খালি বোতল জলের বোতল হিসেবে পুনরায় ব্যবহার করার প্রবণতা আমাদের অনেকেরই আছে। কিন্তু এই আপাত নিরীহ অভ্যাসটির আড়ালে লুকিয়ে আছে মারাত্মক সব স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই।
আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, এই প্লাস্টিকের বোতলগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। এই বোতলগুলিতে জমতে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো আসল ভিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণাগুলি বোতলের গা থেকে আলাদা হয়ে জলের সঙ্গে মিশে যায় এবং আমরা যখন সেই জল পান করি, তখন সেগুলি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
বিপিএ এবং এর ভয়াবহ প্রভাব :
নিম্নমানের প্লাস্টিকে বিফিনাইল এ (BPA) নামক একটি রাসায়নিক থাকে। এই রাসায়নিক শরীরে ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। গবেষণায় দেখা গেছে, BPA ডায়াবেটিস, স্থূলতা, বন্ধ্যাত্ব এবং আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের মধ্যে এটি নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে। আর মাইক্রোপ্লাস্টিক যেহেতু হজমযোগ্য নয়, তাই পেটের নানাবিধ সমস্যা দেখা দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
সূর্যের আলোয় লুকানো বিপদ :
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে প্লাস্টিকের বোতলের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এর ফলে ডায়াক্সিন-এর মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক তৈরি হয়, যা স্তনব্দ ক্যানসারের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট খারাপ, অম্বল, গ্যাস এবং হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্থূলতা থেকে ক্যানসার:

মাইক্রোপ্লাস্টিক শুধুমাত্র পেটের সমস্যাই নয়, ওজন বৃদ্ধির পিছনেও এটি কিছুটা দায়ী। এছাড়াও, এটি ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে অকালে সুগারের মতো রোগের জন্ম দিতে পারে। প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা প্যাথেলেটস নামক উপাদানটি লিভার ক্যানসারের কারণ হতে পারে এবং পুরুষদের শরীরে শুক্রাণুর সংখ্যা (স্পার্ম কাউন্ট) কমিয়ে দিতে পারে।
সুতরাং, এবার যখনই আপনি একটি কোল্ড ড্রিংকের খালি বোতলে জল ভরতে যাবেন, একবার ভেবে দেখবেন। আপনার সাময়িক সুবিধার জন্য আপনি নিজের অজান্তেই কী বিপদ ডেকে আনছেন! নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে কাঁচ বা স্টিলের বোতল ব্যবহার করা উচিত।