ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায়, Easy way to burn belly fat in Bengali

ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায়

মহিলা হোক কিংবা পুরুষ, মেদযুক্ত ভুঁড়ি কেউই পছন্দ করেন না, কিন্তু উভয়ের ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য ভুঁড়ির কারণে বর্ধিত হয়, তাছাড়া শরীরে থাকা অতিরিক্ত মেদ বিভিন্ন রোগের বা শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা মেদ ও ভুঁড়ি কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

মেদ ভুঁড়ির সমস্যা সমাধানের উপায়, Ways to solve the problem of obesity and belly fat

ওজন কম করে ছিপছিপে পাতলা, মেদহীন শরীর পেতে আমরা কত কি না করি! কিন্তু অনেকসময় শত রকম ডায়েট চার্ট অনুসরণ করার পরও পেটের মেদ যেন কম হতেই চায় না। এই অবস্থায় মনে হয় যেন মেদ কমানোর চাইতে বড় চ্যালেঞ্জ এ জগতে আর কিছুই নেই! কিন্তু এই ভেবে হাল ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। শুধু ডায়েট করলেই হবে না, বরং শারীরিক বিশেষ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করার দিকে নজর দিলেই আপনি মেদ কম করতে পারবেন। 

১. রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা :

অনেকেরই তলপেটে মেদ জমে ভুঁড়ি বেরিয়ে যায়, এই সমস্যা কমানোর সবচেয়ে দ্রুততম উপায় হলো উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এসব খাদ্যের মধ্যে রয়েছে স্যালমন মাছ, মাখন এবং অলিভ অয়েল ইত্যাদি। এভাবে প্রোটিন ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেয়ে অন্য মিষ্টিজাতীয় কম খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকবে। তবে শুধু খেলেই হবে না, দেহকে খাদ্য বিপাক প্রক্রিয়ার জন্যও সময় দিতে হবে এবং মেদ ঝরাতে দুই খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করতে হবে।

২. প্রচুর পরিমাণ জল পান করা উচিত :

যেকোনো মানুষের সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য জল খাওয়া প্রয়োজন। জল খাওয়ার ফলে আমাদের ওজনও নিয়ন্ত্রিত হয়, কারণ জল আমাদের ক্ষুধাভাব নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরকে শক্তি দেয়। তাছাড়া জল মেটাবলিজম ও হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে।

প্রচুর পরিমাণ জল পান করা উচিত

৩. নিজেকে যথাসম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা :

এটা আমরা সকলেই জানি যে দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতি করে, তার মধ্যে একটি হল ওজনও বাড়িয়ে তোলা। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তাগ্রস্ততার ফলে দেহে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে তা ইনসুলিনের মাত্রাও বাড়িয়ে তোলে, এর ফলে রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। তাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে বই পড়া, হাঁটাহাঁটি, জার্নালিং কিংবা শরীরচর্চার অথবা পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

৪. শুধু ভুঁড়ি নয়, পুরো শরীরের দিকেই নজর দিন :

ভুঁড়িতে মেদ জমেছে বলে শরীরের শুধুমাত্র ওই অংশের মেদ কমানোর দিকে মনোযোগ দিলে হয়তো কোনো কাজ হবে না। পুরো শরীরের প্রতিই মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে পেটের মেদ কমানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে পুরো শরীরের চর্বি কম করা। শরীরের অন্য অংশের ফ্যাট কমে গেলেই আস্তে আস্তে পেটের মেদও কম হতে থাকবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন অনুশীলনের মতো বিভিন্ন ব্যায়ামের মাধ্যমে মেটাবলিজম বাড়িয়ে তুলতে হবে। এতে পেশী সচল থাকবে এবং ক্যালরি ঝরানো সহজ হবে।

৫. পরিমিত খাবার খাওয়া :

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি খাবারের মধ্যেই থাকে, কিন্তু দৈহিক চাহিদা অনুযায়ী সাধারণত খুব কম মানুষ খাবার গ্রহণ করে থাকেন, যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই খাবার দৈহিক চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

পরিমিত খাবার খাওয়া

৬. চিনি খাওয়া বন্ধ করতে হবে :

চিনি আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়, এটা আমরা সবাই জানি, কারণ চিনি খেলে আমাদের শরীর সুগারের মাত্রা কমানোর জন্য ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়। এই সুগার তখন যকৃতে গিয়ে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত হয় যা অবশেষে ফ্যাট হিসেবে জমা হয়। ফলে পেটের অংশেই মেদ বাড়তে থাকে।

৮. নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি :

বাংলার একটি প্রবাদ হয়তো সকলেই জানেন যে- ‘কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।’ মেদভুঁড়ি কম করার ক্ষেত্রেও এই প্রবাদ প্রযোজ্য। পেটের মেদ কম করতে চাইলে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন একাধিক স্বাস্থ্যবিদ, কারণ ব্যায়ামের মাধ্যমে ত্বকনিম্নস্থ চর্বি কম হয়, অন্যদিকে ডায়েটের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ চর্বি কমতে থাকে। এছাড়া শরীরের বাড়তি ক্যালরি ঝরাতে হাঁটাহাঁটি করা উচিত, পাশাপাশি হাঁটলে দুশ্চিন্তাও কমে। 

৮. পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি :

ওজন কম করতে এবং শরীর-মনকে ভালো রাখতে রাতে ভালো ঘুম হওয়া জরুরী। কেনো ব্যক্তির যদি দীর্ঘসময় ধরে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব থাকে তবে তার পেটে মেদ জমতে পারে। ঘুম কম হলে উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার গ্রহণের ইচ্ছা বেড়ে যায়, বিশেষত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার, কারণ এধরনের খাবার দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম, কিন্তু ক্যালরি বেশি হওয়ার কারণে মেদ ও জমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই ঘুমের রুটিন ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি

মেদ কমানোর ক্ষেত্রে সহকারী খাবার, Proper Diet aids in fat loss

 মেদবহুল শরীর যেকোনো ব্যক্তির শুধু সৌন্দর্যই নষ্ট করে না, বরং যেকোনো কেউর কাছে ভারী শরীর খুব অস্বস্তিকরও বটে। শরীরের মেদ কম করতে অনেকে খাবার খাওয়া কমিয়ে দেন, আর নিয়মিত শরীর চর্চা (ব্যায়াম) করেন। কিন্তু খাবার কম করার ক্ষেত্রেই বিচার বিবেচনা করা জরুরী, নয়তো পুষ্টির অভাব দেখা দিলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে। তবে কিছু উপকারী খাবার আছে যা মেদ কম করতে সহায়তা করবে। 

কাজুবাদাম খান :

দীর্ঘক্ষণ পেট ভরে রাখার জন্য ভিটামিন ই সমৃদ্ধ কাজুবাদাম এক মুঠোই যথেষ্ঠ। এতে খিদে কম হয়ে যায়, তাছাড়া কাজুবাদামে যে ক্যালরি আছে তা শরীরে মেদ তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখে না। তাই অন্য কোনো ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার না খেয়ে বরং কাজুবাদাম রোজ খেতে পারেন।

তরমুজ খাওয়া উচিত :

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে জল পান করার কথা, তবে সারাদিন ধরে তো শুধু জল পান করতে কারও মন চাইবে না। সেক্ষেত্রে জল বা রস সম্পন্ন ফল খেতে পারেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন যে তরমুজে রয়েছে ৮২ শতাংশ জল। এই ফল শরীরের বাড়তি সোডিয়াম সরিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষুধাহীন থাকতে সহায়তা করে। এ ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ তথা সুস্বাদু। এর প্রতি এক কাপ রসে রয়েছে ১০০ ক্যালোরি। পছন্দের তারকাদের মতো সুন্দর শরীর গড়তে নাস্তায় তরমুজ রাখুন।

তরমুজ খাওয়া উচিত

মটরশুটি খেতে পারেন :

নিয়মিত মটরশুটি খাওয়ার ফলে চর্বি কমে, হজম ক্ষমতা বাড়ে, শরীরের মাংসপেশীরও বিকাশ ঘটে, তবে নিত্য খেতে গেলে পরিমিত মাপে খাওয়াই ভালো। মেদ কমাতে খাওয়া দাওয়া পরিমিত রাখতে হয়, আর খিদে না পেলে তেমন কিছু খাওয়ার ইচ্ছেও হয়না সহজে, সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ক্ষুধাহীন থাকার জন্য মটরশুটি বেশ কার্যকরী।

সবুজ শাক সবজি খাওয়া উচিত :

মেদ ভুঁড়ি কম করে পাতলা শরীরের অধিকারী হতে চাইলে সবুজ শাক-সবজি খাওয়া জরুরী। মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদির তুলনায় শাক সবজিতে ফ্যাট এর পরিমাণ সীমিত থাকে, তাছাড়া ভাতে থাকে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি, সেক্ষেত্রে ভাত বা উল্লেখিত অন্যান্য খাবারের চেয়ে শাক-সবজির পরিমাণ বেশি হলেও সমস্যা নেই। এভাবে শরীরে বিভিন্ন অত্যাবশ্যক ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের চাহিদা মিটবে এবং শরীরে চর্বিও কম থাকবে। এছাড়াও শরীরে জল ধরে রাখতেও সহায়ক শাক-সবজি।

শশা খান :

শশায় প্রায় ৯৬ শতাংশই জল থাকে। তাছাড়া শশা খুবই ঠাণ্ডাজাতীয় খাদ্য। পাশাপাশি এটি অত্যন্ত কম ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য। একটি শশাতে মাত্র ৪৫ ক্যালোরি থাকে, তাই শশা খেলে শরীরের মেদ জমবে না, হজম ভালো হবে ফলে পেশির কার্যকারিতাও সচল থাকবে।

শশা খান

আভাকাডো বা নাশপাতি খেতে পারেন :

শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টিতে ভরপুর আভাকোডা বা নাশপাতি জাতীয় ফল। আঁশযুক্ত এই ফল খেলে দীর্ঘক্ষণ খিদে পায় না, ফলে কম খাওয়া হবে, এভাবে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট বার্ন হবে, ফলে পেটের চর্বি দ্রুত কমে যাবে।

উপসংহার, Conclusion 

১০-১৫ দিনের চেষ্টায় মেদ ভুঁড়ি কখনোই কমে যাবে না, পেটের মেদ কমানো একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই যারা মেদ ঝরিয়ে ভুঁড়ি কম করতে চান তাদের ধৈর্য ধরে উপরিউক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করলে খুব সহজেই আপনি শরীরের মেদ কম করে নিতে সক্ষম হতে পারবেন।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts