হার্ট ভালো আছে বুঝবেন কিভাবে? How do you understand that your heart is fine? Details in Bengali

হার্ট ভালো আছে বুঝবেন কিভাবে?

আজকের দ্রুত-গতির বিশ্বে, আমাদের হৃদরোগের স্বাস্থ্য প্রায়ই উপেক্ষা করা হয় কারণ ব্যস্ত সময়সূচী প্রায়শই স্ব-যত্নের জন্য সামান্য সময়ও পায় না অনেকে। বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হৃদরোগ এখন আর বার্ধক্যের রোগ নয়, বরং অনেক কমবয়সী ব্যক্তিগণ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া জরুরি। অন্যথায় বিপদ হতে পারে। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা হার্ট ভালো আছে বুঝার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য হোম টেস্ট, Home Tests for Heart Health :

 আপনার হার্টের স্বাস্থ্য কেমন আছে তা যাচাই করতে আপনি কিছু টেস্ট করিয়ে দেখতে পারেন। সেগুলো হল :

1. কোলেস্টেরল টেস্ট :

বাজারে কোলেস্টেরল টেস্টিং কিট সহজেই উপলব্ধ এবং সময়ের সাথে সাথে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিরীক্ষণ করতে সহায়তা করতে পারে। হার্টের স্বাস্থ্য কেমন আছে তা যাচাই করতে ঘরে বসে এই টেস্ট করতে পারেন।

2. রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা পর্যবেক্ষণ :

আপনি ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস হয়ে থাকে নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে হার্টের সমস্যা হতে পারে।

3. রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ :

আপনার রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করতে একটি নির্ভরযোগ্য ব্লাড প্রেসার মনিটরে ব্যবহার করুন।

4. ইসিজি বা ইকেজি :

বর্তমান সময়ে কিছু স্মার্টফোন অ্যাপ এবং পোর্টেবল ইসিজি ডিভাইস অনলাইনে প্রাথমিক হার্ট অ্যাটাক টেস্ট প্রদান করতে পারে। সেগুলো ঘরে বসে ব্যবহার করতে পারেন। তবে পূর্বে এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো।

এই পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়নের মাধ্যমে আপনার হার্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারেন।

হার্টের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়? What are the symptoms of heart problems?

হার্টের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়?

– মানসিক চাপ, ভারীভাব, বুকের মাঝে চাপ দিয়ে ব্যথা হওয়া, বুক থেকে বাহু ব্যথা, পাশাপাশি ব্যথা থুতনি, পিঠ ও পেটে ছড়িয়ে পড়া, হালকা মাথা ব্যথা বা ঝিম ঝিম ভাব, ঘাম হওয়া, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, বমিভাব বা বমি হওয়া ইত্যাদি। অনেকের ক্ষেত্রে উদ্বেগ, কাশি বা শ্বাস কষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

স্বাভাবিক পালস রেট কত হওয়া উচিত? What should be the normal pulse rate?

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি স্বাভাবিক বিশ্রামের হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে 60 থেকে 100 বিট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

হাঁটার পর হৃদস্পন্দনের স্বাভাবিক হার কত? What is the normal heart rate after walking?

একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হাঁটার পর গড় হৃদস্পন্দন আদর্শভাবে প্রতি মিনিটে 100-120 বিটের মধ্যে হতে পারে। আবার, ক্রমবর্ধমান তীব্রতার সাথে, হাঁটার হৃদস্পন্দনও বাড়বে।

হার্টের সমস্যা হলে কি এসিডিটি হয়? Do heart problems lead to acidity?

অম্বল নিজেই হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হতে পারে । সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে: চাপ, আঁটসাঁটতা, ব্যথা, বা আপনার বুকে বা বাহুতে একটি চাপ বা ব্যথা সংবেদন যা আপনার ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বমি বমি ভাব, বদহজম, অম্বল বা পেটে ব্যথা।

হার্ট রেট কত হলে হাসপাতালে যাওয়া উচিত? At what rate of heart beat one should visit the hospital?

আপনি যদি শান্ত হয়ে বসে থাকেন তবে আপনার হৃদয় প্রতি মিনিটে 100 বারের বেশি স্পন্দিত হওয়ার কথা নয়। রোগীদের ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ড প্রতি মিনিটে 160 বা তার বেশি স্পন্দিত হয়।

ঘরে বসে হার্টের ব্লক চেক কিভাবে করবেন ? How to check heart block at home?

হার্টের ব্লক চেক

 আপনি নিয়মিত রক্তচাপ রিডিং, আপনার হৃদস্পন্দন পরিমাপ এবং সিঁড়ি পরীক্ষা করে বাড়িতে আপনার হৃদরোগের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ করতে পারেন। আপনি যদি কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, আপনার ডাক্তারকে অবিলম্বে জানাতে ভুলবেন না। একজন সুস্থ হার্টের লোকের চারটি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেড় মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। আপনি যদি উল্লেখিত সময়সীমার মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে না পারেন, তাহলে আপনার হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উপ-অনুকূল হতে পারে।

হৃদরোগের যেসব লক্ষণ উপেক্ষা করা উচিত নয়, Symptoms of heart disease that should not be ignored :

হৃদরোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে একটি। অনেকেই হৃদরোগের উপসর্গ উপেক্ষা করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম লক্ষণগুলো শনাক্ত হলে হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যেতে পারে।

হৃদরোগের যেসব লক্ষণ উপেক্ষা করা উচিত নয়, সেগুলি হল :

  • বুকে ব্যথা: বুকে, চোয়ালে বা বাম হাতে তীব্র বা তীব্র ব্যথা হৃদরোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। যদি এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, আপনার অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  •  পা ফুলে যাওয়া: হাঁটতে বা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় যদি আপনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন বা আপনার পায়ে ফোলা লক্ষ্য করেন তবে এটি হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।
  • শরীরের অন্যান্য অংশে অস্বস্তি: আপনি যদি আপনার সমস্ত শরীরে অস্বস্তি অনুভব করেন যা কেবল আপনার হৃদয়কে প্রভাবিত করে না তবে সতর্ক থাকুন। হার্ট অ্যাটাক আপনার বাহু, পিঠ, ঘাড় এবং চোয়ালে ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। যাইহোক, হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয়।
  • মাথা ঘোরা: আপনি যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করেন বা খাবার এড়িয়ে যান, হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলে আপনার মাথা ঘোরা হতে পারে। আপনি যদি মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথা অনুভব করেন, সেইসাথে বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তবে এটিকে অবহেলা করবেন না। এটি হৃদরোগের লক্ষণও হতে পারে।
  • ক্লান্তি: আপনি যদি সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং ব্যায়াম করার সময় শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তবে এটিও হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কম করতে যা খাবেন, What to eat to lower the risk of heart disease :

হার্টের সুস্থতার জন্য যা খাবেন:

হৃদরোগের ঝুঁকি কম করতে যা খাবেন,

সবুজ শাকসবজি:

পালং শাক এবং বিভিন্ন সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই পদার্থগুলো ধমনীকে সুরক্ষা দিতে থাকে এবং রক্ত ​​জমাট বাঁধতে দেয় না।  গবেষণায় দেখা গেছে সবুজ শাকসবজি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

রসুন:

রসুন হার্টের জন্য খুবই ভালো। গরম জলে ২ মিনিট রান্না করে বা তরকারিতে আস্ত রসুন খেলে হার্ট সতেজ থাকে।

কমলালেবু : 

কমলালেবুতে পেকটিন নামক ফাইবার থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে খুবই সহায়ক। এতে পটাশিয়ামও রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। একটি মাঝারি মাপের কমলাতে 62 ক্যালোরি এবং তিন গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই আপনার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় কমলালেবু অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

বাদাম:

কাজু, বাদাম, হ্যাজেলনাট, আখরোট এবং অন্যান্য বাদাম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। এই বাদাম প্রোটিন, ফাইবার, মিনারেল, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। আখরোট ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ।

বেরি:

হার্টের স্বাস্থ্যে এই জাতীয় ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি এবং রাস্পবেরির মতো ফলগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ যা হৃৎপিণ্ডকে রক্ষা করে। স্ট্রেস এবং প্রদাহ উপশম করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বেরি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

ডার্ক চকলেট:

মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে সতেজ করে ডার্ক চকলেট। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

মাশরুম:

মাশরুমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রোটিন যা হার্ট অ্যাটাক এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

টক দই :

টক দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া। টক দই হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, হজমশক্তি উন্নত করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

বীজ ভিত্তিক খাবার :

বীজ ভিত্তিক খাবার যেমন তিলের বীজ ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। ওমেগা-৩ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এইভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।

গ্রিন টি:

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গ্রিন টি খুবই কার্যকরী। বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে, গ্রিন টি শরীরে রক্ত ​​চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া গ্রিন টি রক্ত ​​জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। এছাড়া গ্রিন টি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা হ্রাস করে।

শেষ কথা, Conclusion :

আপনার হার্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত এবং সক্রিয় থাকার মাধ্যমে, আপনি একটি শক্তিশালী এবং সুস্থ হৃদয় বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারেন। হৃদপিন্ড আমাদের শরীরের ইঞ্জিন তাই একে সুস্থ রাখা খুব জরুরি। আশা করি উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা হৃদপিণ্ডের খেয়াল কিভাবে রাখতে হবে তা জানতে পেরেছেন।

Frequently Asked Questions :

স্বাভাবিক পালস রেট কত হওয়া উচিত?

প্রতি মিনিটে 60 থেকে 100 বিট

হার্টের স্বাস্থ্য কেমন আছে তা যাচাই করতে কি কি টেস্ট করানো হয় ?

ইসিজি বা ইকেজি, কোলেস্টেরল টেস্ট, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা, ব্লাড প্রেসার

হার্ট রেট কত হলে হাসপাতালে যাওয়া উচিত?

প্রতি মিনিটে 100 বারের বেশি স্পন্দিত হলে

Contents show

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts