শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে নারী বা পুরুষ উভয়ের জন্যই সেটা বেশ অস্বস্তিকর বলে মনে হয়। বর্তমানের আধুনিক জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যাও বেড়ে চলেছে। বেশিরভাগ মানুষই একটা বয়সের পর ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন।
তবে কারও শরীরের ওজন যখন স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত বেড়ে যায় তখন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা সবার ক্ষেত্রেই জরুরী। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ওজন কম করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
ডায়েট ছাড়াই ওজন কম করা যায়, জেনে নিন কিভাবে, how to reduce weight without following strict diet?
অতিরিক্ত ওজন কম করার কথা চিন্তা করলে প্রথমেই মাথায় আসে ডায়েট করার কথা। অনেকেই ওজন কম করার জন্যে ডায়েট, ফাস্টিং, ইত্যাদি করে। অনেকে কোনো স্বাস্থ্যবিদের পরামর্শ ছাড়াই ডায়েট করতে শুরু করেন। অনেকের মতে ডায়েট করা মানে খাবার না খাওয়া বা খাবারের পরিমাণ একেবারে কম করে দেওয়া।
পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়েট হলো ব্যক্তি বিশেষে শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করার পদ্ধতি। তবে ওজন কম করার ক্ষেত্রে ডায়েট করা বাধ্যতামূলক নয়। ডায়েট ছাড়াও আরো বেশ কিছু পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে ওজন কম করা যায়, কারণ ওজন বৃদ্ধি শুধুমাত্র খাবারের জন্যই হয় না।
অনেক সময় শারীরিক কোনও অসুস্থতা, ঔষধ, হরমোন ইত্যাদি কারণেও হয়ে থাকে। তাই ওজন কম করার আগে কী কারণে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা জানা খুব জরুরি। বাছাই না করে সবরকম খাবার খেয়ে ও নিজের দৈনন্দিন জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আপনি শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে পারেন।
জেনে নিন কীভাবে ডায়েট ছাড়া আপনার ওজন কম করবেন:
রোজ সকালে খালিপেটে কার্ডিও করা :
নিত্যদিন ব্যায়াম করা উচিত। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালোভাবে কাজ করে, ফলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা জরুরি। যেমন, জোরে জোরে হাঁটার অভ্যাস বা দৌড়ানো, বইসাইকেল চালানো, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা ইত্যাদি।
এই অভ্যাসগুলো ক্যালরি পোড়াতে এবং শরীরের বাড়তি ওজন কম করতে সাহায্য করে। যদি আপনারা খাবার নিয়ন্ত্রণ না করেও শুধু ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যালরি বার্ণ করতে চান তবে প্রতিদিন সকালে খাওয়ার আগে ছোট কার্ডিও ওয়ার্ক যেমন- হাটা, জগিং ইত্যাদির মাধ্যমে ভালো ফলাফল পেতে পারেন। ক্যালরি বেশি বার্ণ হয় সকালে ব্যায়াম করলে, ফলে খাওয়ার পরে কার্ডিও না করে বরং খাওয়ার আগে কার্ডিও করলে আপনি ভালো ফল পাবেন।
পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া জরুরি :
অনেকেরই রাতে ঘুম আসেনা, বা তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস নেই। রাত ঘুম না হওয়া ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই কারও যদি রাত জাগার অভ্যাস থাকে তাহলে তা আজই বাদ দিয়ে দিতে হবে। রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম নিশ্চিত করা খুব জরুরী, কারণ প্রতি রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, এতে আপনার শরীরের বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে।
পর্যাপ্ত জল পান করার অভ্যাস :
অনেকেই বলেন যে খাওয়ার ঠিক পূর্বে কখনোই জল খাওয়া উচিৎ না। এটা ভুল ধারণা, বরং আপনি যদি একটু কম খেতে চান তবে খাওয়া শুরু করার আগে এক গ্লাস জল খেয়ে নিন। এতে আপনার পেট ভরা ভরা লাগবে, ফলে আপনি তুলনামূলকভাবে কিছুটা খাবার কম খাবেন। সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করার অভ্যাস তৈরি করা উচিত, কারণ পানি বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে :
নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করার মধ্যম বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় এবং এতে ওজন কম হয়। ডিম, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাদ্যগুলো প্রোটিন সমৃদ্ধ, যা আমাদের বিপাক বৃদ্ধি করে। তবে কার্বোহাইড্রেড বাদ দিয়ে কখনই শুধু প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত হয়।
চিনি পরিহার করতে হবে :
কাঙ্ক্ষিত ওজন কম করার জন্য নিত্যদিনের খাদ্যতালিকা থেকে চিনিকে পরিহার করতে হবে। এর কারণ হল, মাত্র ১ চা-চামচ চিনিতে ১৬ শতাংশ ক্যালরি থাকে, ফলে চিনি খেলে ওজন কম করা মুশকিল হয়ে যায়, কেননা আমরা চিনি থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করে থাকি। তাই আজই চিনি পরিহার করুন অথবা পরিমাণ কম করে দিন।
ফাস্ট ফুড ও কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকুন :
যারা অতিরিক্ত খাবার হিসেবে কোমল পানীয়, মধ্য দুপুর বা বিকালের খাবারে সিঙ্গারা, পকোড়া বা অন্যকোনো ডুবো তেলে ভাজা খাবার, অথবা যেকোনো সময় খাবার পর যদি কোনো মিষ্টি খাবার খেয়ে থাকেন তবে সেই অভ্যাসগুলো এখনই বাদ দিয়ে দিতে হবে। এসব খাবার গ্রহণের ফলে ওজন কম করা কষ্টকর হয়ে যায়।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করুন :
অনেকে ওজন কম করার চিন্তায় দিনের বেশির ভাগ সময় না খেয়ে থাকেন, আবার অনেকে সারাদিনে একবারে দুপুরে খাবার গ্রহণ করেন। অনেকে এমনও আছেন যারা প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার গ্রহণ করেন, এইসব অভ্যাসের কারণে ধীরে ধীরে বিপাক ক্রিয়া ধীর হতে থাকে।
আবার দীর্ঘ সময় কেউ যদি না খেয়ে বসে থাকে, সে একবার খাওয়ার সময় বেশি খাবার গ্রহণ করে নেয়, ফলে তা ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করার অভ্যাস রাখতে হবে, এতে সহজে ওজন বেড়ে ওঠে না।
ব্যায়াম ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে কমবে ওজন, Different ways to reduce weight without yoga or workout
বিশেষজ্ঞদের মতে ব্যায়াম ছাড়াও ওজন কম করার বহু উপায় আছে। এর কারণ হল ওজন হ্রাস হওয়ার মাত্র ৩০% নির্ভর করে ব্যায়াম বা শরীরচর্চার ওপর; ৭০% সঠিক খাওয়া দাওয়ার ওপর নির্ভর করে । তাই ব্যায়াম ছাড়াও ওজন কম করা যায়। নিত্যদিনের অভ্যাসের কিছু বদলে নিলেই খুব সহজে আপনি নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
- ১. ওজন কম করতে চাইলে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খাওয়া খুব জরুরি। দিনের দুটো বড় মিলের মাঝে যদি খিদে পায় তবে ভাজাভুজি না খেয়ে তার বদলে বাদাম, গ্রানোলা বার, ফল খেতে পারেন।
- ২. ওজন কম করার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ টিপ হল খাবারের মধ্যে নিয়মিত গ্যাপ রাখা। বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকা ঠিক না, এতে ওজন বাড়বে। দিনে ৫-৬ বার অল্প অল্প করে কিছু না কিছু খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- ৩. খাওয়ার সময় অনেকে ই টিভি বা মোবাইল ফোন দেখতে দেখতে খাওয়ার অভ্যেস। সেটা মোটেও ভালো নয়। এভাবে আপনি কখনও খাবারে মনোঃসংযোগ করতে পারেন না, যায় ফলে কখন আপনার পেট ভরে গিয়েছে তা বুঝতে না পেরে বেশি খেয়ে নিতে পারেন।
- ৪. কোনো কিছুর জন্য যতই তাড়া থাক না কেন, খেতে বসলে আস্তে আস্তে ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া উচিত, কারণ ভালো করে চিবিয়ে না খাওয়ার ফলে বেশিরভাগ সময় খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। তাই মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
উপসংহার, Conclusion
ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রথম থেকেই সতর্ক থেকে নিত্যদিন উপরে উল্লেখিত অভ্যাসগুলো মেনে চললে ওজন বৃদ্ধি পাবে না, নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সকলেরই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরী, কারণ ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে বিভিন্ন রোগও দূরে থাকে। তাই নিজেকে রোগমুক্ত রাখতে উপরিউক্ত উপায়গুলো মেনে চলুন।